গত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। দীর্ঘ ঈদের ছুটির সাথে আরও কিছুদিন নৈমিত্তিক ছুটি মিলিয়ে বেশ বড় একটা সময় এবার গ্রামের বাড়ি অতিবাহিত হয়েছে। দীর্ঘ এক বছর পরে এবার গ্রামে যাওয়া। বলে রাখা ভালো, আমাদের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নাটানা গ্রামে। গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে জেলা শহরের সাথে সংযোগকারী পিচ ঢালাই প্রশস্ত রাস্তা। এই রাস্তার দুইপাশে যতদূর চোখ যায় চিংড়ি ঘের। সবুজে শ্যামলে ঘেরা গ্রাম বাংলার এই দেশে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটের জেলা তিনটির উপকূলীয় উপজেলাগুলোর চিত্রপট পুরোপুরি ভিন্ন। আমাদের এলাকাটি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়। কেননা, সবুজের আধিক্য নেই। বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী হওয়ায় অতিমাত্রায় লবণাক্ততার প্রভাবে সবুজ অরণ্য টিকে থাকা দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। তারপরেও বসতবাড়ির আশাপাশে মানুষ কিছুটা গাছাগাছালি লাগাতে চেষ্টা করে। যাইহোক দূরন্ত শৈশব, কৈশর কেটেছে এই গ্রামে। তাই নিজ গ্রাম অধিকতর ভালো লাগার জায়গা। সেই অনুভূতি থেকে গ্রামকে বারংবার মিস করি। গ্রামের মানুষগুলোর সহজ-সরল জীবনযাত্রা ও সাধারণ চলাফেরা বেশ ভালো লাগে। কিন্তু গ্রামের মানুষের দুর্বিষহ জীবনযাত্রার মান মনকে কাঁদায়।
জেলা শহরের ঢাকাগামী পরিবহন থেকে নেমে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা (ইজিবাইক) করে বাড়িতে রওনা হই। গ্রামের সাথে জেলা শহরের পিচ ঢালাই রাস্তায় বাস চলাচল করলেও তাদের সার্ভিসের বেহাল দশার কথা ভেবে ওই লাইনের বাসে ওঠা থেকে বিরত থাকি। গ্রামের ছেলে দীপঙ্কর, ওকে একটা ফোন করলেই হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও সে আমাদের প্রতিনিয়ত বাড়ি থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ইজিবাইকে আনা-নেওয়া করে। বেশ রিলাক্সে এবং গল্পসল্প করতে করতে প্রায় ৩০ কি.মি. পথ আমরা পাড়ি দেই। কোথাও ভ্রমণ পথে প্রকৃতি দেখতে দেখতে যাওয়ার ভিতরে আলাদা একটা মজা আছে। এগুলো মূলত উপভোগ করার উদ্দেশ্য থেকেই ইজিবাইককে বেছে নেওয়া। যাইহোক, এবারও সময়মত দীপঙ্কর ইজিবাইক নিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সকাল ১১টার দিকেই আমরা পরিবহন থেকে নেমে ইজিবাইকে উঠলাম। সাতক্ষীরা থেকে যত দূরে যাচ্ছি ততই প্রকৃতির যে সবুজ সমারোহ সেটা কমতে শুরু করছে। সেইসাথে প্রকট হতে শুরু করছে চিংড়ি ঘেরের দৃশ্য। বলে রাখা ভালো, চিংড়ি ঘেরগুলো সাধারণত সমতল জমিতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রেখে সেখানেই চিংড়ি চাষ করা হয়। কেননা, চিংড়ি চাষে পানির গভীরতা কম লাগে। কিন্তু চোখে পড়ল অন্য এক ধরনের দৃশ্য। বেশিরভাগ চিংড়ি ঘের পানি শূন্য। গ্রীষ্মের দাবদাহে যেমন কিছু কিছু এলাকার মাটি শুকনো খটখটে হয়ে চৌচির হয়ে যায় ঠিক তেমনই। আমাদের উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের দৃশ্য আরও ভয়াবহ। একরের পর একর চিংড়ি ঘের মরুভূমির মতো পানির অভাবে খা খা করছে। এই অবস্থার কারণ খুঁজতে চেষ্টা করলাম।

কারণের মধ্যে যা যা পেলাম সেগুলো এমন ছিল, চিংড়ি ঘেরগুলো সাধারণত নদীর সাথে সংযুক্ত হতে হয়। নদীর জোয়ার ভাটার সাথে চিংড়ি ঘেরের পানির সংযুক্তি থাকতে হবে। অমাবস্যা এবং পূর্ণিমা তিথিতে অবশ্যই নদীর পানি চিংড়ি ঘেরে অনায়াসেই উঠানামা করার সুযোগ থাকতে হবে। এই ব্যবস্থার জন্য নদীর সাথে ছোট ক্যানেল করে ছোট বড় প্রতিটি চিংড়ি ঘেরের সাথে যুক্ত আছে। কিন্তু যুক্ত থেকে লাভ নেই। কেননা, নদীর জায়গায় নদী থাকলেও নদীতে পানি নেই। চিংড়ি ঘেরের মতো নদীও শুকনো খটখটে। যেখানে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতেও পানি ওঠে না। দখলদারদের দৌরাত্ম্যে অধিকতর সরু হয়ে যাওয়া এসব নদীতে অধিকতর পলি জমা হতে হতে এখন আর পানি প্রবাহের মতো জায়গাটুকুও নেই। যেখানে বড় নদী থেকে শাখা নদীতে পানি আসে না, সেখানে চিংড়ি ঘেরে পানি পৌঁছানোর আশা করাটা ভুল। আর সে কারণেই চিংড়ি ঘেরের এই বেহাল অবস্থা। বাগদা কিংবা হরিণা চিংড়ি দ্রুত বর্ধনশীল এবং এগুলো চাষ করতে লোনা পানির বিকল্প নেই। সেই লোনার মৌসুমে যদি চিংড়ি ঘেরে পানি না পৌঁছায় তাহলে সেখানে চিংড়ি চাষিদের অবস্থা কেমন হবে সেটা সহজেই অনুমেয়। এসব চিংড়ি ঘেরগুলো বর্ষা মৌসুমে সামান্য পানি পেলেও তখন পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ কমে যায়। এজন্য চিংড়ি চাষের জন্য বর্ষার পানি উপযুক্ত নয়।

সাধারণত চিংড়ি ঘেরে পানির গভীরতা ৩-৫ ফুট হতে হয়, তবে ৫ ফুট উত্তম। ঘেরের পানির গভীরতা বেশি হলে পানির বিভিন্ন গুণাগুণ যেমন: পিএইচ, তাপমাত্রা, দ্রবীভূত অক্সিজেন দ্রুত পরিবর্তন হয় না। অপরদিকে অল্প গভীরতার ঘেরে, অধিক তাপমাত্রায় পানির পিএইচ, তাপমাত্রা, দ্রবীভূত অক্সিজেন দ্রুত তারতম্য ঘটে। ফলে চিংড়ি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বাড়ে। কম গভীরতায় ঘেরে শ্যাওলা হয় এবং পরে তা পচে ঘেরের তলায় ক্ষতিকারক গ্যাস হয়। যেগুলো চিংড়ি চাষের অন্তরায়। অল্প পানি থাকলে সূর্যের তাপে এই পানি অধিকতর গরম হয়ে যায়, চিংড়ির জন্য যে তাপ সহনশীল নয়। এলাকার কিছু কিছু ঘেরে স্যালো মেশিন দিয়ে অন্য জলাশয় বা নদী থেকে পানি তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। কিন্তু চিংড়ি বড় হওয়ার বা ধরার উপযুক্ত হওয়ার বেশ আগেই বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। চিংড়ি চাষিদের এই দুর্বিষহ জীবন দেখলে বড় অসহায় লাগে। যেখানে সর্বস্ব দিয়ে দু’টো পয়সা পাওয়ার আশায় তারা দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছে, সেখানে নানান ধরনের অব্যস্থাপনা তাদের জীবনকে কষ্টের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। চিংড়ি চাষে চাষিদের লাভ তো দূরের কথা বিনিয়োগকৃত টাকার অধিকাংশই তারা পায় না। এজন্য তারা দিনাতিপাত করতে হিমশিম খায়। সেইসাথে বছরে বারংবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের থাবা তো আছেই। নানান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চিংড়ি চাষিদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। যাইহোক সকল দৃশ্য অবলোকন করে এবং তাদের নিজেদের মুখে দুর্বিষহ কঠিন বাস্তবতা শুনে নিজের কাছে খুবই খারাপ লাগল।

গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে খাবার পানির সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা করা আছে। এই পানির বিল দিতে হয় প্রতিমাসে ব্যবহৃত পানির পরিমাণ দেখে। এজন্য প্রতিটি বাড়িতে পানির মিটার লাগানো আছে। এটি মূলত গভীর নলকূপের মতো। সাপ্লাইয়াররা ভূগর্ভস্থ পানি উঠিয়ে তারপর সেটিকে গ্রামে গ্রামে সাপ্লাই দিয়ে থাকে। যেখানে প্রতিটি পরিবারের জন্য শুধু খাবার পানি বাবদ কমপক্ষে মাসে ৫০০ টাকা বিল আসে। সাপ্লাইকারীদের ভাষ্যমতে, ওই পানি নাকি ল্যাব টেস্ট করা এবং পানের পুরোপুরি উপযোগী। এই বিষয় নিয়ে যদিও আমার দ্বিমত আছে, তবুও এটা ভেবে শান্তি যে অন্তত টাকার বিনিময়ে হলেও খাবার পানির সমস্যার সমাধান হচ্ছে। তবে পূর্বে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা থাকলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। পানি সাপ্লাইয়ের দিন এবং সময়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন দেখলাম, একদিন পর পর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পানির সাপ্লাই দিচ্ছে। এটারও কারণ খোঁজার চেষ্টা করলাম। সাপ্লাইয়ারদের ভাষ্যমতে, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, বিদ্যুতের ঘাটতি এবং আশানুরূপ লাভ না পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে অনেকের সমস্যা হলেও এখন গ্রামের অধিকাংশ মানুষ খাপ খাইয়ে নিয়েছে। পানি সংরক্ষণ করে পরবর্তী দিনের ব্যবহারের জন্য রেখে দিচ্ছে।

গ্রামের পাশেই বাজার। সেখানে গেলে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে কথা হয়। অনেকের থেকে বারবার অনুরোধ এসেছে এগুলো নিয়ে কিছু একটা করার। উপযুক্ত সমাধান বের করার। আমাকে শিক্ষিত এবং মুরুব্বি গোছের অনেকেই বলেছেন, ‘তুমিতো গবেষণা করো, আবার পত্রিকায়ও লেখো। তোমার গবেষণা দিয়ে এবং পত্রিকায় লিখে সরকারের নজর আমাদের এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের দিকে একটু দিতে বলো’। আমি তাদের কথা শুনেছি, কিন্তু সমস্যার সমাধানের বিষয়ে কথা দিতে পারেনি। বলেছি, আমার গবেষণার বিষয় ভিন্ন, তবে আমি চেষ্টা করব এগুলো নিয়ে লেখার। আগেও লিখেছি আবারো লিখব। আমার মতো অনেকেই লিখেছেন। সমস্যা সমাধানের অনেক পন্থা দিয়েছেন কিন্তু তাতে তেমন কোনো আশানুরূপ ফল আসেনি।

একথা অনস্বীকার্য যে, নদীর পানি দূষণ, নদীতে শিল্প বর্জ্যের আধিক্য, ভারী ধাতুর উপস্থিতি, দক্ষিণবঙ্গের লবণাক্ত এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তনে করণীয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি ও প্রতিরোধে করণীয়, চিংড়ি চাষে করণীয়, চিংড়ি’র রোগ বালাই নিরসনে পদক্ষেপ, খাবার পানি সংকট নিরসনে করণীয়, আর্সেনিক দূষণের উপস্থিতি এবং মানুষের দেহে তার ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে বা হচ্ছে। আগামীতেও হবে। ভালো মানের উচ্চ পদমর্যাদার আন্তর্জাতিক জার্নালে এসব গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তাতে আদৌ কোনো লাভ হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। পানি দূষণ, বায়ু দূষণ, ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের ভয়াবহতাসহ দেশের প্রায় সব নদীর পানি নিয়ে গবেষণা হয়েছে বলে আমার মনে হয়। কিন্তু সেই গবেষণার ফলকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে অবশ্যই সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি। দূষণ রোধ বা সমস্যা সমাধানে বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে হবে। এই বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট গবেষকদের সাথে বিভিন্ন দপ্তরের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত মত বিনিময় করতে হবে। সমস্যা সমাধানে করণীয় বিষয়ে সুদৃঢ়, দীর্ঘস্থায়ী এবং টেকসই ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু সেগুলোর উদাহরণ বাস্তবে ক্ষীণ। শুধুমাত্র গবেষণা পত্রের মধ্যে দূষণের ভয়াবহ মাত্রা লিপিবদ্ধ হলেই হবে না। এগুলো বাস্তবিক জীবনে প্রয়োগ দেখাতে হবে।

প্রায়শই পত্রিকায় শিরোনাম হয়, ঢাকা শহরের আশপাশের নদীসমূহের পানির মাত্রারিক্ত দূষণ নিয়ে। শিরোনাম হয় ঢাকা শহর বায়ুদূষণের শীর্ষে অবস্থান নিয়ে। শিরোনাম হয় বসবাসের অযোগ্য শহরের শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা নিয়ে। যানজটের দুর্বিষহ ভয়াবহতা নিয়ে। বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে তার ভয়াবহতা নিয়ে। কিন্তু শিরোনাম হলেই কি হয়ে গেল? এগুলো নিরসনে কি কোনরকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? দূষণের মাত্রারোধে কি বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? সংশ্লিষ্ট গবেষকদের সাথে সমস্যা সমাধান নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে? এসব বিষয় অবশ্যই অধিকতর গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত। যেকোন দুর্যোগ বা ভয়াবহতা ঘটে যাওয়ার পরে আফসোস করার চেয়ে সেগুলো প্রতিরোধের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়াটাই কাম্য। ঘটনা ঘটার পরে বিভিন্ন দপ্তরের উপর দোষ চাপানোর চেয়ে পূর্ব থেকে সকল দপ্তরের সমন্বয়ে সেগুলো মোকাবেলা করার যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়াটা জরুরি।

আমাদের ভূখ-ের অতি সম্ভাবনাময় দক্ষিণবঙ্গের অঞ্চলগুলো দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। খাবার পানির সঙ্কট নিরসনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের নিশ্চয়তা করতে হবে। প্রয়োজনে বৃষ্টির পানি বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে সেটা সারা বছর পানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পলি জমাট হয়ে ভরাট হয়ে যাওয়া নদীগুলো দ্রুত খনন এবং সংস্কারের কাজ শুরু করতে হবে। দেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী এই সম্পদ যাতে বিনষ্ট না হয় এজন্য চিংড়ি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করতে হবে। বাজারজাতের আগেই চিংড়ি মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করতে চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রগুলোর যথেষ্ট ভূমিকা পালন করতে হবে। এ উদ্দেশ্য সাধনে চিংড়ি চাষিদের বিভিন্ন এনজিও এবং উপজেলা মৎস্য বিভাগের সহায়তায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। হোয়াইট গোল্ড খ্যাত এই অর্থকরী সম্পদ দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশি মুদ্রা অর্জনেও ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। এই সম্পদকে রক্ষা করার জন্য মৎস্য গবেষকদের এগিয়ে আসতে হবে। সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য পানি নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তাদের দৃঢ় ভূমিকা নিতে হবে। এছাড়াও উক্ত এলাকাসমূহে লবণাক্ত সহনশীল কৃষি চাষাবাদ নিয়ে কৃষিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। সকল সেক্টরের গবেষকদের সমন্বিত সুদূর প্রসারী চিন্তাভাবনা ও মেধাশক্তি এক্ষেত্রে ভালো ফল দেবে। বিশেষ ক্ষেত্রে এলাকার ভুক্তভোগী কিছু গবেষকের সমন্বয় করা যেতে পারে। বিভিন্ন এনজিও এর সাথে মিলেমিশেও এসকল সমস্যার সমাধানে ভালো ফল আশা করা যায়। তবে এসকল কিছুর শুরুতে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন, গবেষণা মাঝপথে গিয়ে থেমে না যায়। এজন্য গবেষণায় বরাদ্দের বিষয়টি অতীব জরুরি। এক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যেমন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মৎস্য, কৃষি, অর্থ, পরিবেশসহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। তবেই এই সমস্যাগুলোর টেকসই সমাধান আশা করা যায়।

কবি সুকান্তের ‘ছাড়পত্র’ কবিতার শেষের কয়েকটি পংক্তি দিয়ে শেষ করতে চাই। কবি লিখেছেন, ‘এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান; জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে চলে যেতে হবে আমাদের। চলে যাবÑ তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমিÑ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।’ সত্যিই কি আমরা এই অঙ্গীকার করছি! সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আমাদের এটি অন্যতম একটি নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যেখানে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে হলেও এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে রেখে যাওয়া একান্ত প্রয়োজন। সবার নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে গৃহীত সমন্বিত উদ্যোগই পারে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর, শস্য শ্যামলা, দূষণ ও শঙ্কামুক্ত পৃথিবী উপহার দেওয়া।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews