২০১৬ সালে মাত্র ৪টি গরু নিয়ে এশিয়ান এগ্রো প্রতিষ্ঠা করেন চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান ওয়াসিফ আহমেদ সালাম। শখের বশে শুরু করা সেই খামার বর্তমানে প্রতি কোরবানির ঈদে শতাধিক কোরবানিযোগ্য পশুর যোগান দিচ্ছে। একইভাবে কয়েকবছর আগে শখের বসে খামার শুরু করেছিলেন শাহ আমানত এগ্রোর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হোসেন জ্যাকি। তার খামারেও কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা এখন শতাধিক।

ব্যবসায়ী পরিবারে বেড়ে ওঠা এই দুজনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত খামারের মতো চট্টগ্রামে অন্তত ১৫০টির বেশি খামার গড়ে উঠেছে। যেগুলোর কোনো কোনোটিতে ১-৩ শতাধিক গরু লালনপালন হচ্ছে। শখের বসে শুরু করা এসব খামার এখন বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। প্রতিবছর কোরবানি এলে এসব খামার থেকে কয়েক হাজার পশুর বেচাকেনা হয়। এসব পশু নিয়ে গত কয়েক বছর জমকালো ক্যাটেল এক্সপো আয়োজিত হয়েছে। তবে এবার তা হয়নি। খামারে যত্নে লালন করা এসব পশুর চাহিদা বেশি চট্টগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে।

জানতে চাইলে এশিয়ান এগ্রোর স্বত্বাধিকারী ওয়াসিম আহমেদ সালাম বলেন, ‘শখের বসেই শুরু করেছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। বিনিয়োগ বাড়িয়েছি। এবারের কোরবানিতে ২’শ গরু প্রস্তুত করেছি। তবে এবার দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ক্যাটল এক্সপো অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। আগামী বছর থেকে আবার আয়োজন করা হবে।’

জানা গেছে, উচ্চবিত্ত ও ব্যবসায়ী পরিবারের অনেক শিক্ষিত তরুণ বিগত কয়েক বছরে শখের বসে এই ধরনের খামার গড়ে তুলেছেন। এসব তরুণের হাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় দিন দিন এসব খামারে পশু পালনের হার বাড়ছে। বর্তমানে মোহরায় ওয়েল এগ্রো খামার, খাগড়াছড়িতে শেঠ এগ্রো, বায়োজিদ লিংক রোডে নাহার এগ্রো, নাছিরাবাদে ইউনি এগ্রো, কর্ণফুলী উপজেলায় ওজি অ্যাগ্রো, কালুরঘাটের সারাহ এগ্রো এবং আবুল খায়ের, টিকে গ্রুপসহ অসংখ্যা শিল্প ও ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্যরা খামার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এসব খামারের বেশিরভাগই পরিচালনা করছেন এসব ব্যবসায়ী পরিবারের উত্তরসূরীরা।

জানতে চাইলে শেঠ এগ্রো ফার্মের ম্যানাজার মোহাম্মদ মহসিন জানান, শেঠ গ্রুপের স্বত্বাধিকারী সোলায়মান শেঠও একসময় শখের বসে খামার শুরু করেছিলেন। বর্তমানে কোরবানির সময়কে টার্গেট করে পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে এই খামারে পশুপালন করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব খামারে দেশীয় জাতের গরু, মহিষ, ছাগল ছাড়াও বিদেশি বিভিন্ন উন্নত জাতের পশু লালন পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল, ক্রস ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন প্রজাতির গরু। এছাড়াও অনেক খামারে অ্যালভিনো বা হোয়াইট বাফেলোসহ বিভিন্ন প্রজাতির মহিষ, ছাগল ও দুম্বাও লালনপালন করা হচ্ছে। ভিন্ন ও উন্নত জাতের এসব পশুর দামও বাড়তি। এসব খামারে ২ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা দামের গরুও আছে বলে জানা গেছে। এসব পশু বিক্রির জন্য অনেকে তৈরি করেছেন নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র।

উদ্যোক্তারা বলছেন, অনেকে শিক্ষাজীবন শেষে, আবার অনেকে পড়াশোনায় থাকা অবস্থায় পরিবার থেকে পুঁজি নিয়ে এই ধরনের খামার শুরু করেছেন। পরবর্তীতে লাভজনক হওয়ায় ধীরে ধীরে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। উচ্চবিত্ত এসব তরুণরা ছাড়াও শহর গ্রামে অনেক শিক্ষিত তরুণ চাকরির পেছনে না ছুটে এখন পশুর খামার তৈরির দিকে ঝুঁকছেন। এসব পশু লালন পালন থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত তথ্য প্রযুক্তিরও ব্যবহার করছেন তারা। কোরবানির সময় ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপে গরুর ছবি, ভিডিওসহ প্রয়োজনীয় তথ্য ক্রেতাকে সরবরাহ করছেন। ক্রেতার পছন্দ হলে দাম ঠিক করে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছেন। ফলে হাটে গিয়ে পশু কেনার ঝামেলাও কমে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় বলছে, চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা ও নগরে এবছর কোরবানি পশুর চাহিদা প্রায় ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি পশু। এর মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলেই মজুদ আছে ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি পশু। এসব পশু লালন পালন করা হয়েছে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার ৩৫ হাজার ছোটবড় খামারে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর জানান, সরকারি নানা প্রণোদনার কারণে গ্রামীণ পশু পালনকারীদের সাথে এখন উচ্চশিক্ষিত অনেক তরুণ খামার ও কৃষিতে যুক্ত হচ্ছেন। তারা আধুনিক প্রযুক্তিরও ব্যবহার করছেন। এভাবে চলতে থাকলে ধীরে ধীরে এই শিল্প আরও ব্যাপকতা পাবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews