তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক : তন্ময় বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। কোনো কিছুর অভাব নেই তার। টাকা পয়সা, যশ খ্যাতি, বাড়ি গাড়ি কোনো কিছুর অভাব নেই তাদের। মোট কথা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম তন্ময়ের। কিন্তু তন্ময়ের বাবা বছরের বেশির ভাগ সময়ই দেশের বাইরে ব্যবসার কাজে থাকতে হয়। আর মা সামলান দেশের যত ব্যবসা আছে সেগুলো। তিনিও বছরের বেশি ভাগ সময় বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ ও ব্যবসার কাজে চলে যান।
বলে রাখা ভাল তন্ময়ের যখন জন্ম হয় তখন তার বাবা ও মা তাকে বেশি সময় দিতে পারেননি। মোটকথা তন্ময়ের যে বয়সটাতে বাবা মায়ের ভালোবাসা দরকার সে বয়সটাতে তন্ময় সেগুলো পায়নি। তার কারণ হচ্ছে তন্ময়ের বাবা মা ব্যবসার কাজে অনেক ব্যস্ত থাকতো তাই তন্ময়েকে তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে বড় করে তোলেন। যেমন ধরেন দামি খেলনা, ভিডিও গেমস, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসহ আরো অনেক প্রযুক্তি পণ্য। বাবা মা যখন না থাকতো তখন এগুলোই ছিল তন্ময়ের খেলার সাথী। তন্ময়ের বাবা মা ভেবেছিল তন্ময় যখন বড় হবে তখন তার মন মানসিকতা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কখনো তারা ভাবতে পারেনি তাদের ছেলে প্রযুক্তির জাল থেকে কখনো বেরুতে পারবে না। বলে রাখা ভাল তন্ময়ের বাবা মা যখন ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে থাকতো তখন বাসার কাজের লোক তন্ময়ের দেখা শোনা করতো। সেই কাজের লোকের নাম ছিল জলিল কাকা। তন্ময় তাকে সে নামেই ডাকতো।
তন্ময়ের বাবা মা তাকে কত করে বলে যে তাদের সাথে দেশের বাইরে যেতে। কিন্তু তন্ময় যায় না। কারণ সে একা থাকতে পছন্দ করতো। সে সবসময় ঘরের মধ্যেই থাকতো। কোথাও বেড়াতেও যেত না।
তন্ময় এখন ভার্সিটিতে পড়ে। ভার্সিটিতে তার অনেক বন্ধু রয়েছে। তারমধ্যে সজল ও মিঠুন ছিল তার বেষ্ট ফ্রেন্ড। তাদের সাথে তন্ময় প্রায় সবকিছুই শেয়ার করতো। তন্ময় দেখতে ছিল সুদর্শন, ফর্সা, লম্বা। সব মেয়েই তন্ময়ের জন্য পাগল ছিল। আর তন্ময়ের একটা গুণ ছিল যে কোনো মেয়েকে সে সহজেই তার প্রেমের ফাঁদে আটকে ফেলতে পারতো।
কিন্তু তন্ময়ের একটা বাজে অভ্যাস ছিল ফেসবুকে ফেইক আইডি খুলে মেয়েদের সাথে প্রেম করা। তন্ময় সারা রাত তার মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব ও ড্যাস্কটবের সবগুলোতেই ফেইক আইডি খুলে একাধিক মেয়েদের সাথে চ্যাট করতো। সারারাত মেয়েদের সাথে চ্যাট করতে তন্ময়ের খুব ভালো লাগতো। এসব ফেইক আইডিতে চ্যাট করে মেয়েদেরকে পটাতো আর কিছুদিন প্রেম করার পর আবার ব্রেকআপ করে দিতো। পরে সেই ফেইক আইডি বন্ধ করে আবার নতুন ফেইক আইডি খুলে আবার কোনো মেয়েকে পটানো এটাই মূলত তন্ময়ের কাজ ছিল। কোনো মেয়ের সাথে বেশিদিন সম্পর্ক টিকিকে রাখতো না তন্ময়। কেউ তন্ময়কে জ্ঞান দেক এটা তন্ময়ের মোটেও ভাল লাগত না।
একদিন ভার্সিটিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তন্ময় বাসা থেকে বেড় হয়। বলে রাখা ভাল ভার্সিটিতে তন্ময় মূলত যায় বন্ধু বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিতে। আড্ডা দেয়ার পর আবার তন্ময় বাসায় ফিরে আসে। ভার্সিটিতে তার বেষ্ট ফ্রেন্ড মিঠুন বলে, ‘তন্ময় তোর সব নম্বর বন্ধ কেন? আমার মোবাইলে একটা মেয়ে বারবার ফোন দিয়ে তোকে চাচ্ছে। বলছে তোর সব নম্বর ও ফেসবুক আইডি নাকি বন্ধ।’ বলে রাখা ভাল একদিন তন্ময় একদিন মিঠুনের ফোন নম্বর দিয়ে এই মেয়েটির সাথে কথা বলে। তন্ময় বলে, কোন মেয়েটা? মিঠুন বলে, ‘কি যে নাম বললো ও মনে পড়েছে তার নাম হচ্ছে অপা।’ তন্ময় বলে, বাদ দে অপার সাথে আমি সম্পর্ক ব্রেকআপ করে দিয়েছি। আর ভাল লাগে না মেয়েটা আমাকে শুধু জ্ঞান দেয়। সেটা আমার ভাল লাগে না তাই যে আইডিটা দিয়ে তার সাথে চ্যাট করতাম সে আইডিটা ব্লক করে দিয়েছি। মিঠুন বলে, দোস্ত অপা মেয়েটা সত্যিই তোকে খুব ভালোবাসে। আর বেটা তুই পারিসও অনেক। কত মেয়েকে তুই তোর প্রেমের ফাঁদে আটকাস আবার ছেড়েও দিস। তোকে দেখলেই মেয়েরা কিভাবে যে পটে যায় বুঝতে পারি না। এদিকে তন্ময় বলে, আরে বেটা তুই এগুলো বুঝবি না। মেয়েদের সাথে চ্যাট করতে আমার খুব ভাল লাগে। এই কথা বলে তন্ময় তার গাড়িতে ওঠে বাসায় চলে যায়।
তন্ময়ের ফেসবুকের সব মেয়েদের সাথে তার ব্রেকআপ হয়ে গেছে। তাই সে স্থির করলো আজ রাতে সে নতুন ফেইক আইডি খুলে আবার কোনো মেয়েকে পটাবে। তাই সে প্রতিবারের মতো আজকেও ফেইক আইডি খুললো। তার নতুন আইডির নাম দিল নীল। সাথে সাথে তাকে একটি মেয়ে একটা রিকুয়েস্ট পাঠালো। মেয়েটির প্রফাইল নাম ছিল প্রবালদীঘি। তন্ময়ও সেই রিকুয়েস্টটা গ্রহণ করলো আর অমনিই একটা ম্যাসেজ আসলো ‘এতো রাতে ফেসবুকে কি করো?’ তন্ময় ভাবতে লাগলো ফেইক আইডি খোলার সাথে সাথে রিকুয়েস্ট পাঠালো আর সেটা গ্রহণ করার সাথে সাথে ম্যাসেজও করেছে। মনে হয় মেয়েটা আমাকে চিনে। তারপর তন্ময় মেয়েটার প্রফাইলে যে ছবিটা ছিল সেটা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল। আর ভাবতে লাগলো এই মেয়েটা সব মেয়েদের থেকে আলাদা। এমন সুন্দর মেয়ে আমি আগে কোনো দিন দেখেনি। পরে তন্ময়ও ক্রমান্বয়ে সেই মেয়েটির প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলো। চ্যাটিয়য়ে তন্ময়ের ছদ্মনাম নীল হয়ে বলে, তুমিওতো এখনো ঘুমাওনি? তুমি কি নিশাচর পরী? মেয়েটি বলে, না আমি একটি মেয়ে। তুমিকি সমসময়ই এতো রাতে চ্যাটিং করো। তন্ময় বলে, তোমার প্রফাইলে যে ছবিটা দেয়া আছে সেটা কি আসলেই তোমার? এতো সুন্দর ছবি আমি আগে কখনো দেখিনি। মেয়েটি বলে, হে আমার ছবি তবে এই ছবিটি যে ফটোগ্রাফার তুলেছে সে অনেক আলো ও ছায়ার সমন্তরালে তুলেছে তাই এতো সুন্দর হয়েছে। তন্ময় বলে, তোমার নাম কি আসলেই প্রবালদীঘি? মেয়েটি বলে, হে। তন্ময় বলে, তুমি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারো। মেয়েটি বলে, আজকাল বলার অনেকেই আছে কিন্তু শোনার কেউ নাই। তুমি আমার কথা শোনার জন্য তোমোকে ধন্যবাদ। তন্ময় বলে, আমার বন্ধু হবা? মেয়েটি বলে, এতো তারাতারি কেন আগে তোমাকে চিনি ও জানি তারপর। তন্ময় বলে, তোমার ফোন নম্বরটি দাও? মেয়েটি বলে, এখনি নয়, আরো পরে। আজকের মতো বিদায় আবার কালকে কথা হবে। এই কথা বলে মেয়েটি ফেসবুক বন্ধ করে দেয়। আর এদিকে তন্ময় সে মেয়েটির কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে বুঝতেই পারলো না।
অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে তন্ময় সকালেই ওঠে গেল। ঘুম থেকে ওঠে প্রাবালদীঘি অনলাইনে আছে কিনা সেটা দেখার জন্য সেই ফেইক আইডিতে ঢুকলো। দেখলো সেখানে একটা ফোন নম্বর দেয়া আছে। তন্ময় ভাবতে লাগলো এতো তারাতারি নম্বর দিয়ে দিল। নিশ্চই কোনো মতলব আছে। এই কথা ভেবে নম্বরটা ফোনে ডায়াল করে দেখলো রিং হচ্ছে। প্রবালদীঘি রিসিভ করলো আর বললো কে? তন্ময় বললো আমি নীল, গতকাল রাতে আমরা ফেসবুকে চ্যাট করেছিলাম আর তুমি আমার ইনবক্সে তোমার ফোন নম্বরটা দিয়েছো। এই কথা শুনে প্রবালদীঘি বললো ও আচ্ছা তুমিই সেই তন্ময়? তন্ময় বললো, হে, আজকে ফ্রি আসো দেখা করতে পারবা? দীঘি বললো, না আজকে ভার্সিটিতে ক্লাস আছে। পরে কোনো সময় দেখা করবো। তন্ময় বললো, তাহলে আজকে রাতে ফেসবুকে এসো সেখানে চ্যাট করবো। দীঘি বললো, না আজকে ফেসবুকে আসতে পারবো না কারণ আমার ফোনের ব্যাটারীতে সমস্যা আছে বন্ধ হয়ে যায়। এই কথা শুনে তন্ময় বললো, তাহলে আমি তোমাকে একটা ল্যাপটপ কিনে দেই? দীঘি বললো, আমি কেন তোমার দেয়া ল্যাপটপ নিবো। তন্ময় বললো, মেয়েরাতো ছেলেদের থেকে গিফট পেলে ভালোই লাগে। দীঘি বললো আমাকে সবার মতো ভেবো না। আমি সবার মতো না। তন্ময় বললো, হয়েছে মেয়েদেরকে আমি ভালো করেই চিনি। তোমরা মেয়েরা সবাই এক। এই কথা শুনে দীঘি বললো, তোমার মনটা যেমন খারাপ তুমি সবাইকে এমনই খারাপ ভাবো। আসলে তোমার মতো সবাই খারাপ না। এই কথা বলে দীঘি ফোনটা কেটে দিল। এদিকে তন্ময় ভাবতে লাগলো মেয়েটি আমাকে অবহেলা করলো? এই মেয়েটিকে আমি দেখে নিবো। এই কথা বলে তন্ময় ভাবতে লাগলো আর বলতে লাগলো এই মেয়েটির ভালোবাসা ও শরীর দুটোই আমার চাই।
পরে তন্ময় দীঘির কাছে অনেক আকুতি মিনুতি করে দীঘির মনকে আবার জয় করলো। এভাবে বেশ কিছুদিন চলে গেল। এদিকে দীঘি ও তন্ময়ের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তন্ময় ভাবতে লাগলো এখন দীঘিকে কাছে পেতে হবে। তাই দীঘির ইনবক্সে সে তার একটি খোলামেলা ছবি দিল। পরে তন্ময় দেখলো দীঘি কোনো কিছুই বলেনি। তন্ময় ভাবতে লাগলো এটা দীঘিকে কাছে পাওয়ার এটা ভালো লক্ষণ। কিন্তু হঠাৎ একদিন দীঘি তার ফোনসহ ফেসবুক আইডি সব বন্ধ করে দেয়। বলতে গেলে তন্ময়ের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এদিকে তন্ময় দেখে দীঘি তার ফেসবুক প্রফাইল ব্লক করে দিয়েছে।
অনেকদিন পর হঠাৎ তন্ময় দেখলো প্রবালদীঘির আইডি থেকে তন্ময়ের ইনবক্সে একটা ছবি পাঠিয়েছে। ছবিটা একটা গাড়ি এক্সিডেন্টের। তন্ময় ভাবতে লাগলো প্রবালদীঘি এই ছবিটা আমাকে কেন পাঠালো? এই কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার ফোনে একটা ফোন আসলো। দেখলো তার আরেক বেষ্ট ফ্রেন্ড সজল তাকে ফোন দিয়েছে। ফোনে সজল বললো কিরে তুই এখনো ঘুম থেকে ওঠোস নাই? আজকে না আমাদের একটা জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল। তন্ময় বললো, সবাই কি চলে গেছে? সজল বলছে, হে সবাই চলে গেছে কিন্তু আমি আর মিঠুন এখনো তোর জন্য অপেক্ষা করছি। তুই না গতকাল বললি তোর গাড়িতে লিফট দিবি সেই জন্য। তন্ময় বললো, আচ্ছা তোরা থাক আমার আসতে আর ২ মিনিট লাগবে। এই কথা বলে তন্ময় তৈরি হয়ে গাড়ি বেড় করে যেতে লাগলো তার বন্ধু সজল ও মিঠুনের কাছে। তন্ময়ের ফোনে আবার ফোন করলো সজল। বলছে, কিরে তুই এখনো আসোস না কেন আমরা আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো? তন্ময় বললো এই যে আমি চলে আসসি আমি তোদের দেখছি তুই ফোনটা রাখ। এই কথা বলার সাথে সাথে একটা ট্রাক এসে তন্ময়ের গাড়িটাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে মুহূর্তেই চলে যায়। ওদিকে সজল আর মিঠুন এটা দেখে দ্রুত সেখানে গিয়ে দেখে তন্ময়ের শরীর থেকে অঝোরে রক্ত ঝরছে। পরে সজল ও মিঠুন তন্ময়কে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলে, টেনশনের কোনো কারণ নেই শরীরে আঘাত বেশি লাগে নাই ঠিক হয়ে যাবে। পরে তন্ময়ের বন্ধুরা তাকে বাসায় নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে রেখে বলে দোস আমরা এখন আসি পরে এসে তোকে দেখে যাবো। তুই তোর শরীরের যতœ নিস। জবাবে তন্ময় বলে, তোরা আজকে আমার বাসায় থেকে যাস না? তন্ময়ের বন্ধুরা বলে আজকে না অন্যদিন। আজকে আমাদের একটা জরুরি কাজ আছে কালকে আসবো। তুই আজকের দিনটা কোনো ভাবে ম্যানেজ কর। এই কথা বলে সজল ও মিঠুন বাসা থেকে বেড় হয়ে চলে গেল।
এদিকে ফেসবুকে প্রবালদীঘি অনলাইনে আছে কিনা এটা ভেবে তন্ময় তার ফেইক আইডিতে ঢুকলো আর দেখলো প্রবালদীঘির আইডি থেকে তার ইনবক্সে আরও একটা ছবি দেয়া হয়েছে। ছবিটা হচ্ছে একটা সাদা চিঠির খাম। অতকিছু না ভেবে তন্ময় রাতে ঘুমিয়ে যায়। সকালে তন্ময় ঘুম থেকে ওঠে বিছানা থেকে নামতে গেলে তার চোখ পড়ে একটা চিঠির খামের উপর। সে দেখলো একটা সাদা খাম তার ফ্লোরে পড়ে আছে। সে ভাবতে লাগলো কাল প্রবালদীঘির যে খামের ছবিটা পাঠিয়েছিল ঠিক সেই খামটার মতো লাগছে। ওতকিছু না ভেবে তন্ময় খামটা হাতে নিয়ে ভাবলো এটা কার হতে পারে? যেহেতু আমার ঘরে আছে সেহেতু আমারই হবে। পরে খামটা খুললো। খুলে দেখলো সেখানে একটা চিঠি রয়েছে সেখা লেখা ছিল আজকে বাসার রুম থেকে না বেড় হতে। এটা দেখে তন্ময়র কাছে হাস্যকর মনে হল। আর ভাবতে লাগলো এই চিঠিটা কোথা থেকেই আসলো আর এই লেখাটা কেনই বা লেখলো। পরে তন্ময় তার রুম থেকে বেড় হয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে সোফার উপর বসলো। হঠাৎ করে তার ওপরে রুমের ঝারবাতিটা ভেঙে পড়লো। জলিল চাচা কোথা থেকে যেন দৌড়ে আসলো আর বললো কি হয়েছে এখানে। তিনি দেখলেন তন্ময় ফ্লোরে পরে আছে আর তার মাথ থেকে রক্ত বেড় হচ্ছে। এমনিতেই তার শরীরে এখনো ব্যান্ডেজ লাগানো রয়েছে তার ওপর আবার এ ঘটনা। সব মিলিয়ে তন্ময় ভাবতে লাগলো তার সাথে কেন এসব হচ্ছে। পরে ডাক্তার এসে আবার রক্ত পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ করে দেয়। এদিকে তন্ময়ের বন্ধুরা ফোন দিয়ে বলে তারা নাকি আজকে আসতে পারবে না। তন্ময় কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিল। আর ভাবতে লাগলো প্রবালদীঘি আমাকে যে ছবিগুলো পাঠাচ্ছে সেগুলো সত্যি হয়ে যাচ্ছে। সে আমার সাথে কেন এগুলো করছে। আমি তার কি ক্ষতি করেছি। এই বলে দীঘির উপর তন্ময়ের খুব রাগ হল। সবকিছু মিলিয়ে তন্ময়ের সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছিল।
এদিকে রাতে প্রতিদিনের অভ্যাসের মতো আজকেও তন্ময় তার মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ ও ড্যাস্কটব খুললো আর দেখলো তার সবগুলো ফেইক আইডির ফ্রেন্ড লিস্টে প্রবালদীঘির নাম। এটা দেখে তন্ময় অবাক হয়ে গেল। আর ভাবতে লাগলো এটা কি করে সম্ভব। সাথে সাথে তন্ময়ের ইনবক্সে একটা ছবি। ছবিটার মুখটা দেখা যাচ্ছে না। তবে বোঝা যাচ্ছে কেউ একজন ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু তন্ময় ভাবতে লাগলো প্রবালদীঘি কেন আমার ইনবক্সে এসব ধরনের ছবি পাঠাচ্ছে? আর ভাবতে লাগলো সে যেই ছবিগুলো পাঠাচ্ছে সবগুলোই সত্যি হচ্ছে। তাহলে আজকে যে ছবিটা পাঠিয়েছে সেটা কার সাথে ঘটবে? আমার সাথে? এটা ভেবে সে অনেক ভয় পেয়ে গেল। আর কখন যে ঘুমিয়ে গেল বুঝতেই পারলো না। সকালে একটা শব্দে ঘুম ভাঙল তন্ময়ের। দেখলো জলিল চাচা তার রুমের দরজায় নক করছে। তন্ময় দরজা খুললে জলিল চাচা বলে তাদের ড্রাইভারটা নাকি তার রুমে গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। জলিল চাচা বলেছে তোমার বন্ধুদের ফোন দিয়ে বলো আজকে যেন তারা না আসে। জবাবে তন্ময় বললো, আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাদের না আসার জন্য বলছি। এদিকে তন্ময় আগে থেকেই জানতো এসব ঘটনাগুলো ঘটবে। কিন্তু তন্ময়ের কিছুই করার ছিল না। এই কথা ভাবতে ভাবতে দিন গড়িয়ে রাত নেমে আসলো। আর রাতে ফেসবুকে চ্যাট করাই ছিল তন্ময়ের অভ্যাস। কিন্তু আজ তন্ময় ফেসবুকে না ঢুকে ঘুমিয়ে গেল। হঠাৎ মধ্যরাতে তন্ময়ের ঘুম ভাঙল। সে দেখলো তার ল্যাপটপ, মোবাইল, ডেস্কটব ও ট্যাব খোলা আর সেখানে ফেসবুক খোলা। কিন্তু তন্ময়ের ভাল করে মনে আছে সে আজকে ফেসবুকে ঢুকাতো দূরের কথা, কোনো কিছুই অন করে নাই। সব বন্ধ করে রাতে ঘুমিয়েছিল। তাহলে এগুলো অন করে তার ফেসবুকে কে ঢুকলো? সে অনুভব করতে লাগলো তার রুমের মধ্যে কেউ একজন আছে। সে জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলো কে আমার রুমে কে? কিন্তু জবাবে কোনো উত্তর আসলো না। সে দেখলো তার সবগুলো আইডিতে প্রবালদীঘি একটি ছবি পাঠিয়েছে। কিন্তু তন্ময় ভয়ে সে ছবিটা দেখতে পারছিল না। সে ভাবলো আজকে কি ছবি পাঠিয়েছে। যদি সে ছবিটা না দেখে তাহলে বুঝবে কি করে কালকে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। ভয়ে ভয়ে সে ছবিটার দিকে তাকিয়ে দেখে সাদা কাফনে মোড়ানো একটা লাশ। কিন্তু কার লাশ এটা? আমার নয়তো? এই কথা ভেবে সে চিৎকার করে বলে কে? কেন আমার সাথে এরকম করছে। আমার দোষটা কি? তন্ময় একটা লোহার রডের সাহায্যে তার সবগুলো কম্পিউটার, মোবাইল ও ট্যাব ভেঙে তছনছ করে ফেলে। আর বলতে থাকে আমি কি করেছি? হঠাৎ তন্ময়ের ফোনে একটা ফোন আসে। সে দেখলো তারই বন্ধু মিঠুন ফোন করেছে। আর বলছে তুই কোথায় আমি কখন থেকে তোকে ট্রাই করছি কিন্তু তোকে ফোনে পাচ্ছি না। তুই তারাতারি সজলের বাসায় চলে আস। সজল মারা গেছে। এই কথা শুনে তন্ময় বলে আমি আসছি। পরে সজলের বাসায় গেলে মিঠুন তন্ময়কে সজলের লাশটা শেষবারের মতো দেখতে অনুরোধ করে। কিন্তু তন্ময় বলে না আমি তার লাশটা দেখবো না। কারণ
সারাজীবন এভাবে তাকে সে মনে করতে চায় না। এজন্য সজলের লাশটা দেখবে না তন্ময়। তন্ময় মিঠুনকে তার সব কথা বলে। আর এও বলে সে রাতে একটা কাফনে মোড়ানো লাশ দেখে আর সবকিছু ভেঙে ফেলে। জবাবে মিঠুন বলে আমার একটা কাজিন আছে সে মোবাইল কোম্পানিতে চাকরি করে। সে হয়তো তোকে কোনো ভাবে সাহায্য করতে পারে। যে কথা সে কাজ। তন্ময় ও মিঠুন চলে গেল তার কাজিনের অফিসে। সেখান থেকে প্রবালদীঘির ফোন নম্বরের সূত্র ধরে তার বাসার ঠিকানা জোগার করে চলে যায় প্রবালদীঘির বাসায়। বাসায় গিয়ে কলিং বেল চাপতেই দীঘি দরজা খুলে বলে কাকে চাচ্ছেন? জবাবে তন্ময় বলেন, দীঘি আমি নীল, তোমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। দীঘি বললো ও আচ্ছা আপনিই তাহলে নীল। হে আমিই নীল। আমি আজকে তোমার কাছ থেকে জানতে চাই তুমি কেন আমার ইনবক্সে এ ধরনের ছবি পাঠাচ্ছো? দীঘি বললো কই আমি কোনো ছবি দেইনিতো। আমিতো অনেক আগেই এগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। আর কখনো ফেসবুকে ঢুকিনি। তাহলে কে আমাকে ছবি পাঠায়? দীঘি বললো এটা আসলে আমার আইডি না, এটা আমার এক বান্ধবীর আইডি। তন্ময় বললো তোমার সে বান্ধবীর নাম কি? তন্ময় বললো অপা। তন্ময় অবাক হয়ে বললো অপা তোমার বান্ধবী? অপা বললো, কেন, অপাকে আপনি চিনেন? তন্ময় বললো হে সে আমাকে ভালোবাসতো। এখন সে কোথায়? সেতো অনেক আগে মারা গেছে। এটা মূলত তারই আইডি ছিল। মৃত্যুর পরে তার ডায়রিতে একটা আইডি ও পাসওয়ার্ড লেখা ছিল। সেটার সূত্র ধরে আমি কি মনে করে যেন এটাতে ঢুকি আর দেখি সেখানে কোনো কিছুই ছিল না। সবকিছু মুছে ফেলা হয়েছে। আমি সে আইডিতে ঢুকার সাথে সাথে তোমার আইডি থেকে একটা রিকুয়েস্ট পাই। সাথে সাথে তন্ময় বলে উঠলো আশ্বর্য আমিওতো একই সাথে তোমার রিকুয়েস্ট পাই। তখন দীঘি বললো অপা তোমাকে অনেক ভালোবাসতো আর তোমাকে সে অনেক বিশ্বাসও করতো কিন্তু প্রতিদানে তুমি তাকে শুধু ধোকা দিয়েছো। তাই সে অনেকগুলো ঘুমের টেবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে যায় কিন্তু সে ঘুম থেকে অপা আর ওঠে না।
পরে সেখান থেকে বাসায় গিয়ে তন্ময় ভাবতে লাগলো অপার সাথে যে বিশ্বাস ঘাতক করেছি এটা সহ্য করতে না পেরে অপা আত্মহত্যা করেছে। আর তার আত্মা এসব ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। এসবকিছু ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ রাতে ঘুম থেকে ওঠে দেখে কেউ একজন তার রুমের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। সে চিৎকার করে বলে কে কে আমার রুমে? জবাবে অপার মৃত আত্মা বলে উঠলো আমি অপা। এই কথা শুনে তন্ময়ের হার্টঅ্যাটার্ক হওয়ায় উপক্রম। সে বলে কেন তুমি এখানে এসেছো? জবাবে অপা বলে আমি তোমার সাথে কি অপরাধ করেছিলাম? তোমার জন্য আমাকে কেন মরতে হল? জবাবে তন্ময় বললো আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করে দাও। অপার আত্মা বললো, আমাকে তোমার জীবনে আর দরকার না হলে তুমি আমাকে বলতে আমি তোমার জীবন থেকে চলে যেতাম। তুমি কেন আমাকে চাপের মধ্যে রাখলে আর আমাকে মরতে হল। অপা বলে আমার সাথে তুমি শারীরিক সম্পর্ক করেছিলে আর তোমারই বন্ধু সজল সেটার ভিডিও করেছে তাই তাকে আমি মেরে ফেলেছি আর তোমরা যে গাড়ির ড্রাইভারকে ম্যানেজ করেছে সে ড্রাইভারকেও মেরে ফেলেছি। এখন তোমার পালা। অপা তন্ময়ের দেয়ালে একটা ছবি একেছে আর সে ছবিটা ছিল তন্ময়ের লাশ। সেখানে একটা লেখা ছিল সেটা হচ্ছে ‘বিশ্বাস ঘাতকের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যু।’ এই লেখা আর ছবিটা তন্ময়ের আসল আইডি থেকে আপনা আপনি ভাবেই তার যত ফ্রেন্ড আছে সবার কাছে পোস্ট হয়ে যায়।
সকালে তন্ময়ের বাসায় অনেক মানুষের ভিড় জমে যায়। মিঠুন সেখানে গিয়ে দেখে বিছানায় তন্ময়ের মরদেহ পড়ে আছে। আর দেয়ালে তন্ময়ের ছবি ও সেই লেখাটা যে লেখাটা তন্ময় তার আসল আইডি থেকে পোস্ট করেছিলো। কিন্তু মিঠুন জানতো এটা অপার মৃত আত্মার কাজ। কারণ তন্ময় মিঠুনকে বলেছিলো সে তার সব কম্পিউটার, মোবাইল ও ট্যাব ভেঙে ফেলেছে। তাহলে কিভাবে সে এগুলো পোস্ট করলো।
উল্লেখ্য, তন্ময় একদিন একটা ফেসবুকে ফেইক আইডি খুলে। পরে অপা নামের একটা মেয়েকে রিকুয়েস্ট পাঠায়। জবাবে অপা তন্ময়ের দেয়া রিকুয়েস্টটা গ্রহণ করে। তারপর থেকে শুরু হয় দুজনের মধ্যে চ্যাটিং। পরে চ্যাটিং থেকে দেখা আর দেখা থেকে প্রেম। খুব অল্প দিনেই অপা তন্ময়কে অনেক বিশ্বাস করে ফেলে। আর তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে। এদিকে অপার অজান্তে তাদের শারীরিক সম্পর্কের দৃশ্য তন্ময়ের কথায় ভিডিও করে তারই বন্ধু সজল। আর তন্ময় তার বাসার ড্রাইভারকে ম্যানেজ করে এসব কাজ করেন। একদিন অপার সাথে তন্ময় তার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায়। কারণ অপাকে তন্ময়ের আর ভালো লাগে না। যদি মেয়েদের সাথে এরকমই করাটা তন্ময়ের অভ্যাস ছিল। কিন্তু অপাতো তার সবকিছু তন্ময়কে দিয়েই ভালোবেসেছে। তন্ময় অপাকে বলে সে যেন তাকে আর ফোন না দেয়। কিন্তু অপা তন্ময়ের কোনো কথা না শুনে সে বারবার তার ফোন কল দিতে থাকে। এদিকে তন্ময় অপার সাথে যে যৌন সম্পর্কের ভিডিওটা সজলকে দিয়ে করেয়েছিলো সেটা অপার ফেসবুক আইডিতে দিয়ে দেয় আর বলে আমাকে আর ফোন দিলে সে এটা অপার সব বান্ধবীদের আইডিতে দিয়ে দিবে। এদিকে অপা এই ভিডিওটা দেখার পর একদম স্তব্ধ হয়ে যায়। সে ভাবে সে এতোদিন কাকে বিশ্বাস করে তার সবকিছু দিয়ে দিয়েছে। অপা এটা সহ্য করতে না পেরে সে তার ফেসবুকে থাকা সবকিছু মুছে ফেলে অনেকগুলো ঘুমের টেবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে যায়। আর কখনো সে ঘুম থেকে উঠে না।
এভাবে আমাদের সমাজে অনেক মানুষ ফেসবুককে ভুল কাজে ব্যবহার করে নানা ধরনের অবৈধ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। যার মূল্য দিতে হচ্ছে মৃত্যু দিয়ে। সূত্র : এবিসি রেডিওর কুয়াশা থেকে