পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চন্দ্রদীপ ইউনিয়নের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা অর্জনের জন্য প্রতিনিয়ত যে কষ্ট করে চলেছে, সে জন্য তাদের অভিনন্দন জানাই।

প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, তেঁতুলিয়া নদীর ১০টি চর নিয়ে গঠিত চন্দ্রদীপ ইউনিয়নে একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। কিন্তু কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা মহাবিদ্যালয় নেই। এ অবস্থায় চরাঞ্চলের শতাধিক শিক্ষার্থী ইউনিয়নের বাইরে গিয়ে উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়ালেখা করছে। এ জন্য তাদের প্রতিদিন নৌকা ও ট্রলারে করে তেঁতুলিয়া নদী পার হয়ে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয়।

কিন্তু এই যাওয়াটা খুব সহজ হয় না তাদের জন্য। নৌকায় করে এত বড় নদী পার হয়ে ক্লাস ধরতে তাদের প্রায়ই দেরি হয়। ঝড়-তুফান কিংবা জোয়ারের সময় পানি বাড়লে আরও ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। নৌকা উল্টে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনাও ঘটেছে। আবার শীতের সময় কুয়াশার কারণে স্কুল-কলেজে পৌঁছাতে দেরি হয়।

শিক্ষা অর্জনের জন্য এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। অথচ তাদের ভোগান্তি দূর করার যেন কেউ নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কী করছে? তারা কেন এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে না?

আমরা জানি, সরকার দেশের সব মানুষের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছে। তাই শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষা গ্রহণের সুযোগকে সহজ ও অবারিত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বছরের শুরুতেই মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যে বই পৌঁছে দিচ্ছে, প্রযুক্তিগত জ্ঞানার্জনের জন্য সব বিদ্যালয়ে কম্পিউটার স্থাপন করেছে, নানা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে। কিন্তু চরাঞ্চলের শিশুরা বলতে গেলে এসব সুবিধা পাচ্ছে না।

শুধু চন্দ্রদীপ ইউনিয়ন নয়, দেশের বেশির ভাগ চরেই মাধ্যমিক স্কুল নেই। ফলে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকছে চরাঞ্চলের হাজার হাজার শিশুর শিক্ষাজীবন। মাধ্যমিক স্কুলের অভাবে তাদের বেশির ভাগই শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে। বিশেষ করে মেয়েরা। ফলে অল্প বয়সেই তাদের বিয়ে হচ্ছে। ছেলেরা নেমে পড়ছে আয়–রোজগারে। আবার যেসব প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে, সেগুলোতেও মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া হয় না। প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয় শিক্ষকসংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত।

চরাঞ্চলের শিশুদের শিক্ষার এ বেহাল পরিস্থিতি মেনে নেওয়া যায় না। সরকারকে অবশ্যই এদিকে নজর দিতে হবে। আমরা চাই, সরকার চন্দ্রদীপ ইউনিয়নসহ দেশের প্রতিটি চর এলাকায় যথেষ্টসংখ্যক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় স্থাপন করবে, যাতে সেখানকার ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়। এ জন্য শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। সরকারের ‘সবার জন্য শিক্ষা’ স্লোগানটি যেন নিছক স্লোগানে পরিণত না হয়, সেটিও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews