• মাজহার মান্নান

প্রায় দুই বছর ধরে করোনার দাপটে সারা বিশ্বে এক নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এই অদৃশ্য ঘাতক। বিশ্ব অর্থনীতিকে ফেলে দিয়েছে হুমকির মুখে। এরই মধ্যে ওমিক্রনের ছোবল নতুন করে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। মারা যাচ্ছে বহু মানুষ। ওমিক্রনের ছোবল থেকে বাংলাদেশও মুক্ত থাকতে পারেনি। দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১১ দফা নির্দেশনা জারি করেছে ওমিক্রন মোকাবেলায়। এই ১১ দফার বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব হচ্ছে সেটা নিয়েই তৈরি হয়েছে বড় প্রশ্ন। ১১ দফার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দফাটি হলো মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা। ঘরের বাইরে সবাইকে মাস্ক পরতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কতজন মানছে সে নির্দেশনা? স্বাস্থ্যবিধি সর্বত্রই প্রায় উপেক্ষিত। দেশে যখন করোনার সংক্রমণের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তখন স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করার এমন মহোৎসব মোটেও কাম্য নয়। বিভিন্ন ধরনের জরিপে উঠে এসেছে যে, দেশে মাস্ক ব্যবহারের হার এখনও ১৩ থেকে ১৪ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। সাধারণ জনগণ নিয়মিত মাস্ক পরছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। নিয়ম অমান্যকারীদের জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি চরম অবহেলা ও অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ওমিক্রন মোকাবেলায় বিশেষজ্ঞরা টিকার কথা বলেছেন, বিশেষ করে বুস্টার ডোজের ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের এত অধিক জনসংখ্যাকে টিকার আওতায় আনা মোটেও সহজ কাজ নয়। এ পর্যন্ত ৭ কোটি মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া সম্ভব হয়েছে। চার কোটির কাছাকাছি মানুষকে টিকার দুই ডোজ দেয়া সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে বুস্টার ডোজের কার্যক্রমও চলছে। কিন্তু যে বিপুল সংখ্যক জনগণ এখনও টিকার বাইরে রয়েছে তাদের টিকার আওতায় আনা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই এখন ওমিক্রন মোকাবেলার মূল হাতিয়ার। এই স্বাস্থ্যবিধি মানতেই যখন অনীহা, তখন ওমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, লকডাউনে ক্ষতির তুলনায় মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যয় হয় ১৮ ভাগের ১ ভাগ। চিকিৎসকদের মতে, করোনা মোকাবেলায় সার্জিক্যাল মাস্কের কার্যকারিতা প্রায় ৯৫ শতাংশ। করোনা মোকাবেলায় টিকা সবচেয়ে কার্যকর। টিকার পরেই রয়েছে মাস্কের অবস্থান, যেটা খুব সহজলভ্য। সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা নগণ্য। অথচ মাস্ক ব্যবহারের অভ্যাস করে তুলতে পারলে সামাজিক দূরুত্ব মেনে চলার হার ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। মাস্ক ব্যবহারে জীবন ও জীবিকা দুটোই থাকে নিরাপদ। গবেষণায় দেখা গেছে, মাস্ক পরলে করোনায় আক্রান্তের সম্ভাবনা কমে যায় ৩৪ শতাংশ।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নি¤েœাক্ত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ১. নো মাস্ক নো সার্ভিস শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। ২. বাস, ট্রেন ও লঞ্চে টিকেট দেয়ার সময় টিকা সনদ (যদি থাকে) নিশ্চিত করতে হবে। ৩. হোটেল ও রেস্তরাঁয় যেন টিকা সনদ কার্ড ছাড়া কোনভাবেই প্রবেশ করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ৪. মসজিদভিত্তিক প্রচারণা বাড়াতে হবে। জুম্মার নামাজে মানুষকে সচেতন করতে ইমামকে দায়িত্ব দিতে হবে। ৫. স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ অনেক বাড়াতে হবে সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে ৬. সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্রীয় স্লোগান তৈরি করে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। ৭. গণমাধ্যমকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে। ৮. রাষ্ট্রীয় এবং নাগরিক সুবিধাগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে টিকা কার্ড প্রদর্শন নিশ্চিত করতে হবে। ৯. মোবাইল কোর্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। ১০. বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। ১১. বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ কর্মসূচী ত্বরান্বিত করতে হবে। ১২. একটি সচেতনতামূলক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ১৩. জনবহুল স্থানগুলোতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা এবং নজরদারি বাড়াতে হবে।

প্রশাসনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা ছাড়া আপাতত হাতে তেমন অপশন নেই। মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি না মানার একটি প্রবণতা রয়েছে। তাই বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করতে হবে। সবাই যদি স্বাস্থ্যবিধি সঠিক নিয়মে না মানে, তবে ওমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে লকডাউনের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। যেটা হবে আরও ক্ষতিকর। তাই সার্বিক ক্ষতি থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে। গণটিকার হার বাড়াতে হবে অনেকগুণ। সকলকে টিকা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত মাস্ক পরিধানে বাধ্য করতে হবে। ওমিক্রন নিয়ে কিছু ভুল বার্তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে। সেটা হলো ওমিক্রন তেমন শক্তিশালী নয়। এই ভুল বার্তা ক্ষতির মাত্রা বহুগুণে বাড়াবে। ওমিক্রনের ছোবলকে তুচ্ছভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো স্বাস্থ্যবিধির প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া। যারা মাস্ক ব্যবহারে অনীহা দেখাচ্ছে তাদের বেশি বেশি জরিমানার আওতায় আনতে হবে। মোট কথা, যে যেখানে আছে সেখান থেকেই সচেতন থাকতে হবে। ২.৫ টাকার একটি মাস্ক একটি জীবন বাঁচাতে পারেÑএই সত্যটি সাধারণ জনগণের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিতে হবে। মোট কথা, একটি জাগরণ দরকার। যে জাগরণে সবার অংশগ্রহণ থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানানোর ব্যাপারে কোন শিথিলতা দেখানোর সুযোগ নেই। সবার মাঝে এই ধারণাটি জাগ্রত হোক-করোনার কাছে মানিবো না হার/সর্বদা মাস্ক করবো ব্যবহার।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক,

বিএএফ শাহীন কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews