হতাশা, দুর্দশা এবং দুশ্চিন্তার যেন অন্ত নেই সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের। শেখ পরিবারে যাকে নিয়ে গর্ব ও গৌরবের শেষ ছিল না তার আজ ত্রাহি অবস্থা। নেটিজেনরা বলছেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের নৃশংস ও জঘন্য পারিবারিক সব অপরাধের ফল যে এটি, তাতে কারোর সন্দেহ নেই।

সম্প্রতি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি টিউলিপের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে চেহারায় চরম দুশ্চিন্তা, হতাশা ও দুর্দশার ছাপ দেখা যাচ্ছে। ছবিটি অনেকেই শেয়ার করে নানা মন্তব্য করেছেন।

ছবিতে তাকে সম্ভবত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের কার্যালয়ের গেটে অপেক্ষমাণ দেখা যায়। পরনে ছিল হাফ প্যান্ট।

টিউলিপকে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ মাথায় নিয়ে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি)-এর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। মন্ত্রী হিসেবে দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি দমনের দায়িত্বে থাকলেও খালা হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই দুর্নীতি ও লুটপাটের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। আর সেই পাপের ফল তাকে আজ অনিবার্যভাবে ভোগ করতে হচ্ছে।

২০১৩ সালে মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার খালার বৈঠকের ছবিতে টিউলিপকে দেখা যায়। তিনি কোন প্রোটকলে পুতিনের সাথে দেখা করেছিলেন তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রশ্ন রয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে টিউলিপ মধ্যস্থতা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার মাধ্যমে এ প্রকল্প থেকে তার পরিবারের সদস্যরা অর্থ আত্মসাতের সুযোগ পেয়েছেন।

মূলত মা ও খালার কারণেই ডুবতে হয়েছে মুজিবের নাতনি টিউলিপকে। টিউলিপ সিদ্দিক হলেন বাংলাদেশে গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত দীর্ঘপ্রলম্বিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে।

ইউনিভার্সিটি লন্ডন কলেজের (ইউএলসি) শিক্ষার্থী নওশীন নুর ঐশ্বর্য্য ছবিটি প্রথম শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘দুই ঘণ্টা ধরে Tulip Siddiq এর রাজনৈতিক ভণ্ডামি নিয়ে আলোচনা করলাম। Universe replied instantly, and on my way back I ran into her outside Keir Starmer’s office. লন্ডন বড়ই আজব জায়গা।’’

নওশীনের পোস্টটি ফেসবুকে ‘‘আহহা! বিরস নয়নে দাঁড়ায়ে দুয়ারে...’’ ক্যাপশনে শেয়ার করেছেন আলোচিত প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের।

নেটিজেনরা টিউলিপের এমন দশা নিয়ে লিখেছেন, পলাতক হাসিনার চুন্নী ভাগ্নির বর্তমান অবস্থা! যে দরজা একসময় খোলা থাকতো প্রতীক্ষায় - এখন দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়! চেহারা দেখলেই বুঝবেন আগের দিন-আর নাই!

সব দোষ বেচারির খালার, ওর খালার জন্যই ওর এবং আজ হাজার হাজার আওয়ামী পরিবারের সংসারে অশান্তির আগুন বয়তেছে আহ কি নির্মম পরিহাস। এরা সারা জীবন এই দেশ‌কে ধর্ষণ করার ক্ষেত্র ম‌নে ক‌রে‌ছে, কখ‌নো ভা‌বে‌নি নি‌জেরা তা হ‌বে!

আবার কেউ কেউ লিখেছেন, তারা না হত‌ে প‌েরেছ‌ে দ‌েশী না হত‌ে প‌েরেছ‌ে ব‌িদ‌েশী। মূল জ‌োর করে পরিবর্তন করত‌ে গ‌েল‌ে বড্ড ব‌েমানান দ‌েখায়।বাংলাদেশের প্রতি তাদের কোন ভালোবাসা নাই। শুধু একটাই আছে এখান থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পূর্ণ জীবন যাপন করা।

এদিকে, কয়েকদিন আগে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়ে বিশ্বের মুসলিম সমাজের কাছে আরও ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয় হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক। গাজায় ইসরাইলি অভিযানের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করার কারণে সে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দেয়।

এদিকে, টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লটুপাটের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ সুবিধা নিয়ে ঢাকার গুলশানে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গত এপ্রিলে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের ভাষ্য, সরকার থেকে ইজারা নেওয়া জমিতে জালজালিয়াতির মাধ্যমে এই ভবন তৈরি করা হয়। সেই ভবন থেকে অবৈধভাবে ফ্ল্যাট দখল করেন টিউলিপ সিদ্দিক।

এছাড়া, খালা হাসিনার দুর্নীতির মাধ্যমে খোদ বৃটেনের বহু ব্যয়বহুল লোকেশনে বাড়ি ফ্ল্যাট উপঢৌকন হিসেবে টিউলিপ অবৈধভাবে ব্যবহার করেছেন দীর্ঘদিন। এ ব্যাপারে বৃটেনে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান। টিউলিপ নিজেকে একজন ব্রিটিশ নাগরিক ও এমপি দাবি করলেও বাংলাদেশ সরকারের তদন্তে তার এনআইডি প্রকাশ্যে আসে।

বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে মধ্যস্থতার বিনিময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ওঠে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধেদুদকের দুর্নীতির তদন্তে উঠে আসে তার নাম। বরাবর অভিযোগ অস্বীকার করে আসলেও, যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলের চাপে নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের অনুমতি দেন যুক্তরাজ্যের এই সিটি মিনিস্টার। দুদকের তদন্তে টিউলিপের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগের প্রায় সবগুলোতেই তার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে।

এখানেই শেষ নয়, এরপর একের পর এক ব্রিটিশ মিডিয়ার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশ পেতে থাকে টিউলিপের অনিয়মের খবর। ফাইনান্সিয়াল টাইমসের খবর, আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ আবাসন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট নিয়েছেন তিনি। তার বোনের নামেও বিনামূল্যে আরও একটি ফ্ল্যাট নেয়ার খবর প্রকাশ হয় আরেকটি মিডিয়ায়।

দ্য টাইমস জানায়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা ছড়ানো থিংকট্যাঙ্কের সাথেও যুক্ত টিউলিপ। আর দ্য গার্ডিয়ানে দাবি, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারে সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগীদের একজন টিউলিপ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যানুযায়ী, আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য ও ইইউ লবিং ইউনিট এবং নির্বাচনী কৌশল দলের হয়েও কাজ করেছেন লেবার পার্টির এই নেতা।

ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগে বেশ চাপে পড়েন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার। যদিও প্রধানমন্ত্রী এতদিন টিউলিপের পাশেই ছিলেন। বিরোধীদল থেকে ক্রমেই যখন জোরালো হচ্ছিল পদত্যাগের দাবি তখন টিউলিপ নিজেই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। জানিয়েছেন, তদন্ত কাজে সহায়তার জন্যই মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

লেবার পার্টির হয়ে মাত্র ১৬ বছর বয়সে রাজনীতিতে যোগ দেয়া টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের চারবারের এমপি। এবার দলটি ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইকোনমিক সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। তবে নানা অনিয়মের অভিযোগে শেষপর্যন্ত পদত্যাগ করতে হয়েছে শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপকে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews