লক্ষ্মীপুর: প্রায় ২১ লাখ বাসিন্দাদের একমাত্র চিকিৎসার সেবার আস্থা লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল। জেলার পাঁচটি উপজেলার চারটিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও জনসাধারণের ভরসা যেন সদর হাসপাতালটি।

সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩৪২ জন। শয্যার বিপরীতে এতো বিপুল পরিমাণ রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং নার্সরা।

মেডিসিন পুরুষ ও সার্জারি বিভাগে ৩০টি করে ৬০টি বেড রয়েছে। ৬০ বেডের বিপরীতে ১২৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। শিশু ও গাইনি ওয়ার্ডে ৩০ বেডের বিপরীতে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১১১ জন। এভাবে প্রায় সবগুলো ওয়ার্ডেই ধারণ ক্ষমতার চেয়েও অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকতে দেখা গেছে।

এছাড়া প্রায় আড়াই গুণ রোগীর বিছানা পাতা হয়েছে ফ্লোর, চলাচল পথ ও লাশঘরের সামনে। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় রোগীদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এদিকে চিকিৎসক সংকটে রোগীরা হাসপাতাল থেকে সেবা না পেয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।  

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হয়। কেউ আবার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এছাড়া সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আউটডোরে চিকিৎসাপত্র নেয় অসংখ্য রোগী।

জেসমিন আক্তার নামে এক নারী বাংলানিউজকে বলেন, আমার ছেলে ইয়াছিনের নাকে সমস্যা থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কিন্তু বেড খালি না থাকায় আমাদের মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। গত তিন দিন ধরে মেঝেতে থেকে ছেলের চিকিৎসা করাচ্ছি।

পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগী নুর নবী বলেন, বেড নেই। যে পরিমাণ রোগী, তাতে বেড থাকবে কি করে? তাই মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।

আয়েশা নামে এক নারী জানান, তার স্বামী গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সিট খালি না থাকায় মেঝেতে থাকতে হচ্ছে তাদের। ফ্যানের বাতাস পর্যাপ্ত না হওয়ায় কাগজের সাহায্যে তাকে বাতাস করতে হচ্ছে।

জেলা শহরের বাসিন্দা সুমন দাস বলেন, সোমবার একজন রোগীকে নিয়ে সার্জারি চিকিৎসকের কক্ষে যাই। কিন্তু ওই চিকিৎসক ছুটিতে থাকায় সেবা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তিনি জানান, হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল রোগের চিকিৎসকের অনেকগুলো পদ শূন্য থাকায় বাহিরের হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, সিনিয়র কনসালটেন্ট এর চারটি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র একজন। জুনিয়র কনসালটেন্ট পদে ৯ জনের থাকার কথা থাকলেও আছে ৬ জন। সিনিয়র স্টাফ নার্স ও স্টাফ নার্স ৮২ জনের বিপরীতে ৬৪ জন কর্মরত রয়েছেন। ৬টি মিডওয়াইফ পদ একেবারে শূন্য। এছাড়া অন্যান্য পদে ৪১ জনের জায়গায় ২৩ জন কর্মরত রয়েছে।

জানা গেছে, হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি, মেডিসিন, ইএনটি, চক্ষু ও জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবলেশন পদে কোনো চিকিৎসক নেই। দীর্ঘদিন ধরে পদগুলো শূন্য থাকায় রোগীরা সেবাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এদিকে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চারটি পদের মধ্যে মাত্র একজন কর্মরত রয়েছে। ফলে হাসপাতালের বিভিন্নস্থানে অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশ দেখা গেছে। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।  

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল বাংলানিউজকে বলেন, সদর উপজেলার রোগী ছাড়াও জেলার সবকটি উপজেলার রোগীরা এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো থেকে এ হাসপাতালে রোগীদের রেফার্ড করা হয়। প্রতিদিন এ হাসপাতালে রোগীদের অনেক চাপ থাকে।  

শয্যার বিপরীতে রোগীর পরিমাণ তিন থেকে চার গুণ হওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। নির্মাণাধীন আড়াইশ শয্যার ভবনটি এখনও হস্তান্তর করা হয়নি। সেটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হলে শয্যা সংকট সমাধান হবে।

তিনি আরও বলেন, জেলা সদর হাসপাতালটি আড়াইশ শয্যায় উন্নীত হলেও পর্যাপ্ত জনবলও নেই। ১০০ শয্যার মঞ্জুরিকৃত ১৫৪ জনবলের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১০৬ জন। গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক পদও শূন্য। আবার কোনো চিকিৎসক ছুটিতে গেলে ওই চিকিৎসকের সেবা বন্ধ থাকে। সেবা না নিয়েই ফিরে যেতে হয় রোগীদের।

চিকিৎসক সংকটের বিষয়ে অরুপ পাল বলেন, কিছু পদে চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা ওইসব রোগের সেবা পাচ্ছে না। তবে আমরা যথাসাধ্য সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। শূন্য পদে জনবল পেতে জেলা সিভিল সার্জন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২৪
এসএম



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews