সেলুনে চুল, দাড়ি কামাতে গিয়ে দেখলেন সামনে সাজিয়ে রাখা একটি সেলফে থরেথরে বই।

রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্রের কালজয়ী সব গল্প,উপন্যাস। নরসুন্দর আপনার আগে আসা লোকটিকে যখন নিয়ে ব্যস্ত, সময়টা কাজে লাগাতে সেলফ থেকে পছন্দের বইটি নিয়ে পড়া শুরু করলেন।

সেলুনেই হয়ে গেল সাহিত্যচর্চা বা নানা বিষয়ে জ্ঞান লাভ।

ব্যাপারটি স্বপ্ন নয়, এমনটিই দেখা গেল খুলনার বাটিয়াঘাটা বাজারের একটি সেলুনে। সেলুনটির মালিক মিলন শীল।

নিজের সেলুনেই তিনি গড়ে তুলেছেন একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। কষ্টার্জিত অর্থ জমিয়ে সেখানে সাজিয়েছেন বিখ্যাত মনীষীদের বই।

নিজের সেলুনেই তিনি গড়ে তুলেছেন একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। কষ্টার্জিত অর্থ জমিয়ে সেখানে সাজিয়েছেন বিখ্যাত মনীষীদের বই।

আর তার সেলুনে দৈহিক সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতায় আসা মানুষেরা সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন আত্মার খোরাকও।

বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসী মিলনের দোকানকে সেলুন লাইব্রেরী হিসেবে একনামে চেনে।

এ বিষয়ে নরসুন্দর মিলন জানান, এতে তার সেলুনে লোকসমাগম বেড়ে গেছে। বই পড়তে অনেকেই তার সেলুনে আসেন। সেই সঙ্গে চুল, দাড়িও কামিয়ে যান।

মিলনের এই সেলুন পাঠাগারে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশ বরেন্য লেখকের বই।

সংখ্যায় তা ৩০০ এর বেশি হবে বলে জানান মিলন।

এতো বই কীভাবে কিনেছেন! সেই প্রশ্নে মিলন জানান, কিছু বই নিজ উদ্যোগে আর কিছু বই বন্ধুদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে এই লাইব্রেরী গড়েছেন।

ইন্টারনেটের যুগে বই পড়ার প্রবণতা ক্রমেই কমে যাচ্ছে জানিয়ে মিলন জানান, মানুষের বই পড়ার অভ্যাসটাকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে আমার এই উদ্যোগ।

আর সেকারনে শুধু যে তার সেলুনে এসেই যে বই পড়তে হবে তেমনটিও নয়।

চাইলে একটি খাতায় নাম, ঠিকানা লিখে বই বাড়িতেও নিতে পারেন পাঠক, বলেন মিলন।

এলাকাবাসী জানান, অনেকেই বই কিনে পড়তে পারেন না। মিলনের সেলুনে এসেই তারা তাদের চাহিদা মেটায়।

মিলনের সেলুনের নিয়মিত পাঠক নাজমুল বলেন, এ উপজেলায় কোনো পাবলিক লাইব্রেরী নাই। এ কারণে মিলনের সেলুনে এসে বই পড়ি। মাঝে মধ্যে বাসায় নিয়েও যাই।

মিলনের এ সেলুনের মাধ্যমে এলাকার সবার বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সেলুনে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে মিলন মহৎ উদ্যোক্তার পরিচয় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন এক স্থানীয়।

এভাবে একজন নরসুন্দরের ব্যবসাকেন্দ্রে লাইব্রেরি গড়ার স্বপ্ন এলো কীভাবে! সেই প্রশ্নে মিলন স্মৃতি কাতর হয়ে বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাবার এই সেলুনের কাজে ঢুকে পড়ি।

তিনি জানান, সংবাদপত্র পড়ার প্রতি খুব ঝোঁক ছিল তার। তবে একদিন এক বন্ধুর কাছ থেকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘মেজদিদি’ বইটি নিয়ে পড়ে প্রথম বই পড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মায়। শুরু হয় বই সংগ্রহ। এভাবেই একদিন ঝুলিতে জমা হয় অনেক অনেক বই।

আর এসব বই দিয়েই তিনি নিজের ব্যবসাকেন্দ্রে এই পাঠাগার দিয়ে বসেন।

সেলুন চালানোর পাশাপাশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছেন মিলন।

এলাকায় এখন আলোচিত মুখ বটিয়াঘাটা উপজেলার হেতালবুনিয়া গ্রামের মিলন শীল।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews