বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) শীর্ষ পদে বদল চান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বিষয়টি তিনি জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে। ফারুক পদত্যাগের বিষয়ে এখনও ‘ভাবেননি’। তবে তার জায়গায় আরেক সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলের আসার জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট পাড়ায়।
ফারুকের ব্যাপারে ক্রীড়া উপদেষ্টার ভাবনা এবং বুলবুলের বিসিবিতে আসার প্রস্তাবের বিষয়টি দুই পক্ষই বাংলাদেশের একাধীক গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। সবকিছু সত্যি হলে ৯ মাসের ব্যবধানে দায়িত্ব ছাড়তে হতে পারে ফারুককে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই সময়ের বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান দেশের বাইরে পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। এরপর যথাযত প্রক্রিয়া মেনে গত ২১ অগাস্ট সভাপতির দায়িত্ব নেন ফারুক।
তবে বুধবার রাতে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা। আলোচনার বিস্তারিত না জানালেও বোর্ডের শীর্ষ পদে পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।
“উপদেষ্ট বলেছেন, বোর্ডের শীর্ষ পদে তিনি পরিবর্তন চান। আমি এখনও কিছু ভাবিনি। মাত্রই গতকাল রাতের ব্যাপার… কিছুটা সময় নিতে চাই।”
ফারুকের ‘ভাবনা’ পদত্যাগের বিষয়ে। তিনি পদত্যাগ না করলে মন্ত্রণালয়ের করণীয় আছে সামান্যই। বোর্ডে সরকারের হস্তক্ষেপের প্রমাণ পেলে আইসিসি থেকে নেমে আসতে পারে নিষেধাজ্ঞার খড়গ। অতীতে এমন নজির দেখা গেছে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে। তবে সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফারুক কতটুকু কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন সেটাও একটা প্রশ্ন।
অনেক দিন ধরেই ফারুকের অবস্থান টালমাটাল। তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে গত কিছুদিনে। গত বিপিএলে নানা অব্যবস্থাপনা নিয়েও তুমুল বিতর্কের মধ্যে পড়তে হয়েছিল তাকে। আবার বিপিএলে এবার মাঠে প্রচুর দর্শক উপস্থিতি ও টিকেট বিক্রির আয়ে রেকর্ড গড়েও প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত ফারুক আহমেদ পদত্যাগ করলে তার জায়গায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়নে পরিচালক হবেন বুলবুল। তাকে পরিচালক হওয়ার প্রস্তাব বেশ কদিন আগেই দেওয়া হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন দেশের শীর্ষ কয়েকটি গণমাধ্যমকে।
“যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কয়েক দিন আগে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল যে, আমি সার্ভ করতে রাজি আছি কি না। আমি বলেছি, বোর্ডে কোন কোন জায়গায় কাজ করা উচিত, বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে অনেক কিছু করার আছে। তখন আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, দেশে আসব কবে। আমি বলেছিলাম, ব্যক্তিগত এক কাজে এমনিতেই কদিন পর আমার দেশে আসার কথা।”
“আমাকে তখন বলা হয়েছে, তারা আমাকে বিসিবি পরিচালক পদে চান। সভাপতি নিয়ে কথা হয়নি। সভাপতি তো কেউ এভাবে চাইতে পারেন না। বোর্ড পরিচালকদের ভোটে সভাপতি হতে হবে। তবে পরিচালক পদে তারা চান। আমি বলেছি, দেশের ক্রিকেটের জন্য যে কোনো দায়িত্ব নিতে রাজি আছি।”
তবে বোর্ড সভাপতি হওয়ার আলোচনা নিয়ে অবশ্য সরাসরি কিছু বলতে চান না বুলবুল। দায়িত্ব নিলেও লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব নিতে চান না বলেও জানান তিনি।
“দেখুন, আমি আইসিসিতে একটা দায়িত্বে আছি। ওটা আমার পেশা, আমার জীবিকা। লম্বা সময় বিসিবিতে থাকার ইচ্ছে আমার নেই। দেশের ক্রিকেট আমাকে চেয়েছে। আমি দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। বিসিবি নির্বাচন পর্যন্ত কাজ করতে চাই। তবে নির্বাচন করা বা দীর্ঘমেয়াদে থাকার ইচ্ছে নেই। জীবিকার কথাও তো ভাবতে হবে।”
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক ও টেস্টে দেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল এখন দায়িত্ব পালন করছেন আইসিসির এশিয়া অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে। এছাড়া হাই পারফরম্যান্স ফ্রেমওয়ার্ক সাজানো, বিভিন্ন ট্রেনিং এডুকেশন কার্যক্রম পরিচালনা করেন।