বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা : বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, আগামী অর্থ বছর থেকে বাগেরহাট খান জাহান আলী বিমান বন্দরের নির্মাণ কাজ পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হবে। তিন বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বিমান বন্দর রূপে এটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৫৪৪ কোটি টাকা। মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লায় বিমান বন্দর এলাকা পরিদর্শন শেষে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, এই বিমান বন্দরটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবন, হযরত খান জাহানের মাজার ও ষাট গুম্বজ মসজিদ এলাকার পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটবে। সমুদ্র বন্দর মংলা আরও গতিশীলতার পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই বিমান বন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকলে অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের প্রকৃত উন্নয়ন হয় উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, বিমান বন্দর এলাকায় কাছে পর্যটকদের থাকার জন্য একটি পাঁচ তারকা হোটেল, মংলায় পর্যটন কর্পোরেশনের পশুর মোটেলকে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও খুলনার মুজগুন্নিতে হোটেল ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হবে।সমাবেশে বক্তব্য দেন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা এমপি, স্থানীয় এমপি তালুকদার আব্দুল খালেক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী, পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান অপরূপ চৌধুরী, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল সানাউল হক, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী সুদেন্দ্র বিকাশ গোস্বামী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুল আফরোজ।
যে ভাবে বাগেরহাট খান জাহান আলী বিমান বন্দর :এরশাদের পতনের পর বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে তৎকালিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএসএম মোস্তাফিজুর রহমানের প্রচেষ্টায় বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লায় মংলা-মাওয়া-ঢাকা মহাসড়কের পাশে হযরত খান জাহান আলীর (র:) নামে বাগেরহাটে বিমান বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। তখন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে অধিগ্রহণ করা হয় ৯৪ একর জমি। অধিগ্রহণকৃত ৯৪ একর জমি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পর ১৯৯৬ সালের ২৭ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাগেরহাট খান জাহান আলী বিমান বন্দরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৯৭ সালে শুরু হয় বিমান বন্দরের মাটি ভরাটের কাজ। প্রায় ২৪ কোটি টাকায় আংশিক মাটি ভরাট করা ছাড়া তৎকালিন সময়ে বিমান বন্দর নির্মাণে আর কিছুই করা হয়নি। ২০০১ সালে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে আবার শুরু হয় মাটি ভরাটের কাজ শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে তাও বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থার ২০১২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাগেরহাটের ফয়লায় বিমান বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন। তখন তিনি খান জাহান বিমানবন্দর নির্মাণের প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। এরপর বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালের এপ্রিলে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দেয়। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে কুয়েট বিশেষজ্ঞরা তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে বিমান বন্দর নির্মাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে দ্রুত এই বিমান বন্দর নির্মাণে প্রথম ধাপে ছোট বিমান ওঠানামার জন্য ২৫০ কোটি টাকা ও দ্বিতীয় ধাপে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ৫শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। পরে এদু’টি প্রস্তাবনা একীভূত করে পূর্ণাঙ্গ বিমান বন্দর নির্মাণ প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। গত ৫মে একনেকের সভায় পূর্ণাঙ্গ বিমান বন্দর রূপে ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় বাগেরহাট খান জাহান বিমান বন্দর প্রকল্পটি পাশ হয়। আগামী তিন বছরের মধ্যে এই বিমান বন্দর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে আরও ১৬৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। প্রকল্পটিতে ৭ হাজার মিটার রানওয়ে, টার্মিনালসহ ৪ হাজার মিটার গ্যাংওয়ে, ১৮ হাজার ৫৬৪ বর্গ মিটার আবাসিক ভবন নির্মাণ ও ৭ লাখ ২০ হাজার ১৭৩ ঘন মিটার ভূমি উন্নয়নের কথা রয়েছে।