ইসরায়েল নিজেই তার সিদ্ধান্ত নেবে - ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বললেন নেতানিয়াহু

ছবির উৎস, OFFICE OF THE PRIME MINISTER OF ISRAEL

ছবির ক্যাপশান,

জেরুসালেমে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী

  • Author,

    জেমস ল্যান্ডেল, জেরুসালেম এবং সিয়েন সেড্ডন

  • Role,

    বিবিসি নিউজ

  • ৫ মিনিট আগে

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যামেরনকে বলেছেন যে ইরানের হামলার জবাব কীভাবে দেয়া হবে ইসরায়েল 'নিজেই তার সেই সিদ্ধান্ত' নেবে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হওয়া বৈঠকে তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের সরকার 'আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে'।

ইসরায়েলে ইরানের নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর থেকেই মি. নেতানিয়াহু বারবার পাল্টা জবাব দেয়ার কথা বলে আসছেন।

ওই অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা কমিয়ে আনতে সাহায্য করার উদ্দেশ্য নিয়ে ইসরায়েল সফরে যাওয়া লর্ড ক্যামেরন মি. নেতানিয়াহুকে বলেছেন যে ইসরায়েলের জবাব হতে হবে ‘স্মার্ট’ এবং সীমিত।

মি. নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠকের পর জেরুসালেমে সাংবাদিকদের মি. ক্যামেরন বলেন, ইরানের দু:খজনক হামলার পর তিনি ‘সংহতি প্রকাশের জন্য’ ইসরায়েলে এসেছেন।

তিনি বলছিলেন, “আমরা আশা করি ইসরায়েল যেটাই করুক তা হবে সীমিত এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী, এবং যতটা সম্ভব স্মার্ট।”

“কেউই উত্তেজনা দেখতে চায় না এবং এটাই ইসরায়েলে সবার সাথে আলোচনায় আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি।”

বৈঠকের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি এটা পরিষ্কার করতে চাই - আমরা নিজেরাই আমাদের সিদ্ধান্ত নেবো এবং ইসরায়েল রাষ্ট্র নিজের সুরক্ষায় যা দরকার তার সবই করবে।”

জেরুসালেমে এসেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীও (মাঝে)

ছবির উৎস, Reuters

ছবির ক্যাপশান,

জেরুসালেমে এসেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীও (মাঝে)

মি. নেতানিয়াহুর মন্তব্য এখন পশ্চিমাদের মধ্যে এ বিশ্বাসই আরও জোরদার করবে যে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে এবং সংযমের জন্য পশ্চিমাদের ঘন ঘন পরামর্শ সম্পর্কেও তাদের একটি বার্তা দিচ্ছে ইসরায়েল।

ওই অঞ্চলে যুদ্ধের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ নিয়ে যথেষ্টই ওয়াকিবহাল ইসরায়েল।

অন্যদিকে, পশ্চিমা নেতারাও এটা ভেবে স্বস্তি পেতে পারেন যে ইরানের হামলার পর পাওয়া কূটনৈতিক সমর্থনকে ইসরায়েলি নেতারা কাজে লাগাতে চান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার অঙ্গীকার করেছে।

আর একটি প্রতিশোধমূলক জবাব দিয়ে ওই অঞ্চলে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরুর মাধ্যমে সেই সমর্থন হয়ত মি. নেতানিয়াহু হারাতে চাইবেন না - তেমন সম্ভাবনাও রয়েছে।

লর্ড ক্যামেরন পশ্চিমা কয়েকজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একজন যারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরুর আশংকা ঠেকানোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইসরায়েল সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের সরকার বারবারই ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার  কথা বলে আসছে

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্নালেনা বেয়ারবকও আলোচনার জন্য বুধবার জেরুসালেমে এসেছেন।

মি. নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠকের আগে লর্ড ক্যামেরন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট ইসাক হারজগ এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন।

এর আগে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দখলিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে গিয়ে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফার সাথে সাক্ষাত করেন।

এদিকে, জি-সেভেন মন্ত্রীরা ইটালিতে সমবেত হচ্ছেন যেখানে লর্ড ক্যামেরন ইরানের বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য চেষ্টা চালাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে, তিনি মধ্যপ্রাচ্যে 'অতিমাত্রায় ক্ষতিকর কার্যকলাপের পেছনে' থাকার জন্য ইরানকে দায়ী করেছিলেন এবং ওই অঞ্চলে ইরানে প্রভাবে রাশ টেনে ধরার জন্য অন্য দেশগুলোর প্রতি দরকারি পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরো নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে।

আর ইসরায়েল চাইছে তার মিত্র রাষ্ট্রসমূহ ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করুক।

শনিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলে ৩০০টিরও বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান

ছবির উৎস, ATEF SAFADI / EPA

ছবির ক্যাপশান,

শনিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলে ৩০০টিরও বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান

গত শনিবার ইরান ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে তিনশোর বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর থেকে ইসরায়েলের সরকার ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার কথা বলে আসছে।

তবে ইসরায়েল জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং জর্ডানের সহায়তায় ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় সব ভূপাতিত করেছে।

ইরান গত পহেলা এপ্রিল সিরিয়ায় তাদের কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তার ওপর হামলার জবাবে ইসরায়েলে এ হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েল ওই হামলার বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি তবে হামলাটি তারাই চালিয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যর প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক মি. নেতানিয়াহুর সাথে কথা বলেন এবং সতর্ক করেন যে অতিমাত্রায় উত্তেজনা ওই অঞ্চলের অস্থিতিশীলতাকেই কেবল গভীর করবে।

“এখন শান্তির দিকে যাওয়ার সময় এসেছে,” তিনি বলেন।

লর্ড ক্যামেরন তার সফরে মি. সুনাকের আহ্বানই পুনর্ব্যক্ত করেন এবং গাজায় আরও মানবিক সহায়তার সুযোগ দিতে ইসরায়েলের নেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করবেন। তবে তিনি সুনির্দিষ্ট কূটনৈতিক পথে ধরেই এগুবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে মি. ক্যামেরন নিজের মাটিতে নজিরবিহীন হামলার শিকার হওয়া মিত্র দেশ ইসরায়েলকে বিশেষ কোন চাপ দেবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে।

সেজন্যই তিনি হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের বিষয়ে এবং ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলবেন।

এখন জেরুসালেমে তার উপস্থিতি ইসরায়েলের প্রতি দেশটির সমর্থন ও সংহতির প্রকাশ।

তবে একই সাথে এটা আঞ্চলিক উত্তেজনার বিষয়ে ইসরায়েলি নেতাদের সতর্ক করারও একটি বার্তা এটি - যে কোন ধরণের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিশ্ব ও তাদের নিজেদের স্বার্থের বিরুদ্ধেই যেতে পারে।

তেহরানে একটি  বিলবোর্ড- ‘তেল আবিব আমাদের যুদ্ধক্ষেত্র, তেহরান নয়”।

ছবির উৎস, SUPPLIED

ছবির ক্যাপশান,

তেহরানে একটি বিলবোর্ড- ‘তেল আবিব আমাদের যুদ্ধক্ষেত্র, তেহরান নয়”।

'তেল আবিব হবে যুদ্ধক্ষেত্র'

এদিকে বিবিসি পার্সিয়ান সার্ভিসের জিয়ার গলের এক রিপোর্ট অনুযায়ী ইসরায়েলে হামলার পর উত্তেজনা বিরাজ করছে তেহরানেও।

উদ্বেগের কারণ হলো দেশটির সংকটাপন্ন অর্থনীতির মধ্যেই একটি যুদ্ধ ও তার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা নিয়ে। দেশটির অনেকেই ইসরায়েলে ইসলামিক রেভলিউশন গার্ডের ওই হামলার বিরোধিতা করেছেন।

বিবিসি পার্সিয়ানে ইরানের ভেতরে ও বাইরে থেকে কাজ করেন এমন অধিকারকর্মীরা একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে ইসলামিক রেভলিউশন গার্ডের সমালোচনা করে আর কোন যুদ্ধের সম্ভাবনাকে নাকচ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বহু ইরানি মনে করেন প্রক্সি যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে ইরান-ইসরায়েল সরাসরি সংঘাতের এই পরিস্থিতি দেশটির সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করছে না।

এর মধ্যে তেহরানের রাস্তায় পুলিশী উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে এবং অনেকে মনে করেন এটি করা হয়েছে মূলত কোন সম্ভাব্য প্রতিবাদ মোকাবেলার জন্য।

দেশটির নীতি নির্ধারকদের অনেকের মধ্যে এই ভয় আছে যে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ২০২২ সালের মতো আরেকটি গণবিক্ষোভের সূচনা হতে পারে।

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইরানের বিভিন্ন শহরের দেয়ালে নানা ধরণের গ্রাফিতি দেখা যাচ্ছে- যার মধ্যে রয়েছে - “ইসরায়েল, সর্বোচ্চ নেতার (আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি) বাড়িতে আঘাত করো।”

আরেকটি গ্রাফিতি ছিলো এমন - “ইসরায়েল তাদের আঘাত করো, পাল্টা জবাব দেয়ার সাহস তাদের নেই।”

তবে, সরকারেরও আবার নিজস্ব বার্তা সম্বলিত বিলবোর্ড আছে বিভিন্ন জায়গায়, যার একটিতে লেখা হয়েছে - "তেল আবিব আমাদের যুদ্ধক্ষেত্র, তেহরান নয়।"



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews