কালোটাকার প্রবাহ বন্ধ করতে পোলট্রি খাতের কর কাঠামোর পরিবর্তন আনা হলে এ খাত বড় ধরনের হুমকিতে পড়বে। যারা করছাড় সুবিধা নিয়ে এ খাত থেকে অর্থ পাচার এবং ব্যাংক ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। কিন্তু গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর অপকর্মের কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতের কর কাঠামোর নীতি পরিবর্তনের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতে ভালো উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং নতুন বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন। পাশাপাশি মুরগির মাংস ও ডিমের মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হবে না।

রোববার ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বাংলাদেশ), ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব), বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) যৌথভাবে প্রস্তাবিত বাজেট (২০২৫-২৬) প্রতিক্রিয়ায় এমন আশঙ্কার কথা জানায়। রোববার রাজধানীর নিজস্ব কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানায় সংগঠনগুলো।

ওয়াপসা-বাংলাদেশ সভাপতি মসিউর রহমান জানান, এ শিল্পকে আধুনিকায়ন করতে যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়। এক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ডিউটি দিতে হচ্ছে। এছাড়া করপোরেট কর ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৭.৫ শতাংশে যাওয়া একটি বিরাট ধাক্কা হবে। এ ধাক্কা আগামী দুবছর পরে বোঝা যাবে। বিশেষ করে পোলট্রি ফিডের দাম গত ৬ মাসে তিন থেকে চার টাকা কেজিতে কমানো হয়েছে। করপোরেট কর বাড়ানোর ফলে ফিডের মূল্য আগের স্থানে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আয়কর, যন্ত্রাংশ আমদানিসহ অন্যান্য বিষয়ে সুবিধা না থাকলে এ খাতে নতুন বিনিয়োগকারী আসবে না। অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আগে যা ছিল সেটি দিতে কষ্ট হচ্ছে। এখন নতুন করে এআইটি বাড়ানো হয়েছে যা অসম্ভব ব্যাপার।

জানা গেছে, পোলট্রি খাতে টার্নওভার ট্যাক্স ০.৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। এটি ০.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা দরকার বলে মনে করছে পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তারা। যদিও ২০১৫ সালের আগে পোলট্রি খাত কর অব্যাহতি সুবিধার আওতায় ছিল। তবে ওই বছর থেকে সে সুবিধা বাতিল হয়।

পোলট্রি ফিডের অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল ভুট্টায় ২ শতাংশ, ‘সয়াবিন মিলে’ ৫ শতাংশ ও ডিডিজিএস-এ ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করা হয়েছে। এই হার ১ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে সংগঠনগুলো। এছাড়া খুচরা যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ আমদানিতে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়, এ হার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা দরকার।

ফিআব সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, পোলট্রি খাত থেকে কয়েকটি কোম্পানি করছাড় সুবিধা নিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। এটি নির্দিষ্ট কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটছে। তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিয়ে পুরো একটি খাতের ওপর বাড়তি কর আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ভালো উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

তিনি আরও বলেন, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে এ খাতে খরচ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত নিয়ে সরকার চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে। পোলট্রি খাত এ তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু পোলট্রি খাতকে লক্ষ্য করে কর বাড়ানো হলে এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়বে মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তায়।

বিএবি সহসভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান বলেন, যারা পুকুর খনন করে পোলট্রিশিল্পে প্রকল্প দেখিয়ে ঋণের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। কালোটাকা সাদা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে সঠিক পদক্ষেপ হবে। কিন্তু টার্নওভার কর বাড়ানো এ খাতের জন্য বড় ক্ষতি হবে। এখন তিনশ ফিড মিল আছে সবাই তো মুনাফা করছে না। ২ শতাংশ মুনাফা হলে আমরা খুশি। কিন্তু সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে অনেক খামার বন্ধ হয়েছে। আগামীতেও হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন বিদ্যমান ১৫ শতাংশ করপোরেট কর থাকলেও সেটি চূড়ান্ত হিসাবে ৪৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকছে।

প্রতিক্রিয়ায় কালোটাকা সাদা করার প্রসঙ্গে বলা হয়, অনেক কোম্পানি আছে-তাদের পোলট্রিশিল্পে খাদ্য ও মুরগি বিক্রি এবং খাদ্য আমদানির তথ্যে নানা ধরনের গরমিল আছে। এসব গরমিল তথ্যই প্রমাণ করবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি কেন পোলট্রি খাতে আসছে। প্রকৃতপক্ষে পোলট্রি খাতের খাদ্য উৎপাদনের জন্য ওই কোম্পানি আসেনি। আসছে মূলত খাদ্য উৎপাদনের কাঁচামালের ব্যবসার জন্য। যেহেতু এখানে করছাড় আছে। এসব কোম্পানি পাঁচ হাজার টন পোলট্রি ফিড বিক্রি করে বিপরীতে ২৫ হাজার মেট্রিক টন ফিডের কাঁচামাল বিক্রি করছে। এখানে কিছুটা অনৈতিক বিষয়, এটি বন্ধ হওয়া দরকার। দ্বিতীয়ত, স্বল্প সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইডিএফ থেকে ঋণ নিয়ে এখানে প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছে অনেকে। এর তালিকা করা দরকার। এছাড়া অনেক করপোরেট হাউজ ১০০ কোটি টাকা বিক্রি করে মুনাফা দেখিয়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। এর মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করে নিয়েছে। ওইসব কোম্পানির আর্থিক বিবরণী দেখলে বোঝা যাবে। যারা এসব করেছে তাদের শনাক্ত করা দরকার। কিন্তু এর জন্য একটি নীতি পরিবর্তন করে ভালোদের বিপদে ফেলা ঠিক হচ্ছে না।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় আরও অংশগ্রহণ করেছেন বিএবির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান, বিপিআইসিসি সাধারণ সম্পাদক এটিএম মোস্তফা কামাল, বিপিআইসিসি যোগাযোগ ও মিডিয়া উপদেষ্টা মো. সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews