মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি আছে। তাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রায় ৫০ লাখ বাংলাদেশি সম্পৃক্ত। জনসম্পৃক্ততা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ থেকে ১৩ হাজার শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা গ্রহণ করতে গেছে। ৫৬ হাজার বাংলাদেশি দেশটিতে ভ্রমণের  জন্য গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা বাদই দিলাম। এ বহুমুখী সম্পর্কের বিষয়টি মনে রাখলে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উভয়েরই উভয়কে প্রয়োজন। অর্থাৎ বাংলাদেশের আগামী দিনের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আর সেই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। হুমায়ুন কবির বলেন, সম্পর্ক বিভিন্ন স্তরে হয়। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি সমাজ কাঠামো, টেকসই অর্থনীতির একটি জায়গা। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায়। কারণ তারা আমাদের সহযোগী এবং তারা এটা বুঝে যে, বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল, প্রগতিশীল এবং সামনে এগিয়ে যাওয়া দেশ। যদি তাই হয় তাহলে তা বাংলাদেশের জনগণের জন্য যেমন ভালো তেমনি আঞ্চলিক নিরাপত্তা, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বৈশ্বিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে ভালো। এটি হলো একটি স্তরভিত্তিক সম্পর্ক। আরেক স্তরে, যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক একটি শক্তি তাদের একটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি আছে। আর সেই কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সব দেশকেই তারা চায় তাদের সঙ্গে কাজ করুক। তাদের সঙ্গে থাকুক। বিশেষ করে তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক  কৌশল ঘোষণা করার পর গত ১০ বছরে বাংলাদেশসহ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর ব্যাপারে তাদের আগ্রহ বেড়েছে। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ, আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি সংযোগস্থলে। এ বিষয়গুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ আছে। সাম্প্রতিককালে আমরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে যা বলছি এবং মিয়ানমারের ঘটনাপ্রবাহ যা দেখছি সেগুলোর ব্যাপারেও তাদের আগ্রহ আছে। এ জায়গাগুলো বুঝতে হলে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক তৈরি করা বা ভালো কাজের সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই তারা ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায়। তিনি আরও বলেন, আবার আমাদের অর্থনৈতিক মূল্যায়নও একটা বিষয়। স্বাধীনতার সময় আমরা যে অবস্থা থেকে শুরু করেছিলাম, তার থেকে অনেকদূর সামনে এসেছি। কিন্তু এ অর্থনৈতিক যাত্রাকে টেকসই করতে হবে। সামনে এগিয়ে আসা মানে এই নয় যে, আমরা সবসময় এগিয়ে থাকব। একে টেকসই করতে হলে আমাদের ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যেতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা এখনো অর্থনীতির যে জায়গায় আছি সেখানে এখনো আমাদের সক্ষমতা সীমিত। আমাদের যারা উন্নয়ন সহযোগী আছে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এখানে আছে। সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের ১ নম্বর অর্থনৈতিক শক্তি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে দুই-তিনটি জায়গায় অর্থনৈতিকভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ১ নম্বর রপ্তানি বাজার। আর মার্কিন বাজার যেহেতু উন্মুক্ত বাজার, সে বাজারে আমরা প্রতিযোগিতামূলক হিসেবে থাকছি। শুধু গার্মেন্ট পণ্য নয়, আজ থেকে ৩০ বছর পরও আমাদের পণ্য যদি বহুমুখীকরণ হয় সেখানেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অন্যতম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে থাকবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ অর্থনৈতিক সম্পর্ক যত সমৃদ্ধ থাকবে বাংলাদেশ তত উপকৃত হবে। তিনি বলেন, ১০ বছর আগে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে আমাদের নিষ্পত্তি হলেও এ সুযোগটাকে আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। এর অন্যতম কারণ আমাদের বিনিয়োগের প্রয়োজন। আমাদের প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের প্রয়োজন, জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে বিনিয়োগের প্রয়োজন। এ বিনিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আছে। এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছে। হয়তো আগামী দিনেও এ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে থাকবে। আবার পৃথিবীর যে দেশগুলো থেকে আমরা রেমিট্যান্স পাই, এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত দুই বছর ধরে ১ নম্বর দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশি যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন তারা সেখানে স্থিতিশীলভাবে চাকরি করে। মার্কিন অর্থনীতি যত এগিয়ে যাচ্ছে সেই প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও টাকা-পয়সা পাঠানোর সক্ষমতা বাড়ছে। অর্থাৎ রেমিট্যান্সের দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জন্য স্থিতিশীল বাজার। এর সহজে পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কা কম। যত সময় যাবে ততই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সক্ষমতা বাড়বে। একই সঙ্গে দেশেও রেমিট্যান্স পাওয়ার সুযোগ বাড়বে। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূল্যবোধের দিক দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক দেশ। সেখানে আছে অংশগ্রহণমূলক এবং বৈষম্যহীন সমাজ। নিজস্ব মূল্যবোধের দিক থেকে এবং ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে তাদের বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ আছে। সাম্প্রতিককালে মার্কিন প্রতিনিধি যারাই বাংলাদেশে এসেছে তারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে দেখতে আগ্রহী। একই সঙ্গে তারা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি বাংলাদেশ দেখতে আগ্রহী। যে বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ভালো অংশীদার হিসেবে থাকবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews