পাঠ্যপুস্তকে কবিতা বিকৃতি এবং নানা ধরনের ভুলত্রুটি নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মরণিকায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতা বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয়, এ প্রকাশনায় জাতীয় সঙ্গীত এবং প্রধানমন্ত্রীর বাণীতেও বানান ভুল করা হয়েছে। এমনকি সম্পাদকের নিজের বাণীতেও একাধিক বানান ভুল আছে। এসব নিয়ে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
রোববারই এ ঘটনা তদন্ত এবং দায়ীদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। স্মরণিকাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘কবিতা বিকৃতিসহ অন্যান্য বিষয় আমার নজরে এসেছে। কার বা কাদের কারণে এমন হল তা বের করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।'
রোববার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ৪৬তম শীতকালীন জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০১৭ এর পুরস্কার বিতরণী ছিল। এ উপলক্ষে ‘খেলাধুলা করবো, সুস্থ স্বদেশ গড়বো' শীর্ষক এ স্মরণিকা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এতে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের বাণী স্থান পায়।
প্রকাশনাটিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা অন্নদাশঙ্কর রায়ের একটি কবিতা উৎকলন করা হয়। লেখা হয়, ‘যত কাল রবে পদ্মা-মেঘনা-গৌরী-যমুনা বহমান/তত দিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান'।
কিন্তু উদ্ধৃতিটিতে ভুল আছে। অন্নদাশঙ্কর রায় রচিত কবিতাটিতে লেখা হয়েছিল ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/গৌরী মেঘনা বহমান/ ততকাল রবে কীর্তি তোমার/শেখ মুজিবুর রহমান'।
স্মরণিকায় উদ্ধৃত কবিতাংশে ‘যমুনা'র জায়গায় ‘মেঘনা' আর ‘মেঘনা'র জায়গায় ‘যমুনা' লেখা হয়েছে।
প্রথম লাইনে নদীগুলোর নামের সংযোগে কোনো হাইফেন না থাকলেও তা ব্যবহার করা হয়েছে।
‘যতকাল' এবং ‘ততকাল' অভিন্ন শব্দ হলেও লেখা হয়েছে ‘যত কাল' এবং ‘তত কাল'। অর্থাত্, এক শব্দকে ভেঙে দুটি করা হয়েছে। আর এ কবিতাটি যে কবি অন্নদাশঙ্কর রায় রচিত, সেটিরও উল্লেখ নেই এতে।
স্মরণিকার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীর নাম লেখা আছে। প্রধান উপদষ্টো হিসেবে আছেন এ মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের দুই সচিব মো. সোহরাব হোসাইন ও মো. আলমগীরের নাম। উপদষ্টো হিসেবে আছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। সম্পাদক হলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব শাহেদুল খবীর চৌধুরী। সদস্য হিসেবে আছেন মাউশির উপপরিচালক ফারহানা হক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাসুদা বেগম এবং মাউশির সহকারী পরিচালক আবদুস সালাম।
এ প্রসঙ্গে সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। উপদষ্টোদের মধ্যে শুধু ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ফোনে পাওয়া গেছে। তিনি প্রথমে যুগান্তরকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভুলের কথা আমার জানা নেই। পরে ভুল ও কবিতা বিকৃতির কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘এ স্মরণিকার কাজের সঙ্গে আমরা জড়িত ছিলাম না। কমিটির কোনো সভা করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আমার কাছ থেকে শুধু বাণী নেয়া হয়েছে।'
জানা গেছে, ১৯৭১ সালের জুলাইয়ে কলকাতার প্রকাশনা সংস্থা অন্যদিন থেকে প্রকাশিত ‘গঙ্গা থেকে বুড়িগঙ্গা' কাব্যগ্রন্থে প্রথমবার ‘বঙ্গবন্ধু' শিরোনামে অন্নদাশঙ্কর রায়ের এ কবিতা প্রকাশিত হয়।
অন্যদিনের স্বত্বাধিকারী শিশির ভট্টাচার্য সম্পাদিত ওই কাব্যগ্রন্থের ১২ নম্ব্বর পৃষ্ঠায় জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা' কবিতার নিচে অন্নদাশঙ্করের ‘বঙ্গবন্ধু' কবিতাটি ছাপা হয়।
এতে লেখা হয়, ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/গৌরী মেঘনা বহমান/ ততকাল রবে কীর্তি তোমার/ শেখ মুজিবর রহমান।/ দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা/ রক্ত গঙ্গা বহমান/ তবু নাই ভয়, হবে হবে জয়/জয় মুজিবর রহমান'।
কবিতাটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের বানান ‘শেখ মুজিবর রহমান' লেখা হয়েছিল। কলকাতায় সে সময় মুজিবুরের বদলে মুজিবর লেখা হতো বলে সেখানকার একাত্তরের বিভিন্ন সংবাদপত্র ঘেঁটে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তবে ১৯৯৮ সালে অন্নদাশঙ্কর রায় কলকাতার স্বনামধন্য দে'জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত ‘কাঁদো, প্রিয় দেশ' নামে তার প্রবন্ধের বইয়ের একটি স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধে নিজের লেখা ওই কবিতার উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের বানান সংশোধন করে দেন।
ওই প্রবন্ধে কবিতাটি রচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন তিনি। ওই বইয়ের ১২২ নম্ব্বর পৃষ্ঠায় অন্নদাশঙ্কর তার ওই কবিতা বিকৃত করার অভিযোগ তোলেন বাংলাদেশের এক বক্তার বিরুদ্ধে।
তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানের বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন, একজন বক্তা চমত্কার বাংলায় বক্তৃতা দিয়ে উল্লেখ করে আমার কবিতার পঙক্তি একটু উল্টিয়ে ‘যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা/গৌরী যমুনা বহমান/ ততকাল রবে কীর্তি তোমার/ শেখ মুজিবুর রহমান'।"
এদিকে স্মরণিকায় শুধু কবিতা বিকৃতিই করা হয়নি, বিভিন্ন ধরনের বানানও ভুল আছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণীতে অন্তত তিনটি বানান ভুল আছে। জাতীয় সঙ্গীতে ‘আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি'র বাঁশি বানানে চন্দ্রবিন্দু দেয়া হয়নি। সম্পাদকের বাণীতে অন্তত চারটি বানান ভুল আছে।
পাঠ্যপুস্তকে কবিতা বিকৃতি এবং নানা ধরনের ভুলত্রুটি নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মরণিকায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতা বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে।শুধু তাই নয়, এ প্রকাশনায় জাতীয় সঙ্গীত এবং প্রধানমন্ত্রীর বাণীতেও বানান ভুল করা হয়েছে। এমনকি সম্পাদকের নিজের বাণীতেও একাধিক বানান ভুল আছে। এসব নিয়ে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে।রোববারই এ ঘটনা তদন্ত এবং দায়ীদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। স্মরণিকাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশনা।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘কবিতা বিকৃতিসহ অন্যান্য বিষয় আমার নজরে এসেছে। কার বা কাদের কারণে এমন হল তা বের করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।'রোববার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ৪৬তম শীতকালীন জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০১৭ এর পুরস্কার বিতরণী ছিল। এ উপলক্ষে ‘খেলাধুলা করবো, সুস্থ স্বদেশ গড়বো' শীর্ষক এ স্মরণিকা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।এতে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের বাণী স্থান পায়।প্রকাশনাটিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা অন্নদাশঙ্কর রায়ের একটি কবিতা উৎকলন করা হয়। লেখা হয়, ‘যত কাল রবে পদ্মা-মেঘনা-গৌরী-যমুনা বহমান/তত দিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান'।কিন্তু উদ্ধৃতিটিতে ভুল আছে। অন্নদাশঙ্কর রায় রচিত কবিতাটিতে লেখা হয়েছিল ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/গৌরী মেঘনা বহমান/ ততকাল রবে কীর্তি তোমার/শেখ মুজিবুর রহমান'।স্মরণিকায় উদ্ধৃত কবিতাংশে ‘যমুনা'র জায়গায় ‘মেঘনা' আর ‘মেঘনা'র জায়গায় ‘যমুনা' লেখা হয়েছে।প্রথম লাইনে নদীগুলোর নামের সংযোগে কোনো হাইফেন না থাকলেও তা ব্যবহার করা হয়েছে।‘যতকাল' এবং ‘ততকাল' অভিন্ন শব্দ হলেও লেখা হয়েছে ‘যত কাল' এবং ‘তত কাল'। অর্থাত্, এক শব্দকে ভেঙে দুটি করা হয়েছে। আর এ কবিতাটি যে কবি অন্নদাশঙ্কর রায় রচিত, সেটিরও উল্লেখ নেই এতে।স্মরণিকার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীর নাম লেখা আছে। প্রধান উপদষ্টো হিসেবে আছেন এ মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের দুই সচিব মো. সোহরাব হোসাইন ও মো. আলমগীরের নাম। উপদষ্টো হিসেবে আছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। সম্পাদক হলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব শাহেদুল খবীর চৌধুরী। সদস্য হিসেবে আছেন মাউশির উপপরিচালক ফারহানা হক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাসুদা বেগম এবং মাউশির সহকারী পরিচালক আবদুস সালাম।এ প্রসঙ্গে সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। উপদষ্টোদের মধ্যে শুধু ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ফোনে পাওয়া গেছে। তিনি প্রথমে যুগান্তরকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভুলের কথা আমার জানা নেই। পরে ভুল ও কবিতা বিকৃতির কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘এ স্মরণিকার কাজের সঙ্গে আমরা জড়িত ছিলাম না। কমিটির কোনো সভা করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আমার কাছ থেকে শুধু বাণী নেয়া হয়েছে।'জানা গেছে, ১৯৭১ সালের জুলাইয়ে কলকাতার প্রকাশনা সংস্থা অন্যদিন থেকে প্রকাশিত ‘গঙ্গা থেকে বুড়িগঙ্গা' কাব্যগ্রন্থে প্রথমবার ‘বঙ্গবন্ধু' শিরোনামে অন্নদাশঙ্কর রায়ের এ কবিতা প্রকাশিত হয়।অন্যদিনের স্বত্বাধিকারী শিশির ভট্টাচার্য সম্পাদিত ওই কাব্যগ্রন্থের ১২ নম্ব্বর পৃষ্ঠায় জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা' কবিতার নিচে অন্নদাশঙ্করের ‘বঙ্গবন্ধু' কবিতাটি ছাপা হয়।এতে লেখা হয়, ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/গৌরী মেঘনা বহমান/ ততকাল রবে কীর্তি তোমার/ শেখ মুজিবর রহমান।/ দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা/ রক্ত গঙ্গা বহমান/ তবু নাই ভয়, হবে হবে জয়/জয় মুজিবর রহমান'।কবিতাটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের বানান ‘শেখ মুজিবর রহমান' লেখা হয়েছিল। কলকাতায় সে সময় মুজিবুরের বদলে মুজিবর লেখা হতো বলে সেখানকার একাত্তরের বিভিন্ন সংবাদপত্র ঘেঁটে নিশ্চিত হওয়া গেছে।তবে ১৯৯৮ সালে অন্নদাশঙ্কর রায় কলকাতার স্বনামধন্য দে'জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত ‘কাঁদো, প্রিয় দেশ' নামে তার প্রবন্ধের বইয়ের একটি স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধে নিজের লেখা ওই কবিতার উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের বানান সংশোধন করে দেন।ওই প্রবন্ধে কবিতাটি রচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন তিনি। ওই বইয়ের ১২২ নম্ব্বর পৃষ্ঠায় অন্নদাশঙ্কর তার ওই কবিতা বিকৃত করার অভিযোগ তোলেন বাংলাদেশের এক বক্তার বিরুদ্ধে।তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানের বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন, একজন বক্তা চমত্কার বাংলায় বক্তৃতা দিয়ে উল্লেখ করে আমার কবিতার পঙক্তি একটু উল্টিয়ে ‘যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা/গৌরী যমুনা বহমান/ ততকাল রবে কীর্তি তোমার/ শেখ মুজিবুর রহমান'।"এদিকে স্মরণিকায় শুধু কবিতা বিকৃতিই করা হয়নি, বিভিন্ন ধরনের বানানও ভুল আছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণীতে অন্তত তিনটি বানান ভুল আছে। জাতীয় সঙ্গীতে ‘আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি'র বাঁশি বানানে চন্দ্রবিন্দু দেয়া হয়নি। সম্পাদকের বাণীতে অন্তত চারটি বানান ভুল আছে।