ক্ষমতার বাইরে গেলে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে জবাব দিতে হবে বলে ক্ষমতাসীন দলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘যিনি বলছেন বা যে দল এটা (রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প) করছেন, এরা রাষ্ট্রবিরোধী, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। তার জবাব হয়তো তাদের ক্ষমতায় থেকে দিতে হচ্ছে না, কিন্তু ক্ষমতার বাইরে গেলে এদেরকে প্রতিটি মানুষের কাছে জবাব দিতে হবে। এরকম কাজ তারা(সরকার) করতে পারে না। এটা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি নয়।’

রামপালেই বিদ্যুৎ প্রকল্প হবে- প্রধানমন্ত্রীর এরকম বক্তব্য ‘রাষ্ট্রবিরোধী কাজ’ বলে মন্তব্য করেছেন খালেদা জিয়া বলেন, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে দেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে।
 
শনিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের পর রাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এই মন্তব্য করেন।
 
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উদ্যোগে শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সম্মানে এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান হয়।
 
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি তো বলিনি, দেশে বিদ্যুৎক্ন্দ্রে হবে না। আমি বলেছি, সুন্দরবনের কাছে বিদ্যুৎ প্রকল্প না করতে। বাংলাদেশে তো অনেক জায়গা আছে, সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে পারে।' 
 
অনুষ্ঠানে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভবামত সংঘ (ইসকন), গৌরীয়া মঠ, গুলশান পূজা মন্দিরসহ বিভিণ্ন মঠ-মন্দিরের পুরোহিত ও নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। এছাড়া গাজীপুর, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার থেকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নেতাকর্মীরাও অনুষ্ঠানে ছিলেন।
 
রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্প সরিয়ে নিতে গত বৃহস্পতিবার গুলশানে সংবাদ সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সেদিন সুন্দরবন নিয়ে আমার বক্তব্যে উনার (প্রধানমন্ত্রী) গায়ে লেগেছে। উনার গায়ে বেশি জ্বালা ধরেছে বলে আজকে উনি বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু উনি বলুক যে, আমি যেসব তথ্য দিয়েছি, তা ভুল কি মিথ্যা। সেটা আগে বলুক। কোনও তথ্য ভুল নয়। এই তথ্য দেয়ার পরও যদি রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়, তাহলে দেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। আমাদের সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। সেখানে হিন্দুই বলেন বা মুসলমানই বলেন, কেউ বসবাস করার অবস্থায় থাকবে না।’ 
 
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ যেসব কাজ করছে, তা দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ। আরো কিছু কাজ তারা করছে, যেগুলো আমি পরবর্তীতে জাতির সামনে তুলে ধরব। এরকম অনেক কাজ আমরা দেখাতে পারবো।
 
বর্তমান সরকারকে ‘অবৈধ’ অভিহিত করে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, এরা অনির্বাচিত সরকার। এখন দেশটাকে বাঁচানোর জন্য, নিজেদের বাঁচানোর জন্য, নিজেদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এই সর্বনাশ থেকে এরা যে আরো ক্ষতিকর কাজ হাতে নিয়েছে ওইসবের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সকলে ঐক্যবদ্ধ হলে এরা ওই কাজ থেকে সরে যেতে বাধ্য হবে।
 
ভারতের এনটিপিসি কোম্পানির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এই ভারতের কোম্পানি বিভিন্ন জায়গায় করতে চেয়েছে, কিন্তু প্রত্যেক জায়গায় তারা বাধা পেয়েছে। সেদেশের জনগণ নিজেদের কথা চিন্তা করে প্রতিরোধ করেছে। মানুষের ভোটে সেদেশের সরকার নির্বাচিত হয়েছে বলে তাদের প্রতি সম্মান করে সেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতে তিন জায়গায় হয়েছে, তিন জায়গায়ই বন্ধ করা হয়েছে। আর সেই জিনিস (প্রকল্প) বাংলাদেশে করা হচ্ছে। এর ফলে আমাদের দেশের দক্ষিণের সব জেলা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
 
জঙ্গি প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের নানা অপকর্ম থেকে জনদৃষ্টি সরিয়ে দিতেই এখন শুরু হয়েছে জঙ্গি জঙ্গি। কিছুদিন আগে গুলশানের হলি আর্টিজেন বেকারিতে ঘটনা ঘটলো, এটারও কিন্তু তদন্ত সেরকম কিছু হয়নি। জনগণের কাছে পরিষ্কার করেনি, কে জড়িত, কিভাবে ঘটনাটি ঘটলো। কোনো কিছু জনগণের কাছে পরিষ্কার নয়। এটা যেতে না যেতে কিছুদিন পরে দেখা গেলো আরেকটা ঘটনা কল্যাণপুরে। সেটার ছবি  পত্রপত্রিকায় দেখেছেন। সবাই মারা গেলো এরা অল্প বয়েসি শিক্ষিত ইয়াং ছেলেপেলে। এটা বুঝাই যায় যে, এটা সাজানো ঘটনা। কিন্তু যে কথাটা তারা (সরকার) বলতে চায়, আমরা জঙ্গি নির্মূল করার জন্য তাদের হত্যা করেছি। আমরা বলবো, আজকে কেনো সত্যিকারের জঙ্গি ধরে, তাদের জীবিত কেনো ধরা হলো না? জীবিত ধরা হলে সত্যিকারের তথ্য পাওয়া যেতো তাদের কাছ থেকে।
 
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আজ পর্যন্ত সত্যিকারের কোনো জঙ্গি ধরেনি। সবাইকে বলেছে এই জঙ্গি, অমুক জঙ্গি, অমুক সন্ত্রাসী, কাউকে ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলা হয়েছে। এসব করে তারা খুব বাহাবা নেয়। কিন্তু এসব কী আসলে সত্যি জিনিস, এসব কি আসলে বিশ্বাসযোগ্য জিনিস। আমাদের প্রশ্ন, কেন আমাদের পুলিশবাহিনী ধরতে পারবে না? 
 
খালেদা জিয়া বলেন, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জঙ্গি বলে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেবে, মাথাব্যাথা হলে মাথা কেটে ফেলতে হবে। এটা হতে পারে না। অথচ আওয়ামী লীগের লোকজন সন্ত্রাসী যারা ধরা পড়ছে, তাদের লোকজন পুলিশ অফিসারকে মারে, তাদের ধরা হয় না। তাদের একজনকেও কোনো বিচার হয়নি, শাস্তি দেয়া হয়নি। এটা কেনো হচ্ছে। আইনের দুইভাবে প্রয়োগ হচ্ছে।
 
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জঙ্গিদের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাইখ আবদুর রহমান ও বাংলাভাইকে জীবিত ধরে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেয়ার কথাও বলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
 
সংগঠনের সভাপতি গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সঞ্জিব চৌধুরী, বিজন কান্তি সরকার, রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী মৃদুল মহারাজ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুন্ড, নিতাই চন্দ্র ঘোষ, নুকুল চন্দ্র সাহা, অমেন্দু দাশ অপু, রমেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, নিপুন রায় চৌধুরী প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, রুহুল আলম চৌধুরী, চেয়ারপারসসের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বদরুজ্জামান খসরু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews