নতুন একটি গাড়ি কিনেছেন সাকিব। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হতেই সবাই জিজ্ঞেস করে বসল, ‘কী কার কিনেছ?’ গাড়ির আভিধানিক ইংরেজি শব্দ কার। তিন অক্ষরের এই শব্দ সহজে প্রকাশ করা গেলেও এর প্রকারভেদ কিন্তু এককথায় বলার মতো নয়। চার চাকার যানবাহনে রয়েছে নানা প্রকারভেদ। দেখতে কাছাকাছি হলেও ব্যবহার এবং ডিজাইন অনুসারে এই গাড়িগুলোর নানা ধরনের নাম থাকে। জেনে নেওয়া যাক গাড়ির প্রকারভেদ।

স্পোর্টস

সেডান গাড়ির মতো দেখতে হলেও এই গাড়িগুলো নিচু ধরনের হয়ে থাকে। স্পোর্টস কারের চাকাগুলোর সঙ্গে গাড়ির শরীর লেগে থাকে। গাড়ির পেছনে বুটের ওপরে স্পয়লার লাগানো থাকে। বাতাসকে কাটিয়ে গতি তুলতে সাহায্য করে গাড়িকে মাটির সঙ্গে সেঁটে ধরতে স্পয়লার ব্যবহৃত হয়। সাধারণত স্পোর্টস কার দুই আসনবিশিষ্ট হয়ে থাকে। টয়োটা ৮৬, সেলিকা, এমআর২সহ বেশ কয়েকটি স্পোর্টস গাড়ির দেখা দেশের বাজারে মেলে।

ক্রসওভার

যে গাড়িগুলো ঠিক সেডান নয়, আবার আকারে এসইউভির সমানও নয় এমন মাঝামাঝি ঘরানার গাড়িগুলোকে ক্রসওভার বলে। এসব গাড়ি সাধারণত সেডান গাড়ির চেয়ে উঁচু আবার এসইউভি গাড়ির তুলনায় নিচু হয়। ক্রসওভারেও হুইল বেইস বড় থাকে। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এসইউভির মতো না হলেও সেডান গাড়ির চেয়ে বেশি থাকে। হ্যাচবেক গাড়িগুলোর সঙ্গেও এই গাড়িগুলোর মিল রয়েছে। হোন্ডা ভেজেল, অওডি কিউটু, মিতশুবিশি ইকলিপস ক্রস, নিশান জুক, হেভেল এইচটুসহ বেশ কয়েকটি ক্রসওভার দেশের গাড়ির বাজারে জনপ্রিয়। 

মিনিভ্যান

শুনতে ছোট শোনালেও এসব গাড়ি আসলে অত ছোট নয়। এ ধরনের গাড়ি যাত্রীর পাশাপাশি মালামালও বহন করতে পারে। অধিক সদস্যের পরিবার বা বেশি যাত্রী বহন করার জন্য এ ধরনের গাড়ি জনপ্রিয়। দেশে এসব গাড়ি মাইক্রো বলে পরিচিত। টয়োটা এক্স নোয়াহ, ভক্সি, আলফার্ড, ভেলফায়ার, হুন্দাই এইচওয়ান মিনিভ্যান গাড়ি হিসেবে পরিচিত।

এমপিভি বা এমইউভি

পাঁচজনের বেশি যাত্রী বহন করা যায় এবং দেখতে অনেকটা হ্যাচবেক ধরনের গাড়িগুলোকে এমপিভি বা এমইউভি গাড়ি বলে। মাল্টিপারপাস ভেহিক্যাল বা মাল্টিইউটিলিটি ভেহিক্যাল গাড়িগুলোর অন্যতম সুবিধা হলো এই গাড়িগুলোতে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সারির আসনগুলোকে বল্টে রেখে মালামাল বহন করার জন্যও ব্যবহার করা যায়। সুজুকি আর্টিগা, মিতশুবিশি এক্সপেন্ডার, টয়োটা এভাঞ্জা, সিয়েন্টাসহ বেশ কয়েকটি মডেলের গাড়ি দেশের বাজারে পাওয়া যায়।

এসইউভি বা এসএভি

স্পোর্টস ইউটিলিটি বা স্পোর্টস অ্যাকটিভিটি ভেহিক্যালগুলোকে সংক্ষেপে এসইউভি বা এসএভি বলে। অটোমোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিএমডব্লিউর তৈরি উঁচু টাইপের গাড়িগুলোকে এসএভি বলে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এসইউভি শব্দটি বেশি ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে এই গাড়িগুলো ‘জিপ গাড়ি’ বলেই পরিচিত। যদিও জিপ ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র মোটরসের নির্মিত আমেরিকান সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত গাড়ি। এসব গাড়ির হুইল বেইস বড় হয়ে থাকে এবং গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সও বেশি থাকে। পাঁচ বা সাত আসনবিশিষ্ট এই গাড়িগুলোয় চড়তে আরামদায়ক। দূরের পথে উঁচু আসনে বসে নিরাপদ যাত্রার জন্য গাড়িগুলো সারা পৃথিবীতেই সুনাম কুড়িয়েছে। টয়োটা প্রাডো, হেরিয়ার, রাশ, র‌্যাভফোর, মিতশুবিশি পাজেরো, আউটল্যান্ডার, অওডি কিওসেভেন, নিশান এক্স-ট্রেইল, হাভাল এইচএইট এই ধরনের গাড়ি অন্যতম।

অফরোডার

পাহাড়ি রাস্তা, কর্দমাক্ত এবং পিচ্ছিল পথ অথবা অল্প পানিতেও যে গাড়ি দাপটের সঙ্গে পাড়ি দেয়, সেই সব গাড়িকে অফরোডার বলে। অফরোডার গাড়ির মূল বৈশিষ্ট্য হলো চাকা। খাঁজকাটা এবং মাটি আঁকড়ে ধরার মতো চাকা থাকে এই গাড়িতে। তার সঙ্গে রয়েছে ফোর হুইলার। এতে চারটি চাকা সমান শক্তিতে গাড়িকে এগিয়ে নিতে পারে। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, ল্যান্ড রোভার, নিশান পেট্রোল এই ক্যাটাগরির অন্যতম গাড়ি।

কমার্শিয়াল

যেসব গাড়ি শুধু বেশি যাত্রী বহনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে, সেই সব গাড়ি কমার্শিয়াল বা বাণিজ্যিক গাড়ি হিসেবে পরিচিত। ১০ থেকে ১২ জন পর্যন্ত যাত্রী এই গাড়িতে বহন করা যায়। এই গাড়িগুলো মিনিভ্যান ধরনের গাড়ির চেয়ে লম্বা হয়ে থাকে। গাড়ির ইঞ্জিন রাখার জায়গা বেশ ছোট হয়। করপোরেট জগতে বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য এ ধরনের গাড়ি বেশি ব্যবহৃত হয়। টয়োটা হাইয়েস এই ক্যাটাগরির গাড়িতে অন্যতম।

সেডান

রাস্তায় চলাচল করা ব্যক্তিগত গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় গাড়ি হলো সেডান কার। সেডান কার সাধারণত সেই সব গাড়িকে বলা হয়, যেসব গাড়ির ইঞ্জিন সামনে থাকে, বসার জন্য দুই সারি আসন থাকে এবং মালামাল বহন করার জন্য গাড়ির পেছনের অংশে আলাদা জায়গা থাকে। এসব গাড়িতে পেছনের গ্লাসটি সিটের কাছাকাছি মিলিত হয়। এরপরের অংশে আলাদাভাবে মালামাল বহন করা যায়। ১৯১২ সালে প্রথম এই শব্দ গাড়ির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। সেডান কারের আরেকটি নাম হলো সেলুন কার। জনপ্রিয় সেডান গাড়ির মধ্যে টয়োটা প্রিমিও, অ্যালিয়ন, অ্যাক্সিউ, মিতসুবিশি ল্যান্সার, অ্যাট্রেজ, হোন্ডা গ্রেস, সিভিক, অ্যাকর্ড এবং নিশান ব্লুবার্ড উল্লেখযোগ্য।

কনভার্টিবল

গাড়ি বলতেই সাধারণত আমরা নির্দিষ্ট ছাদের একটি যানবাহনকে বুঝি। কিন্তু গাড়ি যদি এমন হয়, চাইলেই মাথার ওপর আকাশ দেখা বা খোলামেলা চালানোর সুযোগ থাকে। যেখানে মাঝখানে কোনো বাধা থাকবে না। এ ধরনের গাড়িগুলোকে কনভার্টিবল গাড়ি বলে। এতে ছাদটিকে ফোল্ড করে গাড়ির পেছনের অংশে স্তূপ করে রাখা যায়। বৃষ্টি বা অধিক গরমে ভাঁজ করা যায় (ফোল্ডেবল) ছাদটি দিয়ে গাড়ি ঢেকে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালানোর সুযোগ এ গাড়িতে মেলে। বিএমডব্লিউ আইএইট, টয়োটা এমআরএস, হোন্ডা এস৬৬০সহ এই ক্যাটাগরিতে বেশ কয়েকটি গাড়ি রয়েছে।

হ্যাচব্যাক

সেডান গাড়ির সঙ্গে এই ধরনের গাড়ির পার্থক্য হলো, এই গাড়িতে বুট স্পেসের জন্য আলাদা কোনো স্থান থাকে না। আসনের পর থেকেই এর বুট স্পেস শুরু হয়। গাড়ির পেছনের গ্লাস বা দরজা খুলে সরাসরি বুট স্পেস দেখা যায়। টয়োটা ফিল্ডার, প্রোবক্স, আইএসটি, ভিটজ, সুজুকি অ্যাল্টো, টাটা টিয়াগো এই ধরনের গাড়ির উত্তম উদাহরণ।

ডিজেল, পেট্রল, হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিক

যে জ্বালানি ব্যবহার করে গাড়ি চলে, সাধারণত সেই গাড়িকে ওই জ্বালানির নামে ডাকা হয়। দেশে একমাত্র টাটার রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ির সারিতে ডিজেল প্রাইভেট কার। টাটা ইন্ডিগো ইসিএস একটি ডিজেল গাড়ি।

বেশির ভাগ গাড়ির জ্বালানি শক্তি হিসেবে পেট্রল বা অকটেন ব্যবহৃত হয়। যেসব গাড়িতে জ্বালানি শক্তির পাশাপাশি বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহৃত হয়, সেগুলোকে হাইব্রিড গাড়ি বলে। যেসব গাড়িতে হাইব্রিড অপশন থাকে, সেসব গাড়িতে হাইব্রিডের লোগো থাকে। এ ছাড়া বিএমডব্লিউ গাড়ির মডেলের শেষ শব্দে ‘ই’ যুক্ত করে হাইব্রিড গাড়ির মডেল উল্লেখ করে।

প্লাগ-ইন হাইব্রিড গাড়িগুলোতে ‘পিএইচইভি’র লোগো থাকে। পিএইচইভি গাড়িগুলোতে চার্জ দেওয়ার অপশন থাকে। মিতশুবিশি আউটল্যান্ডার পিএইচইভি, বিএমডব্লিউ ৭৪০এলই প্লাগ ইন হাইব্রিড গাড়ির মধ্যে অন্যতম। যেসব গাড়ি শুধু বৈদ্যুতিক বা ব্যাটারির শক্তিতে পরিচালিত হয়, সেসব গাড়িকে ইলেকট্রিক গাড়ি বলে। দেশের বাজারে ইলেকট্রিক গাড়ির নীতিমালা এখনো না থাকায় রাস্তায় বৈদ্যুতিক গাড়ির দেখা মেলে না। তবে উন্নত বিশ্বে ইলেকট্রিক গাড়ির মধ্যে টেসলা, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ এবং হুন্দাই গাড়ির দখল রয়েছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews