খোঁজ মিলেছে ‘জাহালমের’ মতোই আরেক ভুক্তোভোগীর। এবার নামের মিল থাকায় এক বছর জেল খাটতে হয়েছে নির্দোষ এক ব্যক্তিকে।

গত বছরের মার্চ মাসে মামলার প্রকৃত আসামী শুক্কুর আলীর বদলে শুক্কুর শাহ নামের নিরপরাধ ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।

গতাকাল (মঙ্গলবার) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ এর কাছে বিষয়টি পুলিশের ভুল বলে স্বীকার করে হাজারীবাগ থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া ও এসআই মমিনুল।

তাদের এ স্বীকারক্তির পর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ শুক্কুর শাহকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন।

আদলত সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শুক্কুর আলী (৩৭) নামের এক ব্যক্তিকে শাহবাগ থানার মাদক মামলায় গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্কুর আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়।

২০১২ সালের ২০ জুন জামিন চাইলে আদালত শুক্কুর আলীকে জামিন দেন।

জামিনে বেরিয়ে মাত্র দুবার আদালতে হাজির হওয়ার পর ২০১৩ সাল থেকে পরবর্তী হাজিরায় উপস্থিত না হয়ে পালিয়ে যায় আসামী শুক্কুর আলী।

এরপর আদালত পলাতক শুক্কুর আলীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তবে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শুক্কুর আলীকে গ্রেফতার করতে পারেননি হাজারীবাগ থানা পুলিশ ।

২০১৮ সালের ৪ মার্চ হাজারীবাগ থানার এসআই আদালতে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, শুক্কুর আলী হাজারীবাগ থানার আরেকটি মাদক মামলায় ৩ মার্চ গ্রেফতার হয়ে কারাগারেই আছেন।

পুলিশের আবেদনে গত বছরের ৮ মার্চ মেজবাহ উদ্দিন আদালতে ভিন্ন এক মামলার আসামী শুক্কুর শাহকে হাজির করা হয়।

সেখানে আদালতে শুক্কুর শাহের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন আবেদন করে বলেন, পুলিশ যাকে শুক্কুর আলী বলে গ্রেফতার দেখিয়েছেন, তিনি শুক্কুর শাহ। তিনি এই মামলার আসামী পলাতক শুক্কুর আলী নন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে এ ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য হাজারীবাগ থানার ওসি ও ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন আদলত।

এর পরও তদন্ত প্রতিবেদনে শুক্কুর শাহকেই শক্কুর আলী দেখানো হলে গত বছরের ৪ অক্টোবর আদলত শুক্কুর শাহকে শুক্কুর আলী দেখিয়ে জামিন দেয়।

আর এভাবেই আইনের দৃষ্টিতে নির্দোষ শুক্কুর শাহ, মাদক মামলার পলাতক আসামী শুক্কুর আলীতে পরিণত হন।

তবে এতে আরও বড় বিপদে পড়েন শুক্কুর শাহ। জামিন পেয়েও তাকে মুক্তি দেয়নি জেল কর্তৃপক্ষ।

জেল কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানায়, এ মামলায় শুক্কুর আলী নামের কোনো আসামী কারাগারে নেই। যিনি আছেন তিনি শুক্কুর শাহ।

জেল কর্তৃপক্ষের এমন প্রতিবেদন পেয়ে আদালত তখন আবার হাজারীবাগ থানার ওসি ও এসআই মমিনুল হককে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।

কিন্তু এবারও শুক্কুর শাহকে শুক্কুর আলী বলেই অভিহিত করে পুলিশ।

চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি শুক্কুর আলী মামলার বাদী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পুলিশ পরিদর্শক মোফাজ্জল হোসেন মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে হাজির হন।

আসামীর কাঠগড়ায় শুক্কুর শাহকে দেখে তিনি বলেন, ‘এ শুক্কুর আলী নয়, এ আসামীকে তিনি গ্রেফতার করেননি।’

বাদীর এমন বক্তব্যে আদলত জেল সুপার এবং হাজারীবাগ থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া ও এসআই মমিনুলকে গতকাল মঙ্গলবার হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার জেল সুপার এবং হাজারীবাগ থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া ও এসআই মমিনুল আদালতে হাজির হয়ে প্রকৃত আসামী শুক্কুর আলীর ছবিসহ প্রতিবেদন জমা দিয়ে তাদের ভুল স্বীকার করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মামলার আসামি শুক্কুর আলী জামিনে বেরিয়ে গেছেন।

ওসি ইকরাম আলী মিয়া বলেন, দুজন আসামীর নাম শুক্কুর। বাবার নামও এক। এ কারণেই ভুল হয়েছে। তবে এটি ইচ্ছাকৃত ভুল ছিল না।

পুলিশের এ স্বীকারক্তির পরই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ শুক্কুর শাহকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, আদালতের নির্দেশে রাতেই শুক্কুর শাহকে কারাগার থেকে ছেড়ে দিয়েছে জেল কর্তৃপক্ষ।

ছেলেকে পেয়ে আপ্লুত শুক্কুর শাহের বাবা আবুল কাশেম বলেন, যাদের ভুলে ছেলে এক বছর ধরে জেল খাটল, তাদের শাস্তি চাই।

প্রসঙ্গত, চেহারায় মিল থাকায় বিনাদোষে ৩ বছর কারাভোগ করেছিলেন নরসিংদীর জাহালম।

সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদকের করা ৩৩টি মামলায় ভুলবশত: জাহালমকে গ্রেফতার করা হয়।

সেসময় দুদকে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা অনুসন্ধানকালে জাহালমকেই ‘আবু সালেক’ হিসেবে শনাক্ত করেন।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোড়াশাল থেকে জাহালমকে গ্রেফতার করে দুদক।

এরপর চলতি বছরে মানবাধিকার কমিশনের এক তদন্তে বেরিয়ে আসে, প্রকৃত আসামী আবু সালেক আর জাহালম এক ব্যক্তি নন।

এ নিয়ে ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা হাইকোর্টের নজরে আনেন একজন আইনজীবী।

পরে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ জাহালমকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তির আদেশ দেন।





Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews