প্রচলিত আছে যে, বিখ্যাত সুন্দরী অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের প্রতি দুর্বল ছিলেন। তাই একদিন মনরো আইনস্টাইনকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন এইভাবে, ‘চলুন না, আমরা বিয়ে করে ফেলি! তাহলে আমাদের সন্তানেরা হবে সৌন্দর্য ও জ্ঞানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। ওরা দেখতে হবে আমার মত আর বুদ্ধিতে আপনার মত।

’আইনস্টাইন তৎক্ষণাৎ বললেন, ‘আর যদি উল্টোটা হয়? দেখতে যদি হয় আমার মত আর বুদ্ধিতে আপনার মত?

উল্লেখ্য, আইনস্টাইন মোটেও সুদর্শন ছিলেন না! প্রচলিত এই কাহিনীটি মনে পড়ল সম্প্রতি বাংলাদেশের দুই অভিনেতার কাণ্ড দেখে। ন্যূনতম কাণ্ডজ্ঞান থাকলে এজন্য মানুষের যা করা উচিত নয়, বাংলাদেশের দুই অভিনেতা তাই করেছেন।

রাষ্ট্রীয় বিধি ভঙ্গ করে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস এবং কোলকাতার জি-বাংলায় প্রচারিত একটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করা আবদুন নূরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

একজন বিদেশি নাগরিক হয়ে অন্য দেশের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে ভিসা আইনে ফেরদৌসের বিজনেস ভিসা বাতিল করেছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করে তাকে দ্রুত ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ফেরদৌস দেশে ফিরে এসেছেন। একইভাবে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের প্রচারে একটি রোড শো-তে অংশ নেন নূর। তিনি রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী, তৃণমূল নেতা মদন মিত্রের সঙ্গে প্রচারগাড়িতে ছিলেন। সেখান থেকে তাকে জনতার উদ্দেশে হাত নাড়তেও দেখা যায়। বিদেশি নাগরিক হয়ে অন্য একটি দেশের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ায় তাকেও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে।

নায়ক ফেরদৌস অন্য একটি দেশে গিয়ে তাদের আইন ভেঙ্গে যে অপরাধ করেছে, তার দায়ে ভারত সরকার কেবল তার ভিসা বাতিল করে দেশে ফেরার আদেশ দিয়েছে এবং তাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। ভারতের ভিসা আইনে এ জাতীয় অপরাধে ৫ বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানার বিধান আছে। সম্ভবত বাংলাদেশের প্রতি ঔদার্য্য দেখিয়ে ভারত সরকার ফেরদৌস ও নূরকে গ্রেপ্তার করেনি। তাদের কারণে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

প্রশ্ন হলো, কোন আবেগ থেকে তারা এমন নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিলেন? ফেরদৌস এবং নূর কেউ-ই দুধের বাচ্চা নন। এক দেশের নাগরিক যে আরেক দেশে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন না, এই সামান্য নাগরিক জ্ঞানটুকুও কি তাদের ঘটে নেই? নায়ক-নায়িকাদের বুদ্ধি-শুদ্ধি কি সত্যিই কম হয়?

এই ঘটনার দায় তৃণমূল কংগ্রেসও এড়াতে পারে না। তারাও ইদানীং চিত্রতারকাদের রাজনীতির মঞ্চে নামিয়ে, প্রচার-প্রচাপাগাণ্ডায় ব্যবহার করে রাজনীতিকে রীতিমতো ‘বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে’ পরিণত করেছে।

তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের বোধ-বুদ্ধি সত্যিই হতাশাব্যঞ্জক। এই দলে একজন নেতাও কি নেই, যিনি এই অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করেছেন, বিদেশি নায়কদের দিয়ে প্রচার চালানোর ঘটনায় আপত্তি জানিয়েছেন? তৃণমূলের এক জন নেতাও কি ব্যাখ্যা করে বলতে পারবেন উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে ফেরদৌস ও দমদমে গাজি আব্দুন নূরকে নির্বাচনী প্রচারে কেন নিয়ে এসেছিলেন তারা? ভারতে কি নায়ক-নায়িকার অভাব? কেন তাদের অভিনয়ের জন্য, নির্বাচনী প্রচারের জন্য বাংলাদেশ থেকে নায়ক-নায়িকা হায়ার করে নিয়ে যেতে হয়? তারা কি নির্বাচনকেও আইপিএল মনে করেছেন? আইপিএলে যেমন টাকার বিনিময়ে যে কোনো দেশের খেলোয়ারকে দলে টানা যায়, খেলানো যায়, নির্বাচনও কি তাই?

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিও ইদানীং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে কেমন যেন বিপথে যাত্রা করেছে। এখানে সব কিছুই কেমন যেন কম পড়ে যাচ্ছে বার বার। বোধ-বুদ্ধি-বিচার-বিবেচনা-জ্ঞান সবই কম পড়ে যাচ্ছে। হয়তো বা কম পড়ছে তারকাও। নইলে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রচারে বাংলাদেশের তারকাদের ঘুরে বেড়ানোর কোনও যথাযথ ব্যাখ্যা পাওয়া এককথায় অসম্ভব। তারকা ও জ্ঞান দুই-ই যখন কমতির দিকে, তখন যা হতে পারে এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ যেন তারই সাক্ষী।

নইলে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও এক জন নেতাও কি এক বার ব্যাখ্যা করে বলতে পারবেন উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে ফেরদৌস ও দমদমে গাজি আব্দুন নুরকে কেন নির্বাচনী প্রচারে নামিয়েছেন? একটি দেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অন্য দেশের কোনও ব্যক্তিকে শামিল করা যে কোনও ভাবেই সংগত নয়, আমাদের কি ধরে নিতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসের তাবড় নেতাদের এই জ্ঞানের সম্যক অভাব ছিল? অন্যথায় এর ব্যাখ্যা পাওয়াটা খুব দুষ্কর হয়ে উঠছে!

জলে তো কুমির থাকবেই। কিন্তু তাকে বাড়িতে ডেকে আনার জন্য খাল কাটে যে, তাকে আমরা নির্বুদ্ধিতার দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করাই। তৃণমূল কংগ্রেসের মতো একটি জাতীয় রাজনৈতিক দলকে এই রকম এক কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটাই বরং কর্তব্য বলে বিবেচিত হবে। প্রশ্নটা জাগে সেখানেই। তা হলে কি অন্য কোনও কারণ ছিল? উত্তর দিনাজপুরের মতো একটি সীমান্তবর্তী জেলায় বাংলাদেশের নায়ককে নিয়ে এসে প্রচার করানোর নেপথ্যে ভিন্নতর কোনও এক রসায়ন কাজ করেছে, কর্পোরেট জগতে যাকে বলে টার্গেট গ্রুপ কেন্দ্রিক বিশেষ কোনও পরিকল্পনা?

ভাবনার পেছনে যা-ই থাকুক না কেন, বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশি তারকাদের ময়দানে নামিয়ে মোটেও ভালো কাজ করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। স্বখাত সলিলের এর চেয়ে বড় নিদর্শন অধুনা খুব কমই দেখা গিয়েছে।

বাংলাদেশে ফিরে তুমুল বিতর্কের মধ্যে ফেরদৌস ক্ষমা চেয়েছেন। বলেছেন, আবেগের বশে সহকর্মীদের সঙ্গে প্রচারে অংশ নিয়ে বড় একটা ভুল করে ফেলেছেন। কিন্তু এই ক্ষমা চাওয়াই কি যথেষ্ট?

তিনি কি অবোধ শিশু, যে লজেন্সের লোভ দেখিয়ে তাকে পাটক্ষেতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে? এইটুকু কাণ্ডজ্ঞান কিংবা নাগরিক জ্ঞান যদি না থাকে, তবে তারা কিসের সাবালক? আবেগ মানুষের অবশ্যই থাকবে, কিন্তু কাণ্ডজ্ঞান বিসর্জন দিয়ে তো আর আবেগ নয়!

পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের কাছেও আমাদের প্রশ্ন, আপনাদের মধ্য থেকে কেউ বলবেন কি, ফেরদৌস এবং নূরকে প্রচারকাজে ব্যবহারের সিদ্ধান্তের পেছনে কোন আবেগ কাজ করেছিল? রাজনীতি কি আপনাদের কাছে ছেলে-খেলা? আইপিএল ম্যাচ? এমন অপরিণামদর্শী রাজনীতি দিয়ে আপনারা জনকল্যাণ করবেন? মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবেন?

আমাদের সরকারের উচিত ফেরদৌস এবং নূরকে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার দায়ে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তির বিধান করা। নাহলে ভবিষ্যতে আরও আরও ফেরদৌস-নূররা এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস পাবে।

জনপ্রিয়তার মোহে স্থান-কাল-পাত্র এমনকি রাষ্ট্রবিজ্ঞান ভুলে যাওয়াটা যে অন্যায়-এটা প্রত্যেকেরই বোঝা উচিত!

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews