ছয় মাসের মধ্যে ‘ব্লু হোয়েল গেম’ বন্ধে হাইকোর্ট নির্দেশনা দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি কিভাবে এটি বাস্তবায়ন করবে।  সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই গেম প্রকাশ্যে পাওয়া যায় না। কেউ যদি এর লিংক ই-মেইল বা ইনবক্সে পাঠায় তখনই কেবল তা চিহ্নিত করা যায়। এটি ডার্ক ওয়েবের একটি কনটেন্ট। ফলে এর উৎস চিহ্নিত করা মোটেও সহজ কাজ হবে না।

তবুও নিজেদের লোকবল নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিটিআরসি। সংস্থাটি বলছে, সবার সহযোগিতা পেলে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী গেম ব্লু হোয়েলের বিস্তার বন্ধ করা সম্ভব হবে। এই গেমের সব লিংক ও অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে ডার্ক ওয়েব থেকেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ব্লু হোয়েল। 

বলা হচ্ছে, অ্যাপটি স্মার্টফোনে একবার ইনস্টল হয়ে গেলে তা আর রিমুভ করা যায় না। ফলে নোটিফিকেশন আসতেই থাকে। যা এক পর্যায়ে বিরক্তির চূড়ান্ত পর্বে নিয়ে গেমটি খেলতে বাধ্য করে। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন লিংক বা সাইটে ক্লিক করলেই বিপদ। গুগলের প্লে স্টোর বা অ্যাপলের অ্যাপস্টোরে গেমটি সাধারণভাবে পাওয়া যায় না। ডার্ক ওয়েবে এটি পাওয়া যেতে পারে।

উইকিপিডিয়া বলছে, ডার্ক ওয়েব হলো ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব উপাদান যা ডার্ক নেটে বিদ্যমান। এটি আচ্ছাদিত একটি নেটওয়ার্ক। এতে প্রবেশ করতে নির্দিষ্ট সফটওয়্যার, কনফিগারেশন বা অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। ডার্ক ওয়েব হলো ডিপ ওয়েবের একটি অংশ মাত্র। সেই অংশ সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন ইনডেক্স করতে পারে না। যদিও মাঝে মধ্যে ডিপ ওয়েব শব্দটি ভুল করে ডার্ক ওয়েবকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।

ডার্ক ওয়েব গঠনকারী ডার্কনেটে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফ্রেন্ড-টু-ফ্রেন্ড, পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্কের পাশাপাশি থাকে ফ্রিনেট, আইটুপি ও টরের মতো বড় বড় নেটওয়ার্ক। এর মধ্যে টর নেটওয়ার্ক অনিয়ন ল্যান্ড হিসেবেও পরিচিত। এসব নেটওয়ার্ক পরিচালিত হয় পাবলিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মাধ্যমে। ডার্ক ওয়েব ব্যবহারকারীরা তাদের এনক্রিপশনবিহীন প্রকৃতির কারণে সাধারণ ওয়েবে ক্লিয়ারনেট হিসেবে পরিচিত।

ডার্কনেট ব্যবহারকারীর পরিচয় ও অবস্থান স্তরবিশিষ্ট এনক্রিপশন সিস্টেমের কারণে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। ডার্কনেট এনক্রিপশন প্রযুক্তির যে কোনও তথ্য বড়সংখ্যক মাধ্যমিক সার্ভারের মধ্য দিয়ে যায়, যা ব্যবহারকারীর পরিচয় গোপনের সুরক্ষা প্রদান করে। প্রেরিত তথ্য শুধু একটি পরবর্তী নোডের মাধ্যমে ডিক্রিপ্ট করা যায়। উচ্চস্তরের এনক্রিপশনের কারণে ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীর আইপি ও ভূ-অবস্থান ট্র্যাক করতে সক্ষম হয় না। ব্যবহারকারীকেও হোস্টের ক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হয়। এভাবেই ডার্কনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে কথা বলা, ব্লগিং ও ফাইল আদান-প্রদানসহ যোগাযোগটা অত্যন্ত নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গেমটির ব্যাপারে সবাইকে প্রথমে সচেতন হতে হবে। সবসময় নিজের, পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের অন্যদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে এর বিস্তার রোধ করা যাবে না।’

প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য, ‘আমরা ব্লু হোয়েল গেমটিকে শতভাগ ফলো করছি। অনেক ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্নভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। ফেসবুক মেসেঞ্জারে এসএমএস দিয়ে গেমটি খেলতে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে, তবে এর সবকিছুই সঠিক নয়। আমরা সবসময় দেখছি, লিংকগুলো চিহ্নিত ও রিমুভ করা হচ্ছে। আমরা গোয়েন্দা সংস্থা ও বিটিআরসিকে সেগুলো ব্লক করতে বলেছি। পাশাপাশি আমাদের আইসিটি বিভাগের যে বিডি-সার্ট আছে তারা ও গোয়েন্দা সংস্থা গেমটির প্রতি নজরদারি করছে।’

গেমটির যদি কোনও আইপি ঠিকানা, ইউআরএল (ইউনিভার্সেল রিসোর্স লোকেটর) বা লিংক পাওয়া যায় তাহলে গেমটি বন্ধ বা ব্লক করতে বিটিআরসি সক্ষম বলে জানান এই সংস্থার সচিব সরওয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘কমিশনের এসব বন্ধ করার মতো কমবেশি সক্ষমতা রয়েছে। কেউ যদি এসব তথ্য কমিশনে (২৮৭২ নম্বরে ফোন করে বা লিংক পাঠিয়ে) জানান তাহলেও আমরা তা বন্ধ করতে পারবো। গেমটি কোথায় বা কোন বাসায় খেলা হচ্ছে তা চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিটিআরসিকে জানালে লিংক বন্ধ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।’ 

সংশ্লিষ্ট খাতের সবাই বলছেন— আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ও আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) লেভেলে এটা কিছুটা বন্ধ করা সম্ভব। যদি প্রকৃত অর্থেই গেমটি থেকে থাকে তাহলে আইআইজিগুলো কনটেন্ট ধরে ধরে বন্ধ করলে গেমটির প্রকোপ কমতে পারে। অনেকের ধারণা, এটি একটি অফলাইন গেম। অনলাইন গেম হলেও তা চিহ্নিত করার একটা সুযোগ থাকতো।

ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি ও আইআইজি প্রতিষ্ঠান বিডি হাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল হাকিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,“কনটেন্ট ধরে ধরে গেমটি বন্ধ বা ব্লক করা হচ্ছে। ব্লু, হোয়েল ইত্যাদি লিখে ব্লক করার ফলে ‘ব্লু হোয়েল’ নামের কিছু থাকলে বা হোয়েল নামের কিছু থাকলেও তা আটকে যাবে।”

আইএসপিএবি’র সভাপতি বলেছেন, ‘বিটিআরসি থেকে অনেক আগেই আমরা নির্দেশনা পেয়েছি। নির্দেশনা মোতাবেক গেমটি বন্ধ করা হচ্ছে। সত্যি বলতে, নির্দিষ্টভাবে গেমটি বন্ধ করা সম্ভব নয়। আইআইজি লেভেলে পুরোপুরিভাবে বন্ধ করা সম্ভব হলে আইএসপির আর কিছু করার প্রয়োজন হয় না।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews