ক্রিকেটের অভিধানে ব্যাট-বল আছে, রান-উইকেট আছে; আন্তর্জাতিক সফর বিবেচনায়
দৈনন্দিন জীবনের নানান অনুষঙ্গও যুক্ত হয় কখনও কখনও। কিন্তু প্রসঙ্গ যখন
পাকিস্তানের মাটিতে ক্রিকেট, তখন নিশ্ছিদ্র পাহারা, বুলেট প্রুফ গাড়ি,
হোটেলবন্দি, হাজারো পুলিশ মোতায়েনের মতো নিরাপত্তা পরিভাষার নানান শব্দও
কঠিন বাস্তবতা। অন্তত ক'সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফর ইস্যু
ঘুরপাক খেয়েছে এসবের মধ্যেই। তবে ঢাকা থেকে বিমানে ওঠার সময়ই
নিরাপত্তাকেন্দ্রিক সব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন বলে আশ্বাস দেন
বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। জানিয়েছেন, লাহোরের গাদ্দাফি
স্টেডিয়ামে আজ ধ্যানে-জ্ঞানে ক্রিকেট নিয়েই নামতে যাচ্ছে তার দল। বিকেল
৩টায় শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচ টি২০ সিরিজের খেলাটি অবশ্য বাংলাদেশের কোনো
চ্যানেলে দেখা যাবে না।
২০০৮ সালে এশিয়া কাপ খেলে আসার পর এই প্রথম পাকিস্তানে খেলতে নামছে
বাংলাদেশ জাতীয় দল। ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলংকা দলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার
পর থেকে অর্ধযুগ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়নি পাকিস্তানে। সাম্প্রতিক সময়ে
ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং শ্রীলংকা সফর করে গেলেও বাংলাদেশের যাওয়া নিশ্চিত ছিল
না। দুই দেশের বোর্ড পর্যায়ে প্রস্তাব পাল্টা প্রস্তাব আর নানামুখী আলোচনার
পর সফর চূড়ান্ত হয় গত সপ্তাহে। সূচি করা হয় চার মাসের ভেতর তিন দফা সফরের;
যার প্রথমটিতে টি২০ সিরিজ খেলতে মাহমুদুল্লাহর দল এখন লাহোরে।
মাঠের খেলা বিবেচনায় ফেভারিট স্বাগতিকরাই। নিজেদের সর্বশেষ ছয় ম্যাচে হেরে
গেলেও এখনও টি২০ র্যাংকিংয়ের শীর্ষে আছে পাকিস্তান। তবে নয় নম্বরে থাকা
বাংলাদেশকে আশা দেখাচ্ছেন তরুণরা। সাকিব আল হাসান নিষেধাজ্ঞায় আর মুশফিকুর
রহিম নিরাপত্তা-শঙ্কায় না থাকলেও বিপিএলে আলো ছড়ানো আফিফ হোসেন, মোহাম্মদ
নাঈম, মেহেদী হাসান ও হাসান মাহমুদরা আছেন। পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশের
হয়ে সর্বশেষ সিরিজে খেলার দিক থেকে অবশ্য দু'জন ছাড়া সবাই অনভিজ্ঞ। এক যুগ
আগে বাংলাদেশ দলের শেষ পাকিস্তান সফরে থাকাদের মধ্যে এখনও আছেন কেবল
অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ ও ওপেনার তামিম ইকবাল। করাচিতে হওয়া দু'দলের একমাত্র
টি২০ ম্যাচটিতে খেলা স্বাগতিক দলের আছেন একজন- শোয়েব মালিক (ম্যাচসেরা হওয়া
মিসবাহ-উল হক এখন প্রধান কোচ)। র্যাংকিংয়ের এক নম্বর দল হিসেবে খেলতে
নামলেও স্থানচ্যুত হওয়ার শঙ্কা আছে পাকিস্তানের, এক ম্যাচ হারলেই নেমে যেতে
হবে দুইয়ে। বাবর আজমের দল তাই গোটা সিরিজকে নিয়েছে 'ডু অর ডাই' হিসেবে।
বিপরীতে র্যাংকিং নিয়ে ভাবনা নেই বাংলাদেশের। প্রথম লক্ষ্য সম্পূর্ণ
মনোযোগ খেলার মাঠে রাখা। যদিও বুধবার রাতে চার্টার্ড বিমানে লাহোরে
পৌঁছানোর পর থেকে ক্রিকেটেই ডুবে আছেন বলে জানিয়েছেন অধিনায়ক
মাহমুদুল্লাহ। গতকাল গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে
বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, 'ঢাকায় বিমানে ওঠার সময়ই আমরা নিরাপত্তা ইস্যু মাথা
থেকে ফেলে এসেছি। সব ভাবনা এখন খেলা নিয়ে।' গতকাল দুপুরে হোটেল থেকে
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় বুলেট প্রুফ গাড়িতে করে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে গিয়ে
অনুশীলনও করেছে বাংলাদেশ দল। মাঠের মধ্যেই পরিকল্পনা ও একাদশ নিয়ে কথা
বলেছেন অধিনায়ক-কোচ ও সংশ্নিষ্টরা। একাদশ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্য আজ
খেলা শুরুর আগে হওয়ার কথা। এক্ষেত্রে একটু বেশিই ভাবতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
কারণ ওপেনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত- এমন পাঁচজন আছেন স্কোয়াডে। আবার মিডল
অর্ডারে মুশফিক-সাকিবের শূন্যতাও পূরণ করতে হবে। যে কারণে লিটন কুমার,
সৌম্য সরকারদের নিচের দিকে ব্যাট করা লাগতে পারে; ক'দিন আগে ঢাকায় এমন
ইঙ্গিত দিয়েছেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও। বোলিং আক্রমণে অবশ্য আল-আমিন, শফিউল
ইসলাম এবং মুস্তাফিজুর রহমানরা অটোমেটিক চয়েজ; প্রথম ডাক পাওয়া পেসার হাসান
মাহমুদকে তাই অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে। অন্যদিকে স্বাগতিকরা আজ কমপক্ষে
দু'জনকে অভিষেক করাতে যাচ্ছে। বিগ ব্যাশে গতি দিয়ে আলোচনায় আসা পেসার হারিস
রউফ আর ডানহাতি ব্যাটসম্যান আহসান আলীর খেলার কথা গতকালই নিশ্চিত করে
দিয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর। ব্যাটসম্যানদের টি২০ র্যাংকিংয়ের এক
নম্বরে থাকা বাবর দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো অধিনায়কত্ব করতে নামছেন
নিজের এলাকার মাঠে। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের পিচ ধীরে ধীরে স্লো হওয়ার প্রবণতা
থাকলেও ১৮০-১৯০-কে প্রত্যাশিত স্কোর বলে ধারণা দিয়েছেন তিনি। উইকেট
সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলেও বাংলাদেশ দলও ভাবছে রান-উইকেটের পথ ধরেই।
নিরাপত্তা নিয়ে যত কথাই হোক, আসল উপাদান তো ব্যাট-বলের লড়াইটাই।