পোশাক খাতের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা দিতে ভারত সরকার সম্প্রতি বস্ত্র ও পোশাক খাতের পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ায় চীনের তৈরি পোশাক কম দামে ভারতের বাজারে সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে ভারতের এ খাতের উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই আশঙ্কা থেকেই ভারত সরকার চীনা পোশাক পণ্য আমদানিতে শুল্ক দ্বিগুণ করেছে।

বাংলাদেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের আশা চীনের পোশাক পণ্যে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর ফলে ভারতে বাংলাদেশের পণ্যর রপ্তানি আয় আরো বাড়বে। এ ছাড়া সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের ভারতে বাংলাদেশের পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১১৫ শতাংশ। আর প্রতিবেশী দেশ, জাহাজীকরণে সময় কম ও কম খরচে উন্নতমানের পণ্য সহজেই রপ্তানি করতে পারবে। ফলে দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাকের কদর আরো বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো।

সম্প্রতি ভারত সরকার চীন থেকে আমদানি করা ৩২৮টি বস্ত্র ও পোশাক খাতের পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করেছে। এত দিন এই শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ; তা বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। স্থানীয় বস্ত্র খাতকে এ সুবিধা দিতে এবং চীন থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। যেসব পণ্যে শুল্ক দ্বিগুণ করা হয়েছে এমন কয়েকটি পণ্যের মধ্যে রয়েছে জ্যাকেট, স্যুট, অন্তর্বাস, পায়জামা, শিশুদের কাপড়, ট্রাক স্যুট, সুইমিং ওয়্যার ইত্যাদি।

কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি (সিআইটিআই) সূত্রে জানা য়ায়, ভারতের বাজারে সবচেয়ে বড় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীন। এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় তুলা উৎপাদনকারী দেশ হওয়ার পরও গত অর্থবছরে বস্ত্র ও পোশাক খাতের পণ্য আমদানিতে দেশটিতে চীনের আয় বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। ভারত এ সময় ৭০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে এর মধ্যে ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য আসে চীন থেকে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীন তার পোশাক পণ্য তুলনামূলক কম দামে ভারতে রপ্তানি করছে। এর ফলে দেশটির স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে ভারত বস্ত্র ও পোশাক খাতের কিছু পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশ পোশাক খাতে সাময়িক কিছুটা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কেননা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সাফটার আওতায় শূন্য শুল্কে বাংলাদেশ দেশটিতে পণ্য রপ্তানির সুযোগ পায়। তবে ভারতের উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় চীনের একই পণ্যে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ভারত চীন থেকে পণ্য আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে যে প্রতিকার পেতে চায়, সেই লক্ষ্য কার্যকর কঠিন হয়ে পড়বে। তাই দেশটির উদ্যোক্তাদের দাবি বাংলাদেশ থেকেও কোনো রকম ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে ভারত সরকারকে। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারত সরকারকে আশ্বস্ত করতে হবে বাংলাদেশের মাধ্যমে তাদের উদ্যোক্তারা কোনো রকম ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এবং সাফটার আওতায় দেওয়া সুবিধা যেন অব্যাহত থাকে। কারণ ভারত এরই মধ্যে আমাদের পাট ও কস্টিক সোডা রপ্তানিতে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে।

তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু কালের কণ্ঠকে বলেন, ভারতের উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা দিতে পোশাক খাতে আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করা হয়েছে। শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের রপ্তানি করার সুযোগ থাকায় আয়  বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হলো।

বাংলাদেশ এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেন, পোশাক পণ্য আমদানিতে ভারত শুল্ক বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের নতুন বাজার হিসেবে রপ্তানি আয় বাড়বে। তিনি বলেন, ভারতের বিশাল পোশাকের বাজারে এরই মধ্যে আমাদের ১১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ ডলার আয় করেছে, যার ৮৩.৫ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের মোট লক্ষ্য ধরা হয়েছে তিন হাজর ৯০০ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে দুই হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার আসবে বলে ধরা হয়েছে, যা মোট রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার ৮৩.৮২ শতাংশ। 



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews