‘গাঙের পানি আর হাওরের পানি হমান হমান। ইতার লাগি জালাবাইন (বীজতলায় চারা রোপণ) করতাম পাররাম না। দেরিতে জালাবাইন করলে দেরিতে ধান লাগানি লাগবো। এতে গতবারের মতো ইবারও ধান খাইবো পানিয়েই’– দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কথাগুলো বললেন সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের আব্দুল্লাপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক রজব আলী।
একই কথা জানান মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের কৃষক মতি মিয়া। তিনি বলেন, ‘আগন (অগ্রহায়ণ) মাস শেষ হইয়া যায়। এবোতরি (এখনও) হাওরের পানি কমের না। ইদিকে হাওরে পানি থাকায় বীজতলা রেডি করতাম পাররাম না। ইবারও দেরিতে রোয়া দেওয়া লাগবো।’
কেবল রজব আলী বা মতি মিয়াই নয়; পানিতে হাওরাঞ্চল তলিয়ে থাকায় বোরো চাষ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে সুনামগঞ্জের লাখো কৃষকদের মনে। এ জেলার সব হাওরে এখনও অথৈ পানি। কখন পানি কমবে আর কখন শুরু হবে বোরো চাষাবাদ, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষকরা।

অথৈ পানি হাওরে (ছবি- প্রতিনিধি)
সুনামগঞ্জে ছোট-বড় মিলিয়ে দুই শতাধিক হাওর রয়েছে। এসব হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য রয়েছে ৫৬টি স্লুইচ গেইট। কিন্তু পলিমাটি ভরাট হয়ে এসব স্লুইচ গেইটের বেশিরভাগই পানি নিষ্কাশনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে হাওর থেকে নদীতে পানি নামছে ধীরগতিতে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বিলম্বিত হচ্ছে বোরো চাষাবাদ।
কৃষকরা জানান, হাওরের পানি নিষ্কাশনের ওপর বোরো চাষাবাদ নির্ভর করে। পানি দ্রুত নেমে গেলে চাষাবাদ দ্রুত শুরু হয়। অন্যদিকে পানি দেরিতে নামলে চাষাবাদও বিলম্বিত হয়।
কৃষকরা আরও জানান, মেঘালয় পাহাড়বেষ্টিত সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় মার্চ মাসের শুরু থেকে এপ্রিলের শেষার্ধে পাহাড়ি ঢলের কারণে আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকে। ওই সময় আবার হাওরের ধান পাকতে শুরু করে। গত বছরের মার্চ মাসের শেষের দিকে পাহাড়ি ঢলে ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ১৫৪ হাওরের ফসলহানির ঘটনা ঘটে। আগাম বন্যায় ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমির বোরো ফসলের মধ্যে ১ লাখ ৬২ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার দেখার হাওর, চন্দ্র সোনার থাল, কালিয়াকোঠা হাওর, শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, হালির হাওর, পাগনার হাওর, খরচার হাওর, ছায়ার হাওরসহ দুই শতাধিক ছোট-বড় হাওরে পানি নিষ্কাশনের সমস্যা দেখা দিয়েছে।

স্লুইচ গেইট (ছবি- প্রতিনিধি)
কৃষকরা জানান, অন্য বছরগুলোতে এ সময় বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। এবার পানি না কমায় বীজতলা তৈরির সময় ১৫-২০ দিন পিছিয়ে গেছে। তাই বোরো আবাদও পিছিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাওরের পানি নিষ্কাশনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ৩০ লাখ টাকার বরাদ্দ দিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এড়িয়ে যান সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা। তারা জানান, এই জেলায় এখন নদী ও হাওরের পানির উচ্চতা সমান। তাই হাওর থেকে পানি নদীতে নামতে পারছে না। প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর নির্ভর করছে বোরো চাষাবাদ।
পানি নিষ্কাশন নিয়ে সুনামগঞ্জ পাউবোর (১) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া জানান, হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। জলাবদ্ধতা নতুন কোনও সমস্যা নয়। গত বছরও হাওরের পানি দেরিতে নেমেছে। এবারও তাই হচ্ছে। হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য পাউবোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সুনামগঞ্জ অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. জাহেদুল হক জানান, হাওরের পানি কমতে শুরু করলেই পুরোদমে বোরো আবাদ কার্যক্রম শুরু হবে। এ মুহূর্তে কৃষক পানি কমার জন্য অপেক্ষা করছে। জেলা কৃষি বিভাগ সবসময় বোরো চাষিদের পাশে রয়েছে। সবার প্রচেষ্টায় এবারও সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে কৃষক বোরো আবাদ করবেন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews