নভোচারীদের সুস্থ রাখতে এআই মেডিকেল সরকারী তৈরি করছে নাসা, গুগল
মানুষ নিয়ে মহাকাশ মিশন পৃথিবী থেকে যত দূরে যাওয়ার কথা হচ্ছে নভোচারীদের সুস্থ রাখার বিষয়টি ততই কঠিন হয়ে পড়ছে। মঙ্গলগামী নভোচারীরা যেন সুস্থ ও নিরাপদ থাকতে পারেন সেজন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইনির্ভর এক মেডিকেল সহকারী তৈরি করছে নাসা ও মার্কিন সার্চ জায়ান্ট গুগল।
যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন শহরে অবস্থিত নাসার মিশন কন্ট্রোল সেন্টারের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ, নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ ও ছয় মাস পর পৃথিবীতে ফিরে আসার সুযোগের ওপর ভরসা করতে পারেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকা নভোচারীরা।
তবে এসব সুবিধার ধরন শিগগিরই পরিবর্তিত হতে পারে। কারণ দীর্ঘমেয়াদি মিশনের পরিকল্পনা করছে নাসা ও তাদের বাণিজ্যিক সহযোগীরা, বিশেষ করে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স, যেখানে মানুষকে চাঁদ ও মঙ্গলের মতো অনেক দূর গন্তব্যে পাঠানো হবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট টেকক্রাঞ্চ।
এ আসন্ন বাস্তবতাই নাসাকে ধীরে ধীরে মহাকাশে চিকিৎসা সেবাকে ‘পৃথিবী নির্ভরতা’ থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর প্রাথমিক উদ্যোগ হচ্ছে গুগলের সঙ্গে মিলে পরীক্ষামূলকভাবে এক এআই মেডিকেল সহকারী তৈরি করা। এ টুলটির নাম ‘ক্রু মেডিকেল অফিসার ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট’ বা সিএমও-ডিএ।
টেকক্রাঞ্চ লিখেছে, টুলটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে কোনো ডাক্তার না থাকলে বা পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও নভোচারীরা নিজেরাই রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করতে পারবেন।
এ বহুমাত্রিক টুলটি বিভিন্ন উপায়ে যেমন– বলার, লেখার বা ছবি দেখানোর মাধ্যমে তথ্য বুঝতে ও কাজে লাগাতে পারে এবং এটি গুগল ক্লাউডের ‘ভার্টেক্স এআই’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
গুগলের পাবলিক সেক্টর বিভাগের গ্রাহক প্রকৌশলী ডেভিড ক্রুলি বলেছেন, নির্ধারিত মূল্যের এক সাবস্ক্রিপশন চুক্তির আওতায় প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে, যেটি পাবলিক সেক্টরের সঙ্গে মিলে করেছে গুগল। এ চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ক্লাউড সেবার খরচ, অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের পরিকাঠামো ও এআই মডেল প্রশিক্ষণের ব্যয়।
টুলটির সোর্স কোডের মালিক যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও তারাই এসব এআই মডেলের সূক্ষ্ম টিউনিং বা মান উন্নয়নে সাহায্য করেছে। আর এ প্রকল্পে ব্যবহৃত ‘গুগল ভার্টেক্স এআই’ প্ল্যাটফর্ম কেবল গুগলের নিজের তৈরি মডেলই নয়, অন্যান্য থার্ড পার্টিরও এটি ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে।
নাসা ও গুগল এ সিএমও-ডিএ সহকারীকে তিনটি ভিন্ন চিকিৎসা পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করেছে। যেমন– গোড়ালির আঘাত, পার্শ্বীয় ব্যথা ও কানের ব্যথা। তিনজন চিকিৎসক টুলটির এসব পরীক্ষা করেছেন, যাদের মধ্যে ছিলেন একজন অভিজ্ঞ নভোচারীও।
এআই সহকারীর কার্যসক্ষমতা মূল্যায়ন করতে প্রাথমিক মূল্যায়ন, রোগীর ইতিহাস নেওয়া, চিকিৎসা সংক্রান্ত যুক্তি বিশ্লেষণ ও চিকিৎসার পরিকল্পনা– টুলের এ চারটি দিক খতিয়ে দেখেছেন চিকিৎসকরা।
সহকারীর রোগ নির্ণয়ের নির্ভুলতা ভালো বলে মনে করেছেন তিনজন চিকিৎসকই। পাশের ব্যথার ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রায় ৭৪ শতাংশ, কানের ব্যথার ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ শতাংশ ও গোড়ালির আঘাতের জন্য ৮৮ শতাংশ সঠিক হতে পারে এআই সহকারী।
পরিকল্পনাটি নিয়ে ধাপে ধাপে এগোতে চাচ্ছে নাসা। তাদের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এআই সরকারীতে আরও বেশি তথ্যের উৎস যোগের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। যেমন বিভিন্ন চিকিৎসা যন্ত্রপাতি থেকে তথ্য নেবে টুলটি। পাশাপাশি মডেলটিকে ‘সিটুয়েশনাল অ্যাওয়ার’ বা পরিস্থিতি সচেতন করার চেষ্টা করছে তারা। মহাকাশ চিকিৎসা সম্পর্কিত বিশেষ পরিস্থিতি, যেমন মাইক্রোগ্রাভিটি বা অতি কম মাধ্যাকর্ষণ বুঝতে ও সঠিকভাবে কাজ করতে শেখানো হবে।
ক্রুলি স্পষ্ট করে বলেননি, এ ধরনের এআই মেডিকেল সহকারীকে পৃথিবীর ডাক্তারদের অফিসে ব্যবহারের জন্য কোনো সরকারি অনুমতি নেওয়ার পরিকল্পনা করছে কি না গুগল। তবে এ মডেল যদি মহাকাশে সফলভাবে পরীক্ষিত হয় তবে তা হয়ত পৃথিবীতে ব্যবহারের পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে।
তিনি বলেছেন, টুলটি কেবল নভোচারীদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেই সাহায্য করবে না, বরং এই টুল থেকে পাওয়া বিভিন্ন শিক্ষা স্বাস্থ্যসেবার অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে।