চলমান তাপপ্রবাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে সড়ক-মহাসড়কের পিচ গলিতেছে, উহা নিঃসন্দেহে সড়ক নিরাপত্তায় এক নূতন উদ্বেগ সৃষ্টি করিয়াছে। শুক্রবার সমকালে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপকের বক্তব্য উদ্ধৃত করিয়া বলা হইয়াছে, পিচের গলনে একদিকে সহস্রাধিক কোটি টাকার সড়ক ধ্বংস হইতেছে, অন্যদিকে ঘর্ষণ বল সক্রিয় না থাকায় দুর্ঘটনার শঙ্কা বৃদ্ধি পাইতেছে। এইদিকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, সড়কে মানসম্মত ৬০-৭০ গ্রেডের পিচ ব্যবহৃত হয়। অতএব ৪৮ ডিগ্রি তাপমাত্রার নিম্নে পিচ গলিবার কথা নহে; অথচ ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই সড়কের এহেন বেহাল দশা। এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞদিগের মত, বিটুমিনের মান এবং সড়ক নির্মাণের দক্ষতার সংকটেই পিচ গলিতেছে। তাহারা সড়কে আদৌ সেই মানের পিচ ব্যবহৃত হইয়াছে কিনা– এমন প্রশ্ন তুলিয়াছেন।
দেশে সড়ক নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয় অনেকটাই ‘ওপেন সিক্রেট’। এখানে কোনো প্রকল্প যথাসময়ে সমাপ্ত হওয়ার নজির নাই বলিলেই চলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠিকাদার নির্বাচনেও কাজ করে তাহার বিশেষত রাজনৈতিক ও আর্থিক প্রভাব। এমতাবস্থায় কাজের মান যথাযথভাবে তদারকিরও সুযোগ থাকে না। ফলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর পিচের গ্রেড যথার্থ নির্ধারণ করিয়া দিলেও ঠিকাদার উহা সঠিক তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করিয়া সঠিক পদ্ধতিতে সড়কে ঢালিয়াছেন– উহারই বা নিশ্চয়তা কী? আমরা জানি, বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণ ব্যয় বিশ্বের বহু দেশ অপেক্ষা অধিক এবং ইহার নেপথ্যে বহু কারণের মধ্যে আছে অনিয়ম-দুর্নীতি।
আমরা মনে করি, সড়ক নির্মাণে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখিতে প্রকল্পের সূচনা হইতেই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করিতে হইবে। বিটুমিনসহ অন্যান্য উপকরণ যথাযথ মান ও পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয় কিনা, উহার তদারকিও গুরুত্বপূর্ণ। যথাসময়ে কাজ শেষ করিতে না পারিলে ঠিকাদারকে জরিমানার আওতায় আনিলেও সড়ক নির্মাণের ব্যয় কমিবে এবং জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ হইবে।