এক যুগ আগেও সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। এখন পাওয়া যায় সামান্যই। জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, হাওরের অনেক মাছ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে বিলুপ্তির পথে রয়েছে ১২ প্রজাতির মাছ। সূত্রমতে, শুকনো মৌসুমে জলমহাল পানিশূন্য করে রাসায়নিক দিয়ে মাছ ধরা, জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার, জলমহাল ইজারা নীতিমালা না মেনে মাছ ধরা, প্রকৃত জেলেদের হাতে জলমহাল না থাকা, অভয়াশ্রমের অভাব, হাওরের বনজসম্পদ ধ্বংস, প্রজনন মৌসুমে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরা ইত্যাদি কারণে হাওরের মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে।

জেলে, মাছ ব্যবসায়ী ও জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের মিঠা পানির মাছের অন্যতম পীঠস্থান সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা। এ জেলাজুড়ে ছোট-বড় দুই শতাধিক হাওর রয়েছে, যা মিঠাপানির মাছ উৎপাদনের জন্য পরিচিত। সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে একসময় দেশের অন্যান্য জেলায়ও যেতো; রপ্তানি হতো বিদেশেও। কিন্তু এখন আর মাছের সেই সুদিন নেই। এখন স্থানীয় হাট-বাজারেই মাছের আকাল দেখা যায়।

সূত্রগুলো আরও জানায়, বর্তমানে মহাশোল, শিলন, নানিদ, ঘোড়ামাছ, রিটা, বামাস, দেশীয় পাঙ্গাস, চিতল, দেশী পুঠা, রানী মাছ, ছেলামাছ, মধু পাবদা, বাইমসহ ১২ প্রজাতির হাওরের মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে রয়েছে। সূত্রগুলোর দাবি, হাওরের জমি ও জলমহালে কীটনাশকের অবাধ ব্যবহার, হাওরের বনজসম্পদ ধ্বংস, অভয়াশ্রমের অভাব, অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরাসহ নানা কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

চিংড়ি

জেলা মৎস্য অফিস জানায়, ২০১৭ সালে পুকুরে ৭ হাজার ৯৯৭, নদীতে ৩ হাজার ২০০, খালে ৪৭৫, বিলে ২৬ হাজার ৪৭০, হাওরে ৫৬ হাজার ১৪৯, প্লাবন ভূমিতে ২১ হাজার, ধানক্ষেতে ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টনসহ মোট ৯৪ হাজার ২৭৭ মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন হয়েছে। তবে আগে হাওরে আরও বেশি পরিমাণে মাছ পাওয়া যেতো।

মাছ ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা জানান, হাট-বাজারে হাওরের মাছের সংকট পড়েছে। তাই সামর্থ্যবান ক্রেতারা বেশি দামে হাওরের মাছ কিনছেন, অন্যদিকে নিম্ন আয়ের মানুষেরা চাষ করা মাছ দিয়ে নিজেদের আমিষের ঘাটতি পূরণ করছেন।

সুনামগঞ্জ বাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিডেটের সভাপতি মো. সহিবুর রহমান বলেন, ‘হাওরের মাছ এখন কম পাওয়া যায়। তবে পুকুরের মাছ পাওয়া যায় অনেক।’

দিন দিন এসব মাছের উৎপাদন কমছে (ছবি- প্রতিনিধি)

জামালগঞ্জ উপজেলার আমানীপুর বর্মণপাড়া গ্রামের জেলে জয়মোহন বর্মণ বলেন, ‘২০ বছর আগে সুরমা-বৌলাই নদীতে পাঙ্গাস পাওয়া যেতো। গেল দশ বছর ধরে পাওয়া যায় না। শেষ কবে পাঙ্গাস মাছ ধরেছিলাম, মনে নেই।’

একই গ্রামের মহেন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘জেলেরা জলমহালের মালিক না। ইজারাদার বেশি টাকা দিয়ে জলমহাল ইজারা নেয়। কিন্তু পাইল দেওয়ার সময় তা না দিয়ে প্রত্যেক বছর তারা জলমহাল থেকে মাছ ধরে। তাই দেশীয় মাছের সংখ্যা কমছে।’

তাহিরপুর উপজেলার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরের আলম ডুয়ার নামক বিলে একসময় প্রচুর চিতল মাছ পাওয়া যেতো। এখন মাছের পরিমাণ অনেক কমে গেছে।’

দিন দিন এসব মাছের উৎপাদন কমছে (ছবি- প্রতিনিধি)

ধর্মপাশা উপজেলার পাথারিয়া কান্দা গ্রামের শচীন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘আমাদের এলাকার কাউনাই বিল কালি-বাউশ, পাঙ্গাস ও পাবদা মাছের জন্য বিখ্যাত। জলমহালটি তিনটি নদীর সঙ্গম স্থল। গভীরতা বেশি হওয়ায় এখানে এখন মাছের উৎপাদন কমে গেছে।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল হক বলেন, ‘নানা কারণে মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। এর মধ্যে জলমহাল পানিশূন্য করে রাসায়নিক দিয়ে মাছ ধরা, জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার, জলমহাল ইজারা নীতিমালা না মানা, হাওরের বনজ সম্পদ ধ্বংস করা ইত্যাদি কারণে হাওরের মাছ বিলুপ্তি হচ্ছে।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews