গত ১০ মাস ধরে মাদ্রাসা শিক্ষায় জামায়াতে ইসলামী একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদর্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, এ দেশের মানুষ নিজেদের অর্থে মাদ্রাসা শিক্ষা শুরু করেছেন। কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করেননি। ইসলামি ভাবধারা, ইসলামি তাহজিব, তামাদ্দুন, এদেশে ত্বরিকা, তাসাউফ যদি ঠিক থাকে শুধু এ উদ্দেশ্যে এটা করা হয়েছে। মাদ্রাসাগুলোতে এত বছর কেউ কেউ রাজনীতি করেছে ব্যক্তিগতভাবে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সচেতনভাবে চেষ্টা করেছে যাতে কোনও ধরনের রাজনীতি করতে না পারে। এতদিন গোপনে অনেকে অনেক কিছু করছে। কিন্তু গত ১০ মাস ধরে আমরা শঙ্কিত মাদ্রাসা শিক্ষায় সরাসরি হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণ করছে জামায়াত। এটা সমাজের জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর বিষয়।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর মহাখালীস্থ গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটির সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, ২০ হাজার দরবার, ২০ হাজার প্রতিষ্ঠান ও ৫৫ লাখ ছাত্র-ছাত্রীর প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। এর আগে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বেশি থাকলেও বিগত আওয়ামী সরকারের মাদ্রাসাবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে ছাত্রছাত্রী অনেক কমেছে। তবে এখনও ৫৫ লাখ শিক্ষার্থী আছে এবেং ২০ হাজার প্রতিষ্ঠান আছে।

তিনি বলেন, একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যদি শিক্ষাক্রম তৈরি হয়, শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হয় তাহলে আফগানিস্তানের যে দশা হয়েছে আমাদের এখানেও একই রকম অবস্থা হবে। তাদের (জামায়াত) তৈরি কারিকুলামে মা, শিক্ষার্থী তৈরি করা হচ্ছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত ভয়ংকর বিষয়।

ইনকিলাব সম্পাদক আরও বলেন, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’কে বলেছি, আপনি জ্ঞানী মানুষ জ্ঞান চর্চা করুন। আপনি দল করবেন না। কিন্তু উনি কথা শোনেননি। ওরা (জামায়াত) পুরো মাদ্রাসা বোর্ডকে দলের আখরা বানিয়েছে। মাদ্রাসা অধিদফতরও ওই দলের দখলে। আমরা চাই বিএনপি ক্ষমতায় থাকুক আর বিরোধী দলে থাকুক, বাংলাদেশের একটা অভিভাবক, তাদের দায়-দায়িত্ব আছে। শুধু মাদ্রাসা শিক্ষা না, কোনও শিক্ষাই যেন নির্দিষ্ট দলের নিয়ন্ত্রণে না থাকে। আর মাদ্রাসায় যাতে কোনও রাজনীতি না হয়। মাদ্রাসা আমরা ইসলামি ছাত্রশিবির এমনকি ছাত্রদলও চাই না। দ্বীনের প্রয়োজনে যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু চর্চা হবে। ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতি করবে, ভোট দেবে, এটা তাদের অধিকার।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, রাজনৈতিক ভিন্ন মত থাকতে পারে, এটা ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু কোনও দলের প্রভাব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর এমনভাবে চাপানো ঠিক না, যেটাতে মনে হয় যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখল করা হয়েছে। এটা জবরদস্তি। সেটা কৌশলেই হোক আর বাস্তবেই হোক। আমরা (বিএনপি) এটার বিরোধী।

জনমত গঠনে আলেম-ওলামারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের নেতা (জিয়াউর রহমান) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা যখন দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তখন এদেশের মানুষ এমন একটি রাজনৈতিক দল দেখতে চেয়েছিল, যে দল তাদের আদর্শকে ধারণ করবে, ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি অনুগত থাকবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনোভাব ধারণ করবে। সে কারণে তিনি (জিয়াউর রহমান) সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এবং মূলনীতিতে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও আস্থার কথা বলেছেন। আমরা তারই কর্মী, শহীদ জিয়া যা করেছিলেন পরবর্তীতে তা অন্যরা বদলাতে পারেনি, এরপরে অনেক সরকার এসেছে, কিন্তু বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও আস্থা বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। আপনাদের হাত দিয়ে প্রতিবছর লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে এবং তারা সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আমি আপনাদের কাছে ভোট চাইতে আসিনি, দোয়া চাইতে এসেছি। আমি বিশ্বাস করি আপনাদের দোয়া, সহযোগিতা আমাদের খুব কাজে লাগবে।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি ইসলামে মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল। আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দল, সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজনকারী দল এবং মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস সংবিধানে সংযুক্তকারী দল। এবারও সংস্কার কমিশনে আমরা এর পক্ষে অবস্থান নিয়েছি এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা মাদ্রাসা শিক্ষা সম্প্রসারণ চাই, কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষাঙ্গণকে একটি নির্ধারিত দলীয় রাজনীতির কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হোক সেটা চাই না।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ইসলাম, কোরআন, সুন্নাহর বিপরীতে শরীয়তবিরোধী কোনও আইন প্রণীত হবে না। আমরা রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, ইসলামপন্থি সব মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর নায়েবে আমিরের সঙ্গে কথা বলেছি, ছারছীনা পীর সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি, আলিয়া মাদ্রাসা ধারার যেসব মুরব্বি আছেন, তাদের সঙ্গে দেখা করেছি, কথা বলেছি। উদ্দেশ্য একটাই বাংলাদেশের সব জনগোষ্ঠীকে আমরা একত্রিত করে, ঐক্যবদ্ধ করে এমনভাবে দেশ পরিচালনা করতে চাই যেখানে বিভক্তি থাকবে না।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী। এসময় জমিয়াতের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews