সম্প্রতি ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’দিন ব্যাপী একটি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। আমার সুযোগ হয়েছিল ওই কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করার। দেশ-বিদেশের বহু গবেষকের উপস্থিতিতে কনফারেন্সটি সফলভাবেই সম্পন্ন হয়। স্বভাবতই যেকোন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সের শেষের দিন কনফারেন্স ডিনার বা গালা পার্টির আয়োজন করা হয়। এই পার্টিতে মূলত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সে দেশের কৃষ্টি-কালচার বাইরের দেশের গবেষকদের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। সাধারণত একটি কনফারেন্স আয়োজন করতে আয়োজক কমিটির যথেষ্ট শ্রম যায়। একটানা পরিশ্রমের পরে সবাই খুবই ক্লান্ত হয়ে যায়। এজন্য রিফ্রেশমেন্টের দরকার পড়ে। যে উদ্দেশ্যে এই অনুষ্ঠানটিকে গালা পার্টি নামেও আখ্যায়িত করা হয়। এছাড়া এই পার্টির মাধ্যমে শিক্ষক, শিক্ষার্থীর মধ্যে ব্যবধান বেশ কমে আসে। বাইরের দেশের গবেষকসহ দেশীয় অনেক গবেষকের সাথে ইন্টারাকশান হয়, যাতে মূলত রিসার্চ কলোবেরশনের সুযোগ বৃদ্ধি পায়। যাইহোক, এখানেও ব্যতিক্রম হয়নি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর নৈশভোজের আয়োজন করা হয় ‘বুড়িগঙ্গা রিভার ভিউ রেস্টুরেন্ট’-এ। জাহাজের ছাদের মতোই বিশাল এই রেস্তোরাঁর অবস্থান ঢাকার সদরঘাটের বিআইডব্লিউটিএ টার্মিনাল ভবন-২ এর ছাদের ওপর। রেস্টুরেন্টটি একেবারে বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষা এবং রেস্টুরেন্টে বসে সন্ধ্যা পরবর্তী সৌন্দর্যটা বেশ উপভোগ্য বলা যায়। ঘাটে বাঁধা সারি সারি লঞ্চ, যাত্রীর জন্য জাহাজিদের হাঁক, আর তার পেছনে বিস্তৃত বুড়িগঙ্গা নদী। অপরূপ সৌন্দর্যই বটে। কিন্তু বেশ কিছু সমস্যাও আছে। যেমন- রেস্টুরেন্টটির খোলা ছাদে গিয়ে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে যে কারও নাক ও কান বন্ধ রাখতে হবে। কারণ, বুড়িগঙ্গার যে দূষণ তার তীব্র গন্ধ নাকে গিয়ে সৌন্দর্যের পুরো মহিমা বিলীন করে দেয়। সেইসাথে বড় বড় লঞ্চের সাইরেনে মাঝেমধ্যে শরীর কেঁপে ওঠে। তাই কানও এখানে বন্ধ রাখাটাই শ্রেয়। অর্থাৎ রাতের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষা এই রেস্টুরেন্টে আসা ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য কিন্তু সাধিত হবে না। অন্য কারও হলেও অন্তত আমার হয়নি।

ছোট থেকেই আমরা জেনে আসছি, যুগে যুগে নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে বহু সভ্যতা। আপন গতিতে ছুটে চলা নদীর পানির ওপর নির্ভর করেছে সেখানকার মানুষের জীবিকা, সংস্কৃতি, দর্শন ও জীবনধারা। কখনো কখনো নদীর গর্ভে হারিয়েও গেছে অনেক সভ্যতা। তবে বর্তমান বিশ্বের বহু নামকরা শহর রয়েছে যেগুলোকে বুকে ধারণ করে রেখেছে হাজার বছরের পুরনো বিখ্যাত সব নদী। নদীর তীরে গড়ে ওঠা জনবসতির ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা সেসব নদীকে দিয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া পরিবহণের সুবির্ধাথে অভ্যন্তরীণ উৎপাদিত দ্রব্য আমদানি-রপ্তানিতে নদীপথেই কম খরচের সুযোগ-সুবিধা আছে। এজন্য তখনকার দিনে নদীপথটাই প্রধান পরিবহনের মাধ্যম ছিল। বলা যায়, কৃষি থেকে শিল্প, রাজনীতি থেকে বিনোদন, সৌন্দর্য থেকে আত্মতৃপ্তি ইত্যাদি মিলিয়েই নদীর তীরে রাজধানী স্থাপন করার অনুকূলে। এজন্য প্রাচীনকালে নদীকে কেন্দ্র করে জনপদ এবং হাটবাজার গড়ে উঠতো। কালের বিবর্তনে তাই অধিকাংশ নদীর পাশেই বড় বড় শহর এবং রাজধানী অবস্থিত। একটু খেয়াল করলে দেখা যায়, লন্ডন শহর গড়ে উঠেছে টেমস নদীকে কেন্দ্র করে। এই টেমসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে জনবসতি, আধুনিক শহর আর শহরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন ও অর্থনৈতিক স্থাপনা। ইতালির ভেনিস ঐতিহাসিক এক জায়গা। এই ভেনিসে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে সঙ্গী একমাত্র ছোট ডিঙি নৌকা। ভেনিসে বসবাস করা প্রতিটি পরিবারের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা হলো এই নৌকা। বাড়ির ঘাটেই বাঁধা থাকে নিজস্ব নৌকা অথবা স্পিড বোট। পানির ওপর ভেসে থাকা দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ, গা ঘেঁষে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা স্বচ্ছ পানির লেক। পুরো শহরের বুকজুড়ে থাকা পানিতে প্রাসাদের প্রতিবিম্ব স্পষ্ট, আকাশের মেঘগুলোও লেকের পানিতে লুটোপুটি খায়। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব নিউইয়র্কের মধ্য দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে হাডসন নদী। এতে নিউজার্সি ও নিউইয়র্কের কিছু অংশ বিভেদ হয়েছে। এই নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের স্থাপনা। মানুষের আনন্দভ্রমণ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক বাণিজ্যের নানা দিককে প্রভাবিত করে আসছে এই নদী। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের রাজধানী এবং অস্ট্রেলিয়া তথা ওশেনিয়ার বৃহত্তম শহর সিডনি। শহরটি অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের জ্যাকসন বন্দরকে ঘিরে অবস্থিত। আর এই জ্যাকসন বন্দর গড়ে উঠেছে সিডনি হারবার, মিডল হারবার, উত্তর হারবার, লেন কোভ এবং পররামাতা নদীর সমন্বয়ে। প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম উদাহরণ হলো মিসরীয় সভ্যতা। প্রাচীন এই সভ্যতার সব নিদর্শন টিকে আছে সারি সারি। তারই মাঝ দিয়ে মিসরের বুক চিরে বয়ে চলেছে নীল নদ। মূলত নীলনদকে কেন্দ্র করেই মিসর সভ্যতার উৎপত্তি।

চীনের সবচেয়ে বড় সাংহাই শহরকে দুই ভাগে ভাগ করেছে হুয়াংপু নদী। রাতের সাংহাইয়ে বড় যে বিষয়টা চোখে পড়ে তা হচ্ছে আলো আর আলো। হুয়াংপু নদীতে ভেসে চলে নানারঙের আলোয় আলোকিত প্রমোদতরী। ভাসমান রেস্তোরাঁও কম নয়। এই নদী তো বটেই পুরো সাংহাই শহর ভালো করে দেখতে হলে ওরিয়েন্টাল পার্ল টিভি টাওয়ারের বিকল্প নেই। এর ওপরে পর্যটকেরা উঠতে পারেন টিকিট কেটে। কাচেঘেরা গোলাকার (যেটা বাইরে থেকে দেখতে মুক্তার মতো) ঘরটা থেকে পুরো সাংহাই শহরই চোখে পড়ে। এই টাওয়ারের আশপাশের এলাকায় দারুণ সব বহুতল অট্টালিকা। বেশির ভাগই কাচ আর ইস্পাতে মোড়া। রাতে সেগুলো সেজে ওঠে বর্ণিল আলোর ছটায়। দক্ষিণ চীনের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক, শিল্প ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গুয়াংজু। এটি প্রাচীন বাণিজ্য বন্দর হিসেবেও পরিচিত। গুয়াংজুকে সমৃদ্ধ করেছে ক্যান্টন টাওয়ার। এটি গুয়াংজু নিউ সিটি সেন্ট্রাল অ্যাক্সিস ও পার্ল নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত। এটি বর্তমানে চীনের সর্বোচ্চ এবং বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ টাওয়ার। শিপে করে যেকেউ টিকিটের বিনিময়ে পার্ল রিভার ভ্রমণ করতে পারে। পার্ল নদীতে ভ্রমণ করার সময় ক্যান্টন টাওয়ারটি রংধনুর মতো আলোকিত করে। ক্যান্টন টাওয়ার একটি দর্শনীয় ভবন এবং সেই সঙ্গে দর্শনীয় স্থানও। ২০২১ সালে একবার সুযোগ হয়েছিল পার্ল নদীতে ভ্রমণরত অবস্থায় ক্যান্টন টাওয়ারের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার। একটি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা ছিল গুয়াংজুতে। আমাদের হোটেলটি ছিল পার্ল রিভারের গা ঘেঁষে। হোটেল থেকে ক্যান্টন টাওয়ার, পার্ল রিভারের সৌন্দর্য সত্যিই উপভোগ্য ছিল। সন্ধ্যায় যখন আমরা শিপে ভ্রমণ করলাম তখন মনে হলো এ এক ভিন্ন জগত। শিপের খোলা ছাদে বসে চার দিককার আলোর ঝলকানি, ক্যান্টন টাওয়ারের সৌন্দর্য মনকে পুলোকিত করেছিল। তবে শিপেও বেশ শিক্ষণীয় কিছু বিষয় ছিল। শিপে বিভিন্ন ধরনের অ্যাডভেঞ্চার, খাদ্য ও পানীয়, বিয়ের অনুষ্ঠান, নানান সিনেমা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, শিক্ষা এবং কেনাকাটাসহ নানা সুবিধা রয়েছে। শিপে চীনা এবং ইংরেজি ভাষায় গুয়াংজুর হাজার বছরের ইতিহাসের ভিডিওর সাথে অডিও রেকর্ড বাজতে থাকে। গুয়াংজুর হাজার বছরের ইতিহাস ধীরে ধীরে পর্যটকদের সামনে উন্মোচিত হয়। ক্যান্টন টাওয়ার থেকে পার্ল নদী পর্যন্ত দুই পাশের পানির সৌন্দর্য, আলোর বর্ণিল সৌন্দর্য দেখে সবাই মুগ্ধ হয়। চীনের সব শহরেই মোটামুটি এমন নদী চোখে পড়বে। যেখানে প্রমোদতরিতে ভ্রমণ করে আশাপাশের বহুতল ভবনগুলোর রাতের আলো ঝলকানির এক অপূর্ব সৌন্দর্য চোখে পড়ে।

কিন্তু আমাদের দেশের ঘটনা পুরোপুরি উল্টো। বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করেই ঢাকা শহরে রাজধানীর ভিত্তি প্রস্তর গড়ে উঠেছে ঠিকই, কিন্তু এই বুড়িগঙ্গার দূষণ এবং আশপাশের পরিবেশ কোনটাই বাইরের বর্ণিত কোনো নদীর ধারেপাশে নেই। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ৪০০ বছর আগে এই নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিল ঢাকা শহর। ব্রহ্মপুত্র আর শীতলক্ষ্যার পানি একত্রে মিশে বুড়িগঙ্গা নদীর সৃষ্টি হয়েছিল। তবে বর্তমানে এটা ধলেশ্বরীর শাখাবিশেষ। কথিত আছে, গঙ্গা নদীর একটি ধারা প্রাচীনকালে ধলেশ্বরী হয়ে সোজা দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে মিশেছিল। পরে গঙ্গার সেই ধারাটির গতিপথ পরিবর্তন হলে গঙ্গার সাথে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে প্রাচীন গঙ্গা এই পথে প্রবাহিত হতো বলেই এমন নামকরণ। মূলত ধলেশ্বরী থেকে বুড়িগঙ্গার উৎপত্তি। কলাতিয়া এর উৎপত্তিস্থল। বুড়িগঙ্গার সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজ করেছিলেন বাংলার সুবাদার মুকাররম খাঁ। তার শাসনামলে শহরের যে সকল অংশ নদীর তীরে অবস্থিত ছিল, সেখানে প্রতি রাতে আলোক সজ্জা করা হতো। এ ছাড়া নদীর বুকে অংসখ্য নৌকাতে জ্বলত ফানুস বাতি। তখন বুড়িগঙ্গার তীরে অপরূপ সৌন্দের্যের সৃষ্টি হতো। ১৮০০ সালে টেইলর বুড়িগঙ্গা নদী দেখে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, বর্ষাকালে যখন বুড়িগঙ্গা পানিতে ভরপুর থাকে তখন দূর থেকে ঢাকাকে দেখায় ভেনিসের মতো।

চীনের একটি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে গিয়ে আমার যে অনুভূতি হয়েছিল সেখানে আমাদের বর্তমান বুড়িগঙ্গা দেখে বিদেশিদের কেমন অনুভূতি হবে সেটা সুস্পষ্ট। বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করে তার পুরাতন সৌন্দর্যকে ফিরিয়ে দেওয়া তেমন কঠিন নয়। মাঝেমধ্যে বেশ তোড়জোড় লক্ষ করা গেলেও সেগুলো টেকসই নয়। দূষণের কারণে এ নদীর পানি তার স্বাভাবিক রঙও হারিয়ে ফেলেছে। বুড়িগঙ্গার দূষণ দেশের অন্যসব নদীর জন্যও কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীর পানি নিয়ে বহু গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। দূষণের ভয়াবহতা, প্রাণিকূলের জন্য ক্ষতিকর দিকসহ ভবিষ্যৎ করণীয় বহু বিষয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এসব গবেষণা শুধুমাত্র লিপিবদ্ধ হয়েই আছে। অর্থাৎ বুড়িগঙ্গাসহ এর আরপাশের নদী দূষণ কমানোর তেমন কোনো উদ্যোগ কোনো সরকারই সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারেনি। একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে জানা যায়, বুড়িগঙ্গার দূষণ অন্তত ছয়টি নদীর পানি দূষণে ভূমিকা রাখছে। এই তথ্য শুধু উদ্বেগজনকই নয় বরং আতঙ্কের। এতে বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গা নদীর বিষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দেশের অন্য ছয় নদীতে। বর্ষাকালে এই দূষিত পানি বিভিন্ন নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। সদরঘাটের অতি পরিচিত দূষণ এখন আর বুড়িগঙ্গাতে সীমাবদ্ধ নেই। তা ছড়িয়ে পড়ছে চাঁদপুর অঞ্চলের পদ্মা এবং মেঘনার মোহনাতেও। বুড়িগঙ্গার দূষিত পানি দেশের বৃহৎ নদী পদ্মা, মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, গোমতী, ধলেশ্বরী আর শীতলক্ষ্যায়ও দূষণ ছড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভয়াবহ এই দূষণ রোধ করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে এসব নদীর পানিও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাবে।

পরিসংখ্যান বলছে, নদীপথে ঢাকা থেকে বরিশাল অঞ্চলে প্রতিদিন ৭ শতাধিক নিবন্ধিত যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করছে। এসব যানে প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ মানুষ যাতায়াত করে। তাদের ত্যাগ করা কমপক্ষে তিন হাজার ঘনমিটার বর্জ্য প্রতিদিন বুড়িগঙ্গাসহ বিভিন্ন নদীতে সরাসরি ফেলা হচ্ছে। বুড়িগঙ্গার পানি ইতোমধ্যে এতটাই বিষাক্ত হয়েছে যে মাছ, পোকামাকড়সহ কোনো প্রাণীই এ পানিতে বেঁচে থাকতে পারছে না। পচা দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে নাকে-মুখে রুমাল চেপে সদরঘাট ছাড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। শুধু মানব বর্জ্যই নয়, শিল্পকারখানার বর্জ্য, রাজধানীর ময়লা-আবর্জনা এবং নৌযানের সব ধরনের আবর্জনা নির্বিচারে বুড়িগঙ্গায় ফেলা হচ্ছে। দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গা যেভাবে জলজ প্রাণীর জীবন ধারণের অযোগ্য হয়ে পড়েছে তা উদ্বেগজনক। নিরুপায় হয়ে এ নদীর পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হয় নদীপাড়ের হাজার হাজার মানুষ। যে কারণে জনস্বাস্থ্যের জন্যও তা হুমকি সৃষ্টি করছে।

এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দিয়ে বুড়িগঙ্গার সংস্কারে গতি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরি। বুড়িগঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ঘিরে দখলের যে মহোৎসব চলছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, গত ৫০ বছরে আমাদের দেশে প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার নদীপথ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে দখলমুক্ত করে নদীর স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দখলবাজদের বিরুদ্ধেও আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি। বুড়িগঙ্গার এই বেহালদশা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বুড়িগঙ্গার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বর্জ্য অপসারণ এবং খনন কাজ যথাশীঘ্রই শুরু করতে হবে। মৃতপ্রায় বুড়িগঙ্গার অস্তিত্ব হুমকির মুখে এবং শিল্প-কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল ও বর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্যসহ অন্যান্য বর্জ্য প্রতিদিন বুড়িগঙ্গার পানিকে দূষিত করছে। এসব দূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ গুরুত্বসহকারেই বিবেচনায় নিতে হবে। লক্ষণীয়, কয়েক বছর ধরে ঢাকার আশপাশের নদ-নদী ও জলাশয়গুলো উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে আসছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শুরুতে বেশ তোড়জোড় লক্ষ করা গেলেও অজ্ঞাত কারণে কিছুদিন পরে তা থেমে যায়। আবার এমনও ঘটেছে, উচ্ছেদ অভিযানের পরপরই আবার বেদখল হয়ে গেছে। এসব দিক আমলে নিয়েই এই উচ্ছেদ অভিযান সফল করতে হবে। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের সংস্কৃতি দেশবাসী আর দেখতে চায় না। বুড়িগঙ্গার পানি দেশের অন্য বিভিন্ন নদীর পানি দূষণে ভূমিকা রাখায় সংশ্লিষ্ট নদীতীরের অধিবাসীরাও দূষণে আক্রান্ত হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে নদীদূষণ রোধে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। নদীতে শিল্প বর্জ্য ও মানব বর্জ্য ফেলা বন্ধে নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা। পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে এসব কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। দেশ বাঁচাতে হলে নদীগুলো বাঁচাতে হবে এবং আমাদের বাঁচতে হলে নদী রক্ষা করতে হবে। নীতি নির্ধারকদের বিষয়গুলো বাস্তবতার নিরিখে অনুধাবন পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
[email protected]



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews