উন্নয়নে শান্তি-শৃঙ্খলার বিকল্প নাই
২২ জুন, ২০১৮ ইং
মানুষের জীবনে নিয়ম-শৃঙ্খলাই প্রথম। ইহাই উন্নতি ও উন্নয়নের সোপান। সমাজ, রাষ্ট্র ও প্রশাসনে শৃঙ্খলা আসে আইন ও নিয়ম-কানুন অনুসরণের মাধ্যমে। ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্ব ও পশ্চিমে অবস্থিত দেশগুলি তরতর করিয়া উন্নতি লাভ করিতেছে। কারণ তাহারা নিয়ম-কানুন অনুসরণে একনিষ্ঠ। কিন্তু উপমহাদেশে আসিলেই দেখা যায় ইহার বিপরীত চিত্র। এইখানে আইন-কানুনকে তেমন একটা তোয়াক্কা করা হয় না। বরং ইহাকে পাশ কাটাইয়া চলা হয় যাহা মোটেও কাম্য নহে। গুড ল’-ব্যাড ল’ তথা ভালো আইন-মন্দ আইন নিয়া আমরা বিতর্কে যাইতে চাহি না। আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলি আইন মানিয়া চলিবার ক্ষেত্রে আদর্শস্থানীয়। কিন্তু আমরা ইহার ধারাকাছেও যাইতে পারিতেছি না। কবি বলিয়াছেন—‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি’। কবি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হইয়াই এই কথা লিখিয়াছেন। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের সৌন্দর্য হইল আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা।
উপমহাদেশের দেশগুলির ন্যায় এমন কোনো দেশ আমরা খুঁজিয়া পাই না, যেখানকার মানুষ আইন লঙ্ঘনের ব্যাপারে এতটা বেপরোয়া ও অসচেতন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখিয়াছেন, ‘আমরা সবাই রাজা, আমাদের এই রাজার রাজত্বে / নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?।’ এইকথা বলিয়া তিনি ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতি ইঙ্গিত করিয়া থাকিতে পারেন। কিন্তু আমরা ইহাকে স্বেচ্ছাচারিতার পর্যায়ে নিয়া গিয়াছি। আমরা তাই সবাই রাজা এবং যে যাহার মতো চলিতে চাই। ‘উল্টোরাজার দেশে’ নামে একটি ছড়ায় দেখা যায় সব কিছুই উল্টা-পাল্টা—‘আইন-কানুন, রীতি-নীতি/সবই আজব রকম;/ কেউবা থাকে চুপটি করে,/ কেউবা বকম্-বকম্।’ আবার নচিকেতা চক্রবর্তী গাহিয়াছেন—‘...উল্টো বুঝলি প্রজার দেশে/ চলে সব উল্টো পথে, উল্টো রথে, উল্টো বেশে।’ আইন মানিয়া চলিবার ক্ষেত্রেও আমরা যেন উল্টোপ্রজার দেশে বসবাস করিতেছি। এখানে নিয়ম না মানাটাই নিয়ম হইয়া দাঁড়াইতেছে যাহা উদ্বেগজনক ও বিপজ্জনক।
আমরা বলিতে চাই, আধাসামন্তবাদী সমাজের কারণেও এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হইতে পারে। তবে নিয়ম-কানুন ও আইন মানিবার অভ্যাস অবশ্যই আমাদের গড়িয়া তুলিতে হইবে। আমাদের অপার সম্ভাবনা রহিয়াছে। যাহারা একসময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র সহিত তুলনা করিয়াছিলেন, তাহারাও এই সম্ভাবনা দেখিতে পাইতেছেন। কিন্তু এই সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা পদে পদে হোঁচট খাইতেছি। কারণ আমরা নিয়ম-শৃঙ্খলা মানি না, মানিতে চাহি না। চেইন অব কমান্ড ও হাইয়ার্কি তথা ক্রমোচ্চ শ্রেণিবিভাগ মানিবার চেষ্টা করি না। নিঃসন্দেহে আমরা উন্নয়নের দিকেই অগ্রসর হইতেছি। কিন্তু এইকথাও মানিতে হইবে যে, উন্নয়নের আসলে শেষ নাই, সীমা নাই। তাই উন্নত দেশে পরিণত হইবার মহান লক্ষ্যে পৌঁছাইতে হইলে সর্বত্র নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। এই ক্ষেত্রেও শান্তি-শৃঙ্খলার বিকল্প নাই। আমরা যদি গভীরভাবে লক্ষ করি, তাহা হইলে দেখিতে পাই, মহান স্রষ্টার বিশ্বজগতেও এই নিয়ম-শৃঙ্খলা কার্যকর। গ্রহ-নক্ষত্রগুলি নিয়ম অনুযায়ী নিজ নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমণ করিতেছে। এই নিয়ম ভঙ্গের কোনো কারণ ঘটিলে নিশ্চয়ই বিপর্যয় দেখা দিত। অথচ আমরা আশরাফুল মাখলুকাত হইয়াও নিয়ম-শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের মাধ্যমে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি ডাকিয়া আনিতেছি। অতএব, আমাদের এই ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।