বর্তমান বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, কিন্তু এই চাহিদা পূরণে পেশাদার থেরাপিস্টের সংখ্যা বা মানসম্পন্ন সেবা এখনো সীমিত। দীর্ঘ অপেক্ষা, ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং সামাজিক ট্যাবুর কারণে অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা চালিত চ্যাটবট, যা ২৪ ঘণ্টা সহানুভূতিশীল কথোপকথনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই এআই থেরাপিস্টরা কি আসলেই মানুষের জায়গা নিতে পারে, নাকি এটি কেবল একটি সাময়িক সহায়তা মাত্র?
বিশ্বজুড়ে অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা এআই চ্যাটবটের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন। যদিও এসব বটকে প্রকৃত থেরাপিস্টের বিকল্প হিসেবে দেখা হয় না এবং সাইটগুলোও সরাসরি সতর্ক করে যে এসব বট বাস্তব মানুষ নয় এবং এদের কথায় নির্ভর করা উচিত নয়।
তবে চরম ক্ষেত্রে এসব বট ক্ষতিকর পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগের মুখোমুখিও হয়েছে। একটি মামলায় বলা হয়েছে, ক্যারেক্টার এআই-এর একটি বটের সঙ্গে কথোপকথনের পর ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর আত্মহত্যা করে। বটটি নাকি তার 'ফিরে আসার' সিদ্ধান্তে উৎসাহ দিয়েছিল।
এছাড়া, ২০২৩ সালে ন্যাশনাল ইটিং ডিসঅর্ডার অ্যাসোসিয়েশন তাদের হেল্পলাইন বট দিয়ে পরিচালনা করার পর তা বন্ধ করে দেয় কারণ বটটি নাকি ক্যালোরি কমানোর মতো বিপজ্জনক পরামর্শ দিচ্ছিল।
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসেই ইংল্যান্ডে প্রায় ৪,২৬,০০০ মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রেফারেল হয়েছে – গত পাঁচ বছরে যা ৪০% বৃদ্ধি। কিন্তু এনএইচএস-এ অপেক্ষমাণ ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ এবং বেসরকারি থেরাপি বেশ ব্যয়বহুল।
এই প্রেক্ষাপটে কিছু এনএইচএস সেবা এখন 'Wysa' নামক একটি চ্যাটবট ব্যবহার করছে – যা কগনিটিভ বিহেভিয়রাল থেরাপির অনুশীলন শেখানো হয়।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক হামেদ হাদ্দাদি বলেন, এসব এআই চ্যাটবটকে একটি "অভিজ্ঞতাহীন থেরাপিস্ট" বলা চলে। কারণ তারা শুধুই পাঠ্য বার্তার উপর নির্ভর করে, শরীরের ভাষা বা পরিবেশ বিশ্লেষণ করতে পারে না।
তিনি বলেন, "মানুষ যখন কাউন্সেলিং করে, তারা অনেক কিছু লক্ষ্য করে – ব্যবহার, কাপড়চোপড়, চোখের ভাষা – যা বট পক্ষে বোঝা অসম্ভব।" অনেক ব্যবহারকারী কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন এই চ্যাটবট থেকে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তারা বুঝেছেন যে এটি মানুষের বিকল্প হতে পারে না।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, চার সপ্তাহ চ্যাটবট ব্যবহারের পর ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষন্নতার উপসর্গ ৫১% পর্যন্ত কমে গেছে। তবু গবেষণার প্রধান লেখক বলেছেন, "এই ধরনের প্রযুক্তি কখনোই মানুষের বিকল্প নয়।"
সাইকোলজিস্ট ইয়ান ম্যাক্রেই বলেন, “ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের সচেতন থাকা উচিত। আপনি জানেন না এই তথ্যগুলো কোথায় যাচ্ছে বা কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।”
তবে Wysa কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের সেবা ব্যবহার করতে ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হয় না এবং কোনভাবেই ব্যবহারকারীর পরিচয় সনাক্ত করার মতো তথ্য রাখা হয় না। চ্যাটবট মানসিক স্বাস্থ্যসেবার একটি বিকল্প না হলেও, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, অপেক্ষমাণ রোগীদের জন্য এটি একটি ‘স্টপ গ্যাপ’ হতে পারে।