জান্তা হটাতে প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছে মিয়ানমারের বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলো। তাদের রুখতে বেশ হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা। ইতোমধ্যে অনেক ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। শনি থেকে সোমবার- তিনদিনের যুদ্ধে দখল করে নিয়েছে দেশটির তিন প্রদেশ ও দুই অঞ্চল। কাচিন, মোন রাজ্য, রাখাইনসহ সাগাইং এবং বাগো অঞ্চলের বেশকিছু ঘাঁটি এখন বিদ্রোহীগোষ্ঠীর দখলে। নিজেদের বিমানঘাঁটি রক্ষার জন্য জান্তাদল ৬০টিরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। টানা এ সংঘর্ষে ৬ বেসামরিক নিহত, আহত হয় আরও ১৫ জন।
বুধবার ইরাবতীর খবরে বলা হয়েছে, আক্রমণের তথ্যগুলো পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) এবং জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন (ইএও) থেকে পাওয়া গেছে। সোমবার কাচিন রাজ্যের মান্দালে-মিটকিনা রোডের সেনাঘাঁটি লড়াইয়ের পর বিদ্রোহী যোদ্ধারা দখল করে নিয়েছে। কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি এবং কাচিন রিজিয়ন পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের সমন্বিত আক্রমণে মানসি টাউনশিপের শিখাঙ্গি গ্রামের ঘাঁটিটি দখল করেছে তারা। জান্তার পদাতিক ব্যাটালিয়ন ২৭৬ ও ২২৩-এর সেনাসদস্যরা প্রায় ৩০ বছর ধরে ওই ঘাঁটিতে অবস্থান করছিল। এর আগে শনিবার সাগাইং অঞ্চলের মাইনমু শহরে বিদ্রোহীদের আক্রমণে শাসকবাহিনীর অন্তত সাতজন গুরুতর আহত হয়েছে। একই দিনে বাগো অঞ্চলের ইয়েদাশে সেনাবাহিনীর দুই সদস্য নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও পাঁচজন। তবে ইরাবতীর প্রতিবেদনে সেনাবাহিনীর হতাহতের খবরগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। আরাকান আর্মি জানায়, সংঘর্ষ চলাকালে একটি জান্তা ফাইটার জেট তিনবার শিখাঙ্গি গ্রাম ও এর আশপাশে বোমা ফেলে।
এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রাখাইনের মুসলিম নেতাদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে জান্তাদল। এ বিষয়ে মংডুতে তাদের সঙ্গে বৈঠকও করছে সামরিক বাহিনী। সেখানে উপস্থিত এক মুসলিম নেতা জানিয়েছেন, যদি তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হতে ইচ্ছুক হন, তবে তাদের অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করা হবে। ৯ ফেব্রুয়ারি মংডুর ময়ো থু গি গ্রামের ৫নং বিজিপি ঘাঁটিতে জান্তাবাহিনীর ডিভিশন কমান্ডার থুরেন তুন এবং বিভাগীয় প্রশাসক নায়ো ও স্থানীয় মুসলিম নেতাদের এই প্রস্তাব দেন। বৈঠকে থুরেন তুন বলেন, ‘রাখাইনের মানুষের (বৌদ্ধ আরাকান আর্মি) কারণে আমরা (মুসলিমরা) ভুগছি। তাই তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অস্ত্র তুলে নেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে জান্তাবাহিনীর পক্ষ থেকে আমাদের গ্রামে আর কখনো হামলা চালানো হবে না।’ তবে এমন প্রস্তাবে মুসলিম নেতাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ রাজি হলেও বেশির ভাগই জান্তাবাহিনীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। রাখাইনের সংবাদ সংস্থা নারিনজারার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যের কিয়াউকফিউ শহরে সামরিক চাকরিতে বাধ্য করা হচ্ছে জনগণকে। শহরটির কিয়াউক তা লোন মুসলিম শরণার্থীশিবির থেকে কমপক্ষে ১৫০ জন পুরুষকে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য জোর করা হয়। ক্যাম্পের একজন যুবক জানান, সেই শিবিরে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সি পুরুষদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। পাশাপাশি ঘোষণা করে তাদের সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে হবে। এমনকি ইয়াঙ্গুন এবং নেপিতাও শহরে সরকারি বিভাগের কর্মীদের যোগদানের জন্য তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ইয়াঙ্গুনের ২৬ বছর বয়সি একজন নারী কাস্টম অফিসার জানিয়েছেন, ‘প্রতিটি বিভাগের প্রধানরা আমাদের মধ্যে যারা সেবা করার জন্য যোগ্য এবং বয়সের সীমার মধ্যে, তাদের তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং আঞ্চলিক সরকারের কাছে তথ্য জমা দিয়েছেন।’