পাঁচ সৌদি অধিকার আন্দোলনকর্মীর সামনে শিরশ্ছেদের খড়্গ ঝুলছে। তাঁদের অপরাধ? সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘তাঁরা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন; মিছিলে নেমে সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়েছেন এবং বিক্ষোভের ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন।’এই পাঁচজনের মধ্যে একজন হলেন নারী অধিকারকর্মী ইসরা আল গোমগাম। শিয়াপ্রধান পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে তাঁর বাড়ি। এই পাঁচজনই দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন। এখন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তাঁদের মৃত্যুদণ্ডের রায় চেয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, আদালত তঁাদের মৃত্যুদণ্ড দেবেন।

এই অধিকারকর্মীদের দুর্দশাই প্রমাণ করে, সৌদি আরব ‘উদারপন্থার দিকে হাঁটছে’ বলে যে দাবি করছে, তা একেবারে অন্তঃসারশূন্য। ২০১৫ সালে বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর বাদশাহ হিসেবে সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ দায়িত্ব নেন। তখনই বলা হচ্ছিল, সৌদি আরবে পরিবর্তন আসছে। সরকার সংস্কারের পথে হাঁটবে। এরপর কার্যত সরকারপ্রধান হিসেবে দৃশ্যপটে আসেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন সালমান। তিনি যেসব ‘আধুনিকায়নের’ উদ্যোগ নিয়েছেন, তা পশ্চিমা দেশগুলোসহ সারা বিশ্বকেই আশান্বিত করেছে।

নিউইয়র্ক টাইমস-এর কলামিস্ট থমাস ফ্রিডম্যান সালমানের এই পদক্ষেপগুলোকে ‘আরব বসন্ত’ উল্লেখ করে একটি কলামও লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘বহু বহু বছর পর আরবে একজন নেতা এলেন, যিনি তাঁর দেশ বদলে দেওয়ার জন্য নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।’হ্যাঁ, এটা ঠিক যে সালমান নারীদের গাড়ি চালাতে, নিজেদের ব্যবসা দেখাশোনা করতে এবং খেলাধুলায় অংশ নিতে দিচ্ছেন। সিনেমা হলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে এবং রক কনসার্টের ওপরও এখন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু সৌদি সরকার ভিন্নমতাবলম্বীদের বিষয়ে একচুলও নীতি পরিবর্তন করেনি। কেউ সরকারের কোনো রকম সমালোচনা করলেই হয় তার শিরশ্ছেদ করা হচ্ছে, নয়তো তার ওপর নেমে আসছে ভয়ানক নির্যাতন। ইয়েমেনে নিষ্ঠুরভাবে হামলা চালিয়ে অগণিত নিরপরাধ মানুষ তারা মেরে ফেলছে।

গত বছরজুড়েই সৌদি সরকার কয়েক ডজন মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীকে আটক করেছে। জাতিসংঘ এর তীব্র সমালোচনা করেছে। এই ‘সংস্কারপন্থী’ সরকারের আমলে ২০১৬ সালে কমপক্ষে ১৫৪ জন এবং ২০১৭ সালে ১৪৬ জনের শিরশ্ছেদ করা হয়েছে। তাঁদের অনেকেই রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী, যাঁদের সৌদি সরকার বরাবরই ‘সন্ত্রাসী’ বলে থাকে। যে সরকার নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়, কিন্তু মুখ খোলার জন্য তাঁদের শিরশ্ছেদ করে, সেই সরকারকে ‘সংস্কারপন্থী’ বলা কতটুকু সমীচীন, তা আমার মাথায় আসে না।

১৯৭৮ সালে ইরানে অভ্যুত্থানের পর মুসলিম বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেধে যায়। এই দুটি দেশের সরকারই চূড়ান্ত কর্তৃত্ববাদী আর উৎপীড়ক। তাদের মধ্যে পার্থক্য হলো—ইরান বরাবরই পশ্চিমা বিরোধিতা করে আসছে; অন্যদিকে সৌদি আরব পশ্চিমাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছে। এ কারণে অনেক পশ্চিমা ধারাভাষ্যকার ইরানকে ‘শয়তানের চারণভূমি’ এবং সৌদি আরবকে ‘স্থিতিশীলতার শক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।

গত মাসে ইয়েমেনের একটি স্কুলবাসের ওপর সৌদি বিমান থেকে চালানো হামলায় ৩৩ জন শিশু নিহত হয়। ওই ঘটনার পরপরই যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট সৌদি-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের পক্ষে বলতে গিয়ে বলেন, ‘ইসলামি উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরব এক জোট হয়ে লড়াই করছে। ব্রিটেনের রাস্তায় বোমা ফাটানো ঠেকাতে সৌদি সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’ কিন্তু আদতে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী চক্র সৃষ্টির দায় বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় সৌদি আরবের বেশি।

১৯৭০-এর দশকের পর থেকে তেল বিক্রির অঢেল অর্থ সৌদি আরবের হাতে আসতে থাকে। তখন থেকেই তারা উগ্র ওহাবি মতবাদ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এই অর্থ ছড়াতে থাকে। আফগানিস্তান থেকে সিরিয়ায় জিহাদি আন্দোলনে তারাই তহবিল সরবরাহ করে এসেছে। এমনকি ৯/১১-এর হামলাকারীরাও সৌদির মদদ পেয়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দারা দাবি করেছেন। ২০০৯ সালের একটি মার্কিন তারবার্তায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী সুন্নি সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর প্রধান অর্থদাতা দেশ হলো সৌদি আরব।

এই দেশটির কারণেই ইয়েমেনে লাখ লাখ শিশু এখন অনাহারে-অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে। আর সেই কথা বলতে গেলেই সৌদিতে থাকা অধিকারকর্মীদের কল্লা ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় সৌদি আরব কতটা সংস্কারের পথে এগিয়েছে, তা নিয়ে অবশ্যই বিশ্বকে ভাবতে হবে।

দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিত

কেনান মালিক গার্ডিয়ান পত্রিকার কলামিস্ট



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews