ডা: মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

যেসব ঈমানদার অগ্নিকাণ্ড বা কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তাদের জন্য নবীজি সা:-এর সুসংবাদ রয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সা: আগুনে পুড়ে মরা ব্যক্তিকে শহীদ বলে আখ্যা দিয়েছেন। পবিত্র হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জাবের তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: জাবের রা:-কে তাঁর রোগশয্যায় দেখতে গেলেন। তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন নারীরা কেঁদে কেঁদে বলছে, আমরা মনে করেছিলাম, তুমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। তখন মহানবী সা: বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকে শহীদ মনে করো না? এমন হলে তো তোমাদের শহীদের সংখ্যা অতি অল্পই হবে। আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, নিউমোনিয়া জাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ...। (আবু দাউদ : ৩১১১)

সুবহানাল্লাহ, মহান আল্লাহ কত দয়ালু। মানুষের মৃত্যু অবধারিত। যখন সময় আসবে, তখন তাকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না। সময়ের একমুহূর্ত আগেও কেউ তাকে মারতে পারবে না। তবে কারো মৃত্যু যদি কোনো অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা বা কঠিন রোগে হয়, মহান আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে শাহাদাতের মতো অতি সম্মানের মর্যাদা দিয়ে দেন। উল্লিখিত হাদিসটি ইবনে মাজাহ শরিফে এসেছে এভাবে- জাবের বিন আতিক রা: থেকে বর্ণিত, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী সা: তাঁকে দেখতে আসেন। জাবের রা:-এর পরিবারের কেউ কেউ বলল, আমরা আশা করতাম যে সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, তাহলে আমার উম্মতের শহীদের সংখ্যা তো খুব কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারিতে নিহত হলে শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও ক্ষয় রোগে মৃত্যুবরণকারীও শহীদ। (ইবনে মাজাহ : ২৮০৩)

উল্লিখিত হাদিসের আলোকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তিরাও শহীদি মর্যাদা লাভ করবেন ইনশা আল্লাহ। তবে, পূর্বশর্ত হলো- মুসলমান হতে হবে। ইসলামে ঈমান ছাড়া শহীদি মর্যাদা লাভ হয় না।

তবে ইসলামের জন্য রক্তদানকারী শহীদের সাথে এভাবে শহীদের মর্যাদা লাভকারীদের পার্থক্য হলো দুনিয়াতে তাদের গোসল ও জানাজা সবই হবে। শহীদদের মতো তাদের গোসল ছাড়া দাফন করা হবে না।

হজরত সাঈদ বিন যায়েদ রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ, যে নিজের পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ, যে তার নিজের প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ এবং যে নিজের দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সেও শহীদ। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৭৭৪)

শহীদদের জন্য দোয়া

১. সাধারণ ক্ষমা ও রহমতের দোয়া

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফির লাহুম ওয়ারহামহুম

অর্থ : হে আল্লাহ! তাদের ক্ষমা করুন ও তাদের উপর রহমত করুন।

২. জান্নাতে মর্যাদা বৃদ্ধির দোয়া

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মারফা’ দারাজাতিহিম ফিল মাগফুরি লাহুম

অর্থ : হে আল্লাহ! ক্ষমাপ্রাপ্তদের মধ্যে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করুন।

৩. শহীদদের পরিবারের জন্য দোয়া

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা সাব্বির আহলাহুম ওয়াখলুফহুম ফিল আখিরিন

অর্থ : হে আল্লাহ! তাদের পরিবারকে ধৈর্য দিন এবং তাদের স্থলে উত্তম প্রতিস্থাপন দান করুন।

দোয়া পাঠের গুরুত্বপূর্ণ আদব

১. পবিত্রতা অর্জন : দোয়ার আগে অজু বা গোসল করে নিন।

২. কিবলামুখী হওয়া : দোয়া করার সময় কিবলার দিকে মুখ করুন।

৩. দরুদ শরিফ পাঠ : দোয়ার শুরু ও শেষে দরুদ পড়ুন।

৪. নিহতদের নাম উল্লেখ : সম্ভব হলে নিহতদের নাম নিয়ে দোয়া করা উত্তম। শহীদদের রুহের ঈসালে ছওয়াবের জন্য সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করুন। তাহাজ্জুদ নামাজে এই দোয়াগুলো পড়লে বিশেষ সাওয়াব পাওয়া যায়। শুধু মৃত নয়, আহতদের জন্যও সুস্থতার দোয়া করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews