ফরিদপুরের সদরপুর, চরভদ্রাসন, ভাঙ্গা ও কৃষ্ণপুরের একাংশ নিয়ে ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসন গঠিত। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে বিএনপির দুই প্রার্থী মনোনয়ন পেতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি, জামায়াতের নেতাকর্মীরা এলাকায় নিজেদের উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন। বিএনপি থেকে ফরিদপুর-২ আসনে শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রচার চালিয়ে এলেও অবশেষে হাইকমান্ডের নির্দেশে ফরিদপুর-৪ আসনে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিএনপি থেকে এ আসনে শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রার্থী হবেন, এমন কথাই শোনা যাচ্ছে। এদিকে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে ভাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সরোয়ার হোসেন ও তার নেতাকর্মীরা বেশ তৎপর রয়েছেন নির্বাচনি মাঠে। বিএনপি, জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা রাজনৈতিক নানা কর্মসূচিতে যোগদানের পাশাপাশি এলাকায় মিলাদ-মাহফিল, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে কৌশলে প্রচার চালাচ্ছেন। এছাড়া যারা জুলাই আন্দোলনে শহীদ বা আহত হয়েছেন তাদের বাড়িতে গিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা খোঁজখবর নেওয়া থেকে শুরু করে পরিবারকে অনুদান দিচ্ছেন। নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় বেশির ভাগ সময় ব্যয় করছেন নানা সামাজিক কাজে। অবশ্য আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর এর নেতাকর্মীদের এলাকায় তেমন একটা দেখা মিলছে না।
ফরিদপুর-৪ আসনটিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তথ্যানুযায়ী এ আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৬ জন। এ আসনে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ।
২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুর রাজ্জাক বিজয়ী হন। ২০০২ সালে সংসদ-সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মৃত্যুবরণ করলে এই আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর সহধর্মিণী নিলুফার জাফর উল্লাহ বিজয়ী হন। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বিজয়ী হন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবির মোট ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বিজয়ী হন। এ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।
নেতাকর্মীরা জানান, মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি জানান দিতে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। নগরকান্দা কৃষক দলের সভাপতি বিল্লাল হোসেন মোল্যা বলেন, শহিদুল ইসলাম বাবুল ক্লিন ইমেজের একজন ভালোমনের মানুষ। তাকে সঙ্গে করে আমরা নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে শহিদুল ইসলাম বাবুল যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ছাত্রদল থেকে শুরু করে যুবদল হয়ে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম জেল-জুলুম, ফ্যাসিবাদের মার খেয়ে রক্তে রঞ্জিত হয়েছি। ১২৮টি মামলা কাঁধে নিয়ে এলাকার জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। নীতিনির্ধারণী মহলের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে আমার ওপর। এ আসনে আমার ত্যাগ বিবেচনা করে দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে এ বিশ্বাস আমার রয়েছে।
ফরিদপুরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল থেকে শুরু করে জেলা আইনবিষয়ক সম্পাদক থেকে জেলা বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত রেখে চলেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট আলী আশরাফ নান্নু। তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৩ যুগের বেশি সময় দলের জন্য কাজ করে নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। আওয়ামী দুঃশাসনের সময় মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। ফরিদপুর-৪ আসন আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে মানুষ অতিষ্ঠ। এ আসনে এখন তারা পরিবর্তন চায়।
ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম বলেন, আমি বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভাঙ্গা উপজেলায় সুসংগঠিত করেছি। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ১৮ জন প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি আমাকে মনোনয়ন দিলে প্রার্থী হই। আওয়ামী লীগ আমলে আমাকে মামলা-হামলা করে আমার খন্দকার টাওয়ারের পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। আমার ঢাকার গার্মেন্টে ও ব্যবসায়িকভাবে ব্যাপক ক্ষতি করে আমাকে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে স্বৈরাচারী সরকারের মদদপুষ্ট ব্যক্তিরা। ভাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সরোয়ার হোসেন বলেন, দলীয় নীতিনির্ধারণী বোর্ড আমাকে এ আসনে কাজ করতে বলেছে। আশা করি জামায়াতের পক্ষ থেকে আমিই নমিনেশন পাব।
ফরিদপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রফেসর আব্দুত তাওয়াব বলেন, ফরিদপুর-৪ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা সরোয়ার হোসেন অনেকটা চূড়ান্ত। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ আসন থেকে তিনিই জামায়াতের হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।