ছোট্ট একটা গুবড়ে পোকা। আমরা সাধারণত তাকে দেখি নিজের আকারের চেয়ে অনেক বড় গোবরের তৈরি বল ঠেলে নিয়ে যেতে। কিন্তু এই ছোট প্রাণীটাই এখন বিজ্ঞানীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে। কারণ রাতে চলার জন্য গুবড়ে পোকা ব্যবহার করে আকাশের তারার আলো—বিশেষ করে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ঝলমলে রেখা।

সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ইউনিভার্সিটি অফ উইটওয়াটারসর‍্যান্ড-এর একদল বিজ্ঞানীর গবেষণায় দেখা গেছে, Escarabaeus satyrus নামের এক ধরনের গুবড়ে পোকা রাতে তার মল দিয়ে বানানো বল নিয়ে একদম সোজা পথে চলে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এই সোজা পথ সে খুঁজে পায় মিল্কিওয়ের আলো দেখে। বিজ্ঞানীরা একটি প্লানেটারিয়াম বা বিশাল কৃত্রিম আকাশঘরের মধ্যে গুবড়ে পোকাদের রেখে পরীক্ষা চালান। দেখা যায়, যখন কৃত্রিম আকাশে মিল্কিওয়ের রেখা দেখানো হয়, পোকাগুলো একদম সোজা চলে যায়। কিন্তু আকাশ থেকে মিল্কিওয়ের আলো সরিয়ে ফেললে তারা দিক হারিয়ে ফেলে।

আরও বিস্ময়ের বিষয় হলো—এই পোকাগুলো আকাশের আলাদা আলাদা তারা চিনতে পারে না। বরং পুরো মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির আলো-ছায়ার মিলিত আভা, অর্থাৎ লাইট গ্রেডিয়েন্ট দেখে তারা বুঝে নেয় কোন দিকে যেতে হবে। আমাদের এই গ্যালাক্সি প্রায় এক লাখ আলোকবর্ষ চওড়া। এত বিশাল এক গ্যালাক্সির হালকা আলো, যা আমরা খালি চোখে শুধু একটি ধুসর রেখা হিসেবেই দেখি—সেটাই একটি ছোট্ট গুবড়ে পোকাকে সঠিক পথে চালিয়ে নিয়ে যায়।

এ পোকাগুলো এতটাই শক্তিশালী যে, নিজের ওজনের প্রায় ১০০০ গুণ ভারী গোবরের তৈরি বল ঠেলতে পারে। মানুষের সাথে তুলনা করলে, একজন ৭০ কেজির মানুষকে ৭০ টন ওজনের বল ঠেলতে হবে! কিছু পাখি আর সামুদ্রিক প্রাণী ছাড়া অন্য কোনো পোকা এভাবে আকাশ দেখে দিক ঠিক করতে পারে না। তাই গুবড়ে পোকা শুধু “মল ঠেলার পোকা” নয়—ওরা প্রকৃতির ক্ষুদ্র নভচারী। আমরা যখন রাতে চলার জন্য মোবাইলের টর্চ জ্বালাই, তখন এই পোকা দিক ঠিক করে শুধুমাত্র গ্যালাক্সির আলো দেখে। সত্যিই, প্রকৃতি কতটা আশ্চর্য, তা এই ক্ষুদ্র প্রাণীই যেন আবারও প্রমাণ করে দিল।

শেখ ফরিদ



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews