রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত হয় গাজীপুর মহানগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিপ্রবর্ধা গ্রামের শাহ আলম ও রিনা বেগম দম্পতির মেয়ে সায়মা আক্তার (৯)। সে ওই স্কুলের তৃতীয় শেণির শিক্ষার্থী।

সায়মা আক্তারের বাবা শাহ আলম গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিপ্রবর্থা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মা-ভাইসহ স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় নিজস্ব ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানিতে ফেনীতে এলাকায় কর্মরত। তার মেয়ে সায়মা আক্তার উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী এবং বড় ছেলে সাব্বির হোসেন চলতি বছর একই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছে।

সোমবার (১৯ জুলাই) বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত হয় সায়মা আক্তার। সায়মার মৃত্যুর খবর শুনে প্রতিবেশীসহ আত্মীয় স্বজনরা রাত থেকেই তাদের গ্রামের বাড়িতে ভিড় জমাতে থাকে। রাত ২টার দিকে সায়মার লাশ স্বজনরা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে। আগুনে পুড়ে যাওয়া সায়মার মুখ দেখে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মঙ্গলবার লাশবাহী একটি ফ্রিজিং গাড়িতে শিশু সায়মা আক্তারের লাশ রাখা ছিল। এসময় মেয়ের লাশের পাশে বসে রিনা বেগম বিলাপ করছিলেন। তিনি মূর্ছা যাচ্ছিলেন। সায়মা আক্তারের স্মৃতি স্মরণ করে নিহতের বড় ভাই ও বাবা শিশু সায়মার শোকে আহাজারী করছিলেন। প্রতিবেশীসহ স্বজনরাও কান্না করছিলেন। তাদের আহাজরীতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ভারী হয়ে ওঠে চারপাশের পরিবেশ।

নিহতের বাবা বলেন, ‘ঘটনাটি আমার এক বন্ধু ফোন করে আমাকে জানায়। খবর পেয়েই স্কুলে গিয়ে সারাদিন খোঁজাখুঁজি করেও আমার মেয়ের সন্ধান পাইনি। বিভিন্ন স্থানে ও হাসপাতালে খোঁজাখুঁজির পর রাত ৮টার দিকে জানতে পারি সিএমএইচে তার লাশ রাখা আছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘রোববার রাতেও আমার কলিজার টুকরো মেয়েটি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিল। রাতে কতবার চুমু দিয়েছে, তার হিসাব নেই। এরপর আর মায়ের (সায়মা) সাথে কথা হয়নি। আমার মেয়ে আর আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে না। এই কষ্ট আমি কিভাবে সহ্য করব?’

সায়মার মা রিনা বেগম বলেন, ‘প্রতিদিনই মেয়েকে আমি স্কুলে নিয়ে যাই। কিন্তু গতকাল যাইনি। আমার এক ভাই সায়মাকে স্কুলে নিয়ে যায়। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সায়মা আমাকে বলেছিল, আম্মু আমি স্কুলে যাচ্ছি, টাটা, বাই বাই। এটাই যে আমার মেয়ের সাথে শেষ কথা ছিল বুঝতে পারিনি। সায়মার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে চিকিৎসক হবে, মানুষের সেবা করবে। দুপুরে ফেসবুকে জানতে পারি, আমার মেয়ে দুর্ঘটনায় মারা গেছে।’ এসব বলে মা রিনা বেগম বিলাপ করে কাঁদছেন। আশপাশের প্রতিবেশী নারীরাও তাকে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন।

‘তুই আমার কলিজা, তুই আমার জান। প্রতিদিন আমরা একসাথে স্কুলে যেতাম। এখন আমি কাকে নিয়ে স্কুলে যাব? তুই কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলি? আমি তোকে ছাড়া বাঁচব না,’ সায়মা আক্তারের লাশ দেখে কান্নায় চোখের পানি মুছতে মুছতে তার বড় ভাই সাব্বির হোসেন এসব বলছেন। সাব্বির একই বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর এসএসসি পাস করেছেন।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় জামে মসজিদের মাঠে জানাজার পর সায়মার লাশ বাড়ির উঠোনেই দাফন করা হয়।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews