করোনার ঊর্ধ্বগতি রুখতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের বাকি তিন ধাপের ভোটের প্রচার সবাই কাটছাঁট করলেও বিজেপির হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি জনসভাও বাতিল করা হয়নি। শুধু মোদি নন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির শীর্ষ নেতা অমিত শাহসহ দলটির সর্বস্তরের প্রচার চলছে জাঁকজমকপূর্ণভাবে। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে বিজেপি বলছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আগের মতো সভা-সমাবেশ করা হবে।
পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতজুড়ে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বাম-কংগ্রেস জোট নির্বাচনী প্রচারসভা বন্ধ করেছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বাতিল করেছেন রাজ্যের সফরসূচি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, কলকাতায় আর কোনো বড় সভা বা কর্মসূচি দেওয়া হবে না। তবে অপরিবর্তিতই থাকছে প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রচারসূচি। কলকাতাতেও সমাবেশ করবেন তিনি। বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে, এ সবই হবে করোনা বিধি মেনে। কারণ, তেমনটাই নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাকি তিন ধাপের ভোট এক দিনেই নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে নির্বাচনী নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কথা বলে তাতে সায় দেয়নি নির্বাচন কমিশন। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে একে একে বিজেপি ছাড়া সব দল প্রচার কাটছাঁট করার ঘোষণা দেয়। কারণ, ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।
এ অবস্থার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে ভোটের প্রচার চালিয়ে যাবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, দু'দিনে চারটি সমাবেশ করার কথা থাকলেও তা এক দিনেই করবেন তিনি। একই সঙ্গে প্রতিটি জনসভায় সামাজিক দূরত্ববিধি কঠোরভাবে মানা হবে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেই এই নির্দেশ এসেছে বলে গতকাল সোমবার এক টুইটে জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়।
বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এখন পর্যন্ত ১২ বার পশ্চিমবঙ্গ এসে ১৮টি জনসভা করেছেন মোদি। আগামী ২১ ও ২৪ এপ্রিল দুটি করে চারটি সমাবেশ করার কথা ছিল তার। বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগামী ২৩ এপ্রিল মালদহের বিএড কলেজ ময়দান, মুর্শিদাবাদের নর্দার্ন পার্ক, কলকাতার ভবানীপুর ও বীরভূমের সিউড়িত চারটি জনসভা করবেন তিনি। তবে এবার করোনাবিধি মানার ক্ষেত্রে আরও কঠোর হবে বিজেপি।
মোদির প্রচার নিয়ে একহাত নিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেছেন, 'ভারতীয়দের জীবনের চেয়ে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর প্রচার কি বড় হয়ে গেল?' ইয়েচুরি বলেন, 'কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত। একজন সাবেক সেনাপ্রধান একে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত, মুখ্যমন্ত্রীরা তাকে পাচ্ছেন না।'
তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটের ধাপ কমানোর প্রস্তাবে সাড়া না দিলেও এবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী ভোট পেছানোর দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার নির্বাচন কমিশনে পাঠানো চিঠিতে তিনি বলেছেন, 'রমজানের পর করোনার প্রকোপ কমলে ভোট হোক।' সোমবার পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে ভোটের প্রচারে যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মোদিকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, করোনার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। তবে মোদি তাতে চিন্তিত নন। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে টাকা দিয়ে টিকা কিনবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাতেও সাড়া দিচ্ছেন না তিনি। তবে তার দাবি মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতা শ্যামল রায়।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে এখনই লকডাউনের কোনো চিন্তা নেই। তবে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ভোটের নিরাপত্তায় রাজ্যে আসা কেন্দ্রীয় বাহিনীর সব সদস্যকে করোনা টেস্ট করাতে হবে।
করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে মমতা বলেন, 'নির্বাচন ঘোষণার সময় ভালো করে ভাবা উচিত ছিল এবং কেন্দ্রীয় সরকারেরও ভাবা দরকার ছিল।
অন্যদিকে রোববার পূর্ব বর্ধমানে নির্বাচনী জনসভায় অমিত শাহ অভিযোগ করেন, দিদি (মমতা) প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ মিনিট আমাকে ও প্রধানমন্ত্রীকে গালি দিচ্ছেন। আর দুই মিনিট কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে বিষোদ্গার করছেন। কারণ, তার হাতে উন্নয়নমূলক প্রচারের কিছু নেই।