এম,এইচ,চুন্নু।।বিশেষ প্রতিনিধি:
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও মাদারীপুর অংশে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার সড়ক পরিণত হয়েছে মরণ ফাঁদে। বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় যাত্রী, চালক ও পথচারীরা রয়েছেন চরম আতঙ্কে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে প্রাথমিকভাবে ইট, বালু ও সুরকি দিয়ে মেরামতের কাজ চলছে, তবে বৃষ্টিতে তা টিকছে না। সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, টেকসই সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, যা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের ভুরঘাটা, পাথুরিয়ারপাড়, কর্ণপাড়া, ভাঙ্গাব্রিজ, তাঁতিবাড়ি, মোস্তফাপুর, ঘটকচর, সমাদ্দার, সানেরপাড়, রাজৈর, টেকেরহাট, দিকনগর, ছাগলছিড়া, বরইতলা, বাবনাতলা, ভাঙ্গা সহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহনগুলো হেলেদুলে চলছে, ফলে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
জানা যায়, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে কালকিনির ভুরঘাটা পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার সড়ক মাদারীপুর সড়ক বিভাগের আওতাধীন। খানাখন্দে ভরা এই সড়কে ধীরগতিতে যান চলাচল করছে, ফলে যাত্রীদের সময় লাগছে বেশি এবং যানবাহনেরও ক্ষতি হচ্ছে। মহাসড়কের দুরবস্থায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে, বাড়ছে প্রাণহানির ঘটনা। পানি জমে থাকায় পথচারীরাও পড়ছেন বিড়ম্বনায়।
তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা ও মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা এই মহাসড়ক ব্যবহার করে ঢাকা যাতায়াত করেন। পদ্মা সেতু চালুর পর যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে গেলেও সড়কের উন্নয়ন হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, বছরে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেও টেকসই সংস্কার হচ্ছে না; নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণেই বারবার এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
সবশেষ গেল রোববার রাতে মহাসড়কের বরইতলা এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাস খাদে পড়ে চালক নিহত হন এবং আহত হন অন্তত ১৫ জন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, বাসযাত্রী দুলাল শিকদার বলেন, ‘মাথা ব্যথা হয়ে যায় এই সড়কে বাসে উঠলে। অসুস্থতা বাড়ে। একটু পরপর বড় বড় গর্ত, ডানে গেল বামে সমস্যা। কবে এর থেকে আমরা মুক্তি পাবো, তা জানি না।
বেসরকারি চাকুরিজীবী ইসরাত জাহান টুম্পা বলেন, ‘বরিশাল থেকে রওনা দিয়ে মাদারীপুর জেলার অংশে প্রবেশ করলে আতঙ্ক বাড়ে। কখন যেন দুর্ঘটনায় পড়তে হয়, খুবই ভয় করে। আর যাতায়াতে সময় বেশি লাগার কারণে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারি না।’
মাইক্রোবাস চালক আরিফ মৃধা বলেন, ‘সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। গাড়ি চালাতে এখন ভয় লাগে। দ্রুত এটি মেরামত করা উচিত। তা না হলে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হতে পারে।’
পিকআপ চালক সোহাগ খান বলেন, ‘ভাঙ্গা থেকে ভুরঘাটা সবখানেই এখন বড় বড় গর্ত। দুর্ভোগের শেষ নেই। গাড়ি চালাতে গিয়ে এখন অসুস্থও হয়ে পড়ছি। আমরা এর থেকে প্রতিকার চাই।’
গোল্ডেন লাইন পরিবহনের চালক মো. ইয়ামিন বলেন, ‘রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ, বড় বড় গর্তের কারণে প্রায়ই গাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তাটি মেরামত করা হলে খুবই ভাল হতো। তাহলে সঠিক সময়ে যাতায়াত করতে পারতাম।’
সড়ক ও জনপদ বিভাগের মাদারীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার নাজমুল হাসান বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে নিজস্ব অর্থায়নে ইট, সুরকি ও বালু দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামত করা হচ্ছে। টেকসইভাবে সড়ক সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, যা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায়। বরাদ্দ অনুমোদন হলে আর কোনো ভোগান্তি থাকবে না। যেসব কাজে ঠিকাদারের সময়সীমা রয়েছে, সেখানে তারা মেরামত করছে। পাশাপাশি সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার কার্যক্রমও চলছে।’
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক