‘মরিয়া বাবর অমর হইয়াছে, নাহি তার কোনো ক্ষয়, পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরণের পরাজয়।’ দিল্লির সম্রাট বাবর ছিলেন মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি স্বীয় বীরত্ব ও বিচক্ষণতায় মোগল সাম্রাজ্যের ভিত রচনা করেন।

প্রাণপ্রিয় পুত্র হুমায়ুনের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রদর্শন করে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে স্নেহবৎসল পিতা হিসেবে অনন্য নজির স্থাপন করে গেছেন। তার পুত্র হুমায়ুন কঠিন রোগে আক্রান্ত। রাজ্যের সব বিজ্ঞ চিকিৎসক তাকে সারিয়ে তোলার কাজে সদা নিয়োজিত।

কিন্তু কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছে না। তার জীবনপ্রদীপটা ক্রমেই নিভে আসছে। বাবর হেকিমদের ডেকে ব্যগ্র কণ্ঠে জানতে চাইলেন এ রোগ থেকে শাহজাদা মুক্তি পাবে কি? উত্তরে সবাই নীরব। এই নিষ্ঠুর নীরবতা বাদশাহ্র বুকে শেল হয়ে বিঁধল। এমন সময় জনৈক দরবেশ বললেন, সম্রাট যদি তার শ্রেষ্ঠ ধন মহান আল্লাহ্র উদ্দেশে উৎসর্গ করতে পারেন তবেই আল্লাহ্র রহমতে শাহজাদার প্রাণ রক্ষা পেতে পারে।

সম্রাট গভীরভাবে উপলব্ধি করলেন, তার সর্বশ্রেষ্ঠ ধন হল তার নিজের জীবন। তবু তার কোনো শঙ্কা নেই। তিনি আন্তরিকভাবে চান তার জীবনের বিনিময়ে পুত্রের জীবন রক্ষা পাক। তখন বাবর নিজগৃহে গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র দরবারে নিজ জীবনের বিনিময়ে পুত্রের রোগমুক্তি কামনা করেন। আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করলেন। সেই দিন থেকে বাবরের রোগ লক্ষণ দেখা দিল এবং হুমায়ুনের রোগ মুক্তি হল। বাৎসল্য বাবর তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ইতিহাসে অমর হয়ে রইলেন।

আসলে পিতা চিরকালই বটবৃক্ষ। আপন প্রাণরস দান করে ফল সতেজ রাখাই বৃক্ষের ধর্ম। আর এভাবেই সন্তানের প্রতি জন্মদাতা পিতার ভালোবাসা, আদর, সোহাগ অক্টোপাসের মতোই মায়ার জালে বন্দি হয়ে আছে সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত। আজ বিশ্ব বাবা দিবস। প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় বাবা দিবস। ১৯১০ সালে আমেরিকার সেনোরা লুইসের একান্ত প্রচেষ্টায় প্রথমবারের মতো বিশেষ এই দিনটি উদযাপিত হয়। সেনোরা ছিলেন ৬ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে বড়। সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মা ইলেন স্মার্ট যখন মারা যান তখন সেনোরার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর।

মায়ের মৃত্যুর পর বাবা উইলিয়াম স্মার্ট সন্তানদের মানুষ করার দায়িত্ব নেন। সারাক্ষণ তিনি তাদের দেখেশুনে রাখতেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও স্মার্ট তাদের মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন স্থায়ীভাবে বাবা দিবসকে রাষ্ট্রীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকে বিভিন্ন দেশে তাৎপর্যের সঙ্গে পালিত হচ্ছে বাবা দিবস।

মায়ের মৃত্যুর পর বাবা উইলিয়াম স্মার্ট সন্তানদের মানুষ করার দায়িত্ব নেন। সারাক্ষণ তিনি তাদের দেখেশুনে রাখতেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও স্মার্ট তাদের মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন স্থায়ীভাবে বাবা দিবসকে রাষ্ট্রীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকে বিভিন্ন দেশে তাৎপর্যের সঙ্গে পালিত হচ্ছে বাবা দিবস।

কয়েকটি দেশে বিভিন্ন তারিখে বাবা দিবস পালিত হলেও আজ বাংলাদেশসহ ৮৭টি দেশ এ দিবস পালন করছে। পৃথিবীর সব সন্তান যেন তাদের বাবাদের বৃদ্ধ বয়সে তাদের পরিবারের মধ্যে রেখে পরম যত্ন, অসীম ভালোবাসা, সেবা ও শুশ্রূষা দিয়ে তাদের সব হতাশা আর কষ্ট চিরতরে ভুলিয়ে দিতে পারে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

মো. কায়ছার আলী : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

[email protected]



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews