একে ছুটির দিন। তার ওপর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির। এমন পরিবেশ জেনেও ক্রিকেট বোর্ড সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, রবিবার দুপুর ১টায় ১৫ সদস্যের বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করা হবে। স্বপ্নের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে কারা খেলবেন, কারা বাদ পড়বেন, জানতে পরশু মিরপুর স্টেডিয়ামে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন মিডিয়াকর্মীরা। অবশ্য এক ঢিলে দুই পাখি মারাও ছিল উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্য দুটোই সফল হয়েছে। তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় প্রিমিয়ার ক্রিকেটের শিরোপা জিতেছে প্রাইম ব্যাংক। দেশবাসী জেনেছেন স্বপ্নের বিশ্বকাপে খেলার দেশসেরা ১৫ ক্রিকেটারের নাম। কিন্তু জানতে পারেননি স্কোয়াড গঠনে কি ধরনের নাটক হয়েছে ক্রিকেট বোর্ডে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দুই ঘণ্টা ধরে নির্বাচক প্যানেল, কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে এবং বোর্ড পরিচালকরা সবাইকে বসিয়ে রেখে কাটাছেঁড়া করেন দল। যা সংবাদ সন্মেলনে স্বীকারও করেছেন। দুই ঘণ্টার নাটকে বিসিবি পরিচালকের হস্তক্ষেপে শফিউল ইসলামকে হটিয়ে সুযোগ করে নেন নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া রুবেল হোসেন। বোর্ড পরিচালকদের প্রতিরোধে পিছুটান নেন কোচ। হাতুরাসিংহের পিছুটানে জুবায়ের হোসেন লিখনের জায়গায় সুযোগ পান অভিষেক ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করা তাইজুল ইসলাম। ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অভিষেক বাংলাদেশ। এবার খেলবে পঞ্চমবার। প্রতি বিশ্বকাপেই নতুন নতুন অধিনায়ক উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালে অধিনায়ক ছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এবার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ২০০৩ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলট, ২০০৭ সালে হাবিবুল বাশার এবং ২০১১ সালে সাকিব আল হাসান। নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর বিসিবি সভাপতির নেতৃত্বে সংবাদ সন্মেলনে প্রবেশ করেন প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ ও তার দুই সঙ্গী মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, হাবিবুর বাশার এবং বোর্ড পরিচালক আকরাম খান, হানিফ ভুঁইয়া, লোকমান হোসেন, জালাল ইউনুস। তাদের উপস্থিতিতেই বোর্ড সভাপতি ঘোষণা করেন স্কোয়াড। তাতে থাকে বেশ কয়েকটি চমক। অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েশ, শামসুর রহমান শুভ ও ইনফর্ম লিটন কুমার দাসকে পেছনে ফেলে তৃতীয় ওপেনার হিসেবে জায়গা করে নেন সৌম্য সরকার। অথচ বিসিবি সভাপতি তাকে দলভুক্তের ব্যাখ্যায় বারবার বলেছেন, 'সৌম্যকে নেওয়া হয়েছে সিমিং অলরাউন্ডার বিবেচনা করে। কিছু কিছু ম্যাচে সৌম্য ২-৩ ওভার বোলিং করতে পারেন।' সৌম্যকে দলভুক্ত করা নিয়ে কোনো প্রশ্নের জন্ম না নিলেও বিসিবি সভাপতি স্পষ্ট করেছেন সংবাদ সন্মেলনে স্কোয়াড গঠনে দুটি বিভাগে প্রকারান্তরে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে, ' আমরা আগেই বলেছিলাম ৮ জনকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে স্পিন এবং পেস বিভাগ নিয়ে নির্বাচক, কোচ ও বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়েছে। স্পিন বিভাগে তাইজুল ও জুবায়ের রহমানের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নিতে হয়েছে। পেস বিভাগেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। রুবেল, আল-আমিন ও শফিউলের মধ্যে থেকে বেছে নিতে হয়েছে। এজন্যই দল ঘোষণায় দেরি হয়েছে।' অথচ বোর্ড সভাপতির কাজ শুধুমাত্র নির্বাচকদের বাছাই করা স্কোয়াডকে চূড়ান্তকরণ। কিন্তু নিজেই হস্তক্ষেপ করেছেন স্কোয়াড গঠনে। নির্বাচকরা আগের রাতে যে দল দিয়েছিলেন, তাতে ছিল শফিউল ইসলাম। রবিবার সকালে নিজ ক্ষমতাবলে আবাহনীর কোটায় শফিউলের নাম কেটে আল-আমিনকে অন্তর্ভুক্ত করেন। অবশ্য বিসিবির এক পরিচালক স্পষ্ট করে বলেন, 'আল-আমিনকে নেওয়া হয়েছে অধিনায়ক মাশরাফির ইচ্ছায়। মাশরাফি বলেছে, আল-আমিন ছাড়া তার বোলিং বিভাগ একেবারেই শক্তিহীন হয়ে পড়বে।' অবশ্য স্ট্যান্ডবাই হিসেবে শফিউল যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ায়। দলে তিন স্পিনার নেওয়া হয়েছে। তিন স্পিনার বাঁ হাতি স্পিনার নেওয়ার একটাই কারণ গ্রুপের দুই আইসিসি সহযোগী আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের টার্গেটে। তিন বাঁ হাতি স্পিনারের মধ্যে নিশ্চিত ছিল সাকিব ও আরাফাত সানি। প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক প্যানেল চেয়েছিলেন তাইজুলকে। অথচ কোচ হাতুরাসিংহে চাপ দিচ্ছিলেন জুবায়েরকে নিতে। কিন্তু হাতুরাসিংহে শেষ পর্যন্ত জিততে পারেননি। বোর্ড পরিচালক ও নির্বাচকদের কথা শুনেন বিসিবি সভাপতি। দলভুক্ত করা হয় তাইজুলকে। একটি মাত্র ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও সেটাই তাকে চিরস্থায়ী করেছে রেকর্ড বুকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করেন তাইজুল। বিশ্বকাপের স্বপ্নের দলগঠনে এই দুই বিভাগেই হস্তক্ষেপ করেন বিসিবি সভাপতি। হস্তক্ষেপ করলেও শেষ পর্যন্ত সেরা দলই গঠন করেছেন প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ গং। কন্ডিশন ও প্রতিপক্ষের কথা চিন্তা করে দল গঠন করা হয়েছে বলেন ফারুক, 'আমরা কোচ, অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলে প্রতিপক্ষ এবং কন্ডিশনের কথা মাথা রেখে দল গড়েছি। আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় ছাড়াও আমরা আরও ভালো করতে চাই বিশ্বকাপে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দল ভালো করবে।'