বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক বলার পাশাপাশি দলটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা। এ কারণে ক্ষুব্ধ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু এমন বক্তব্য দেওয়ার দুই দিন পরও কৌশলগত কারণে এ ইস্যুতে প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে না দলটি। 
যদিও এ বক্তব্য বিএনপিকে খুশি করতে সিইসির কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে প্রকৃত অর্থে এটি ক্ষমতাসীনদের প্রতিক্রিয়া নয় বলে জানিয়েছেন নীতি-নির্ধারকরা।
ধারণা করা হচ্ছে, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এ মন্তব্যও কৌশলের অংশ। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত না নিয়ে প্রকাশ্যে কথা না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির সব পর্যায়ের নেতারা।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি কোনও নির্দেশনা দেননি শেখ হাসিনা। সিইসির বক্তব্য তাদেরকে ক্ষুব্ধ আর বিব্রত করে তুললেও প্রতিক্রিয়া দেওয়ার আগে ভাবা হচ্ছে অনেক কিছু।

জানা গেছে, গত ১৬ অক্টোবর ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ধানমণ্ডিতে সভাপতির কার্যালয়ে অনির্ধারিত একটি বৈঠক করেন। সেখানে সিইসির বক্তব্য নিয়ে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কিন্তু প্রকাশ্যে এমন প্রতিক্রিয়া না দেখানোর পরামর্শ দেন দলের সাধারণ সম্পাদক।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার বক্তব্য আমাদের ভেতরে ভেতরে আমাদের প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ করেছে, কিন্তু জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমরা কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি না। তাছাড়া আমরা সিইসিকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছি না।’

সংলাপে বসলে সিইসি আওয়ামী লীগেরও অনেক প্রশংসা করবেন বলে মনে করেন ফারুক খান। তার মন্তব্য— ‘জিয়াকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক বলে সিইসি বিতর্কিত বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু আমরা তাকে বিতর্কিত করতে চাই না। ইতিহাস জানে জিয়া ছিলেন কারফিউ গণতন্ত্রের প্রবর্তক। আমরা সংলাপে বসলে সিইসির এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাইবো।’

এ প্রসঙ্গে সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ’র ভাষ্য, ‘দলীয় সাধারণ সম্পাদক আমাদের এ বিষয়ে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। আমরা বুধবার (১৮ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসছি। এর আগে কোনও মন্তব্য করে পরিবেশ নষ্ট করতে চাই না।’

তবে দলটির নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, সিইসি কেন এ ধরনের বক্তব্য দিলেন সেই বিষয়ে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছে। এগুলোতে উঠে এসেছে— বিএনপির ওয়েবসাইট থেকে ধারণা নিয়ে সেই আলোকেই জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বলে বক্তব্য দিয়েছেন সিইসি। নিজের এই কথা রাজনৈতিকভাবে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে তা ভাবেননি তিনি।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, ‘আমরা খবর নিয়ে দেখেছি— প্রত্যেক দলের সঙ্গে সংলাপের আগে তাদের ওয়েবসাইট ঘুরে বক্তব্য প্রদানের ধারণা নিয়েছেন সিইসি। বিএনপির বেলায়ও তিনি একই কাজ করেছেন। তাদের ওয়েবসাইট ঘেঁটে তিনি যা পেয়েছেন সেই অনুযায়ী ধারণা নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন।’

দলের নীতি-নির্ধারকরা আরও বলেন, “আমরা এখনও মনে করছি না সিইসি কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে বলেছেন। আমরা মনে করি, এটা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অনিচ্ছাকৃত ভুল। সংলাপে বসার আগে আমরা এর ব্যাখ্যা চাইবো সিইসি’র কাছে। আশা করি, আমরা তার কাছ থেকে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পেয়ে যাবো।”

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “সিইসি’র এই বক্তব্য ইচ্ছাকৃত হয়ে থাকলে তিনি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার চেয়ে বড় অপরাধ করেছেন।”

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে সিইসির আরেকটি বক্তব্য বিতর্কিত ছিল বলে এখন মনে করা হচ্ছে। কেএম নুরুল হুদা তখন বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে কুমিল্লা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।’ আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা বলেন, ‘আমরা তার ওই বক্তব্য তখন আমলে নিইনি। এবারের বক্তব্যকেও এখনও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি না। তবে তার এমন কথা আমাদের দলের অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি বিএনপিকে উজ্জীবীত করেছেন। একইসঙ্গে ইতিহাসের বিকৃতিও হয়েছে।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews