আমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়া বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানে ভয়াবহ দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভারতের এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (এএআইবি) ১৫ পাতার রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বোয়িং ৭৮৭ বিমানের ফুয়েল সুইচ ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ অবস্থায় চলে যায়, যার ফলে ইঞ্জিনে ফুয়েল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, বিমানটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভেঙে পড়ে।
এএআইবি রিপোর্টে উল্লেখ, দুর্ঘটনার ঠিক আগে ককপিটে ক্যাপ্টেন সুমিত সাবরওয়াল এবং ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্ডারের মধ্যে কথোপকথন হয়, যেখানে একজন অপরজনকে জিজ্ঞেস করেন কে ইঞ্জিনের ফুয়েল বন্ধ করেছিল। উত্তরে অপর পাইলট বলেন, ‘আমি করিনি’। এরপরই ‘মে ডে’ বার্তা পাঠানো হয় এটিসি-কে এবং মাত্র ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে বিমানটি মেডিকেল স্টুডেন্ট হোস্টেলের উপর ভেঙে পড়ে। জানা গেছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানে ২০১৯ ও ২০২৩ সালে থ্রটল কন্ট্রোল মডিউল (টিএমসি) পরিবর্তন করা হয়েছিল। তবে ২০১৮ সালে মার্কিন এফএএ যে পরামর্শমূলক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, তার ভিত্তিতে লকিং মেকানিজম পরীক্ষা করা হয়নি Ñ কারণ সেটি বাধ্যতামূলক ছিল না। মার্কিন বিশেষজ্ঞ শিয়াভোর দাবি, ‘বোয়িং ৭৮৭ একটি ইঞ্জিনে ওড়ার ক্ষমতা রাখে, কিন্তু ওই বিমানের ক্ষেত্রে দুটো ইঞ্জিনেরই ফুয়েল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, পুনরায় ইঞ্জিন চালু করার জন্য পর্যাপ্ত সময় বা উচ্চতা ছিল না।’
শিয়াভো জানিয়েছেন, এটা ‘বিমানের সফটওয়্যারের একটি বিপজ্জনক সমস্যা, যেটা আগে ঘটেছে এবং আবার ঘটতে পারে’। তিনি আরও বলেন, ‘এই রিপোর্টে যদি বোয়িং-এর সফটওয়্যারকে ক্লিন চিট দেওয়া হয়ে থাকে, তা হলে সেটা আন্তর্জাতিক তদন্ত নীতিমালার গুরুতর লঙ্ঘন। প্রথম দুর্ঘটনায় দোষ চাপানো হয়েছিল পাইলটদের উপর। কিন্তু গোপন সফটওয়্যার ত্রæটিগুলি তখন রয়ে গিয়েছিল। আর তাই দ্বিতীয়বারের মতো প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে।’ এই ঘটনায়, আন্তর্জাতিক মহলে বোয়িং ৭৮৭ মডেলের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্ত এখনো চলছে, তবে এই ধরণের সফটওয়্যার ত্রæটি যদি নিশ্চিত হয়, তবে গোটা বিমান শিল্পেই তা বড়সড় ধাক্কা দিতে পারে।
এদিকে, বুধবার ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান পাইলটস (এফআইপি) এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই ১৭১ দুর্ঘটনার প্রাথমিক অনুসন্ধান এবং জনসাধারণের মন্তব্য নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যা লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত হয়। একটি সরকারী বিবৃতিতে, এফআইপি বলেছে, ‘তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে পাইলট প্রতিনিধিদের বাদ দেওয়ার বিষয়ে আমরা আমাদের অসন্তোষ প্রকাশ করছি। প্রাথমিক প্রতিবেদনটি কীভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং জনসাধারণের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে তার প্রতিও আমরা দৃঢ়ভাবে আপত্তি জানাই।’ ফেডারেশন রিপোর্টটির সমালোচনা করেছে যে ব্যাপক তথ্যের অভাব রয়েছে এবং ‘নির্বাচিতভাবে ব্যাখ্যা করা ককপিট ভয়েস রেকর্ডিং’ এর উপর প্রচুর নির্ভর করা হয়েছে যা পাইলটের ত্রæটি নির্দেশ করে এবং বিমান ক্রুদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ‘এই পদ্ধতিটি উদ্দেশ্যমূলক বা সম্পূর্ণ নয়,’ এফআইপি বলেছে। ‘একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বচ্ছ এবং তথ্য-ভিত্তিক তদন্তের আগে দোষারোপ করা অকাল এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন। এই ধরনের অনুমানমূলক মন্তব্য উচ্চ প্রশিক্ষিত ক্রু সদস্যদের পেশাদারিত্বকে দুর্বল করে এবং তাদের পরিবার এবং সহকর্মীদের জন্য অযথা কষ্টের কারণ হয়,’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে।
ভারত সরকারও স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এটি একটি প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট এবং পূর্ণাঙ্গ ও চ‚ড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট আসতে আরও সময় লাগবে। ততদিন পর্যন্ত জনসাধারণ ও সংবাদমাধ্যমকে অনুমান-ভিত্তিক সিদ্ধান্তে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। উল্লেখ্য গত মাসে অ্যামেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে টেকঅফের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লন্ডনগামী এ ১৭১ বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এটি বিজে মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেল বিল্ডিংয়ে আছড়ে পড়ে। ঘটনায় বিমানে থাকা ২৪১ জন যাত্রী ও কর্মীসহ মোট ২৬০ জন প্রাণ হারান। সূত্র : টিওআই।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews