২০১০ সালে প্রথম উৎক্ষেপণের পর থেকে চারশ’রও বেশি বার মহাকাশে উৎক্ষেপিত হয়েছে ফ্যালকন ৯ রকেট। ছবি: স্পেসএক্স

২০১০ সালে প্রথম উৎক্ষেপণের পর থেকে চারশ’রও বেশি বার মহাকাশে উৎক্ষেপিত হয়েছে ফ্যালকন ৯ রকেট। ছবি: স্পেসএক্স

ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে নতুন করে ২৩টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে ইলন মাস্কের মহাকাশ অভিযান কোম্পানি স্পেসএক্স।

মঙ্গলবার ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেস থেকে রকেটের উৎক্ষেপণ ঘটে, যা স্পেসএক্সের ৪০১তম সফল রকেট উৎক্ষেপণ। আর ২০২৫ সালের হিসাবে এটি স্পেসএক্সের ১১তম ফ্যালকন ৯ মিশন ও সপ্তম স্টারলিংক মিশন।

মহাকাশে উৎক্ষেপণের সময় যে কোনো রকেটই এত জোরে শব্দ করে যে তা অনেক মাইল দূর থেকেও শোনা যায় এবং শরীরেও সেই কাঁপুনি অনুভূত হয়। মানুষ ও স্যাটেলাইট পাঠানোর কাজে ব্যবহৃত স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন ৯ রকেটও এর ব্যতিক্রম নয়।

২০১০ সালে প্রথম উৎক্ষেপণের পর থেকে চারশ’রও বেশি বার মহাকাশে উৎক্ষেপিত হয়েছে ফ্যালকন ৯ রকেট। যার অনেকগুলোর উৎক্ষেপণ হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডেনবার্গ স্পেস ফোর্স ঘাঁটি থেকে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানবিষয়ক খবরের সাইট নোরিজ।

ভ্যান্ডেনবার্গ স্পেস ফোর্স ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের ভেনচুরা কাউন্টি থেকে ৬০ থেকে ১০০ মাইল দূরে হলেও সেখানকার মানুষ মাঝেমধ্যে ফ্যালকন ৯ রকেটের জোরালো সনিক বুম শুনতে পান এবং এর কাঁপুনিও অনুভব করেন তারা।

এ রকম ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ তখনই তৈরি হয় যখন রকেট শব্দের গতির চেয়ে বেশি দ্রুত বেগে বায়ুমণ্ডলের ভেতর দিয়ে ছুটে যায়।

যুদ্ধযানের সনিক বুমের তীক্ষ্ণ শব্দের তুলনায় ফ্যালকন ৯ রকেটের শব্দ অনেক ভারী ও অনেকটা গর্জনের মতো, যা ঘরের জানালা ও দেয়াল কাঁপিয়ে তোলে। এর ফলে ঘরের মধ্যে ছোট ভূমিকম্পের অনুভুতিও পান লোকজন।

ফ্যালকন ৯ রকেটের উৎক্ষেপণের সংখ্যা যত বাড়ছে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সনিক বুম শোনার খবরও তত বেশি বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।

‘ব্রিঘাম ইয়াং ইউনিভার্সিটি’ বা বিওয়াইইউ-এর পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক কেন্ট গি বলেছেন, স্যাটেলাইট মিশনের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রকেট উৎক্ষেপণও বেশি হচ্ছে। ফলে ওই অঞ্চলের লোকজন আরও বেশি সনিক বুম শুনতে পাচ্ছেন। ভেনচুরা কাউন্টির বাসিন্দাদের শব্দজনিত উদ্বেগ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে সেখানে একটি গবেষণা চালান ‘ব্রিঘাম ইয়াং ইউনিভার্সিটি’ ও ‘ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, বেকার্সফিল্ড’-এর গবেষকরা।

ওই অঞ্চলের পাঁচশো বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এলাকায় ১৩২ বার সনিক বুমের শব্দ রেকর্ড করেন তারা। যাতে বোঝা যায়, এই শক্তিশালী মাত্রার শব্দের তরঙ্গ আশপাশের এলাকার মানুষের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলছে।

গবেষণার ফলাফল ১৯ মে এক সম্মেলনে উপস্থাপন করেন বিওয়াইইউ-এর গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী মাকেইল কেলিসন ও অধ্যাপক গি। কেলিসনের মতে, এ সনিক বুমের শক্তির মাত্রা ও শব্দ প্রতিবার একই রকম হয় না।

আবহাওয়া, দিন-রাতের সময়, রকেটের ওড়ার পথ ও বছরের কোন সময়ে উৎক্ষেপণ হচ্ছে তার ওপরও নির্ভর করে এ শব্দের শক্তির মাত্রা ও ধরন বদলে যেতে পারে।

সুপারসনিক প্লেন থেকে তৈরি সনিক বুম রকেট উৎক্ষেপণে তৈরি শব্দের চেয়ে আলাদা। কারণ, প্লেন থেকে যে সনিক বুম হয় তা সাধারণত খুব তীক্ষ্ণ ও হঠাৎ শোনা যায়। তবে ফ্যালকন ৯ রকেটের শব্দ অনেক গভীর ও ধীর। যার বেশিরভাগই শব্দ মানুষের কানে যায় না, কারণ তা অনেক নিচু কম্পনের, ১ হার্টজের নিচে। এ শব্দ কানে না বাজলেও মাটি ও বাড়িঘর কাঁপিয়ে তোলে।

গবেষকরা বলছেন, কেবল ২০২৪ সালেই ফ্যালকন ৯ রকেট ভ্যান্ডেনবার্গ ঘাঁটি থেকে ৪৬ বার উৎক্ষেপিত হয়েছে, যেটি প্রতি সপ্তাহে গড়ে একবার করে। তবে প্রতিটি উৎক্ষেপণে সনিক বুমের মতো শব্দ তৈরি হয়নি। হলেও সবসময় সেটা মাটিতে পৌঁছায়নি। কেউ কেউ দূর থেকে শুধু গর্জন শুনেছেন। আবার কারও কাছে সেটা হালকা একটা ভূমিকম্পের মতোও মনে হতে পারে।

গবেষক দলটি বলছে, ভ্যান্ডেনবার্গ স্পেস ফোর্স ঘাঁটির কর্মকর্তাদের ওপর সনিক বুম কেমন প্রভাব ফেলে সেসব কারণ ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে তাদের এই গবেষণা।

এ তথ্যের ভিত্তিতে নিজেদের পরিকল্পনা উন্নত করা ও রকেট উৎক্ষেপণ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শব্দের প্রভাব কমানোর লক্ষ্য নিয়েছে তারা।

রকেট উৎক্ষেপণ অঞ্চলের কাছাকাছি বসবাসকারী সম্প্রদায়ের জন্য শব্দ নিয়ন্ত্রণে উন্নত নীতিমালা তৈরির পথ খুলে দিচ্ছে এ গবেষণা, যা বড় ধরনের বাধা ছাড়াই মহাকাশ অনুসন্ধানের পরিসর বাড়াবে বলে দাবি গবেষকদের।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews