ঘরে বসে যদি সিনেমা হলের আমেজ পেতে চান, তাহলে হোম থিয়েটারের কোনো বিকল্প নেই। দিনে দিনে হোম থিয়েটার আভিজাত্যের প্রতীকও হয়ে উঠেছে! কিন্তু আসলে কি তাই? না! বরং চাইলে যে কেউ স্বল্পখরচে নিজের মতো একটি হোম থিয়েটার সিস্টেম বানিয়ে নিতে পারবেন। বড় স্ক্রিনে নিখুঁতভাবে সিনেমা দেখার আনন্দ নিতে পারবেন ঘরে বসেই!
আর এ জন্য ব্যবহারকারীর লাগবে ৩২ থেকে ৫০ ইঞ্চির ফ্ল্যাট এইচডি টেলিভিশন অথবা ভিডিও প্রজেক্টর, একটি ব্লু রে ডিভিডি প্লেয়ার অথবা অ্যানড্রয়েড টিভি বক্স, পাঁচ বা তার বেশি স্পিকারযুক্ত ডিজিটাল সারাউন্ড সাউন্ড সিস্টেম এবং সাবউফার। এই সেটআপ ২০-২৫ হাজারেও তৈরি করা সম্ভব, আবার চাইলে কয়েক লাখ টাকায়ও। তবে চাহিদার কারণে এইচডি টিভির দামও আজকাল সাধ্যের মধ্যেই চলে এসেছে। বিভিন্ন উৎসবে বেশ ছাড়ে সনি, এলজি কিংবা স্যামসাংয়ের মতো নামিদামি কম্পানিগুলো নিজেদের ব্র্যান্ডের এইচডি টিভি বিক্রি করে থাকে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, গতানুগতিক কেবল বা অ্যানালগ লাইন ব্যবহারের কারণে আমরা এইচডি টিভির আসল রূপ দেখতে পারি না। নিজস্ব এইচডি স্যাটেলাইট না থাকলেও কমপক্ষে আপনার ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে ব্লু রে কনটেন্ট প্লে না করলে কখনোই এইচডির আসল গুরুত্ব বোঝা যাবে না।
হোম থিয়েটারের বেলায়ও তাই, সেখানে হয়তো সিনেমা হলের মতো সদ্য রিলিজপ্রাপ্ত ছবিগুলো আপনি সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পারবেন না, কেননা সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর ব্লু রে বের হতে কিছুটা সময় লাগে। তবে বাজারে ব্লু রে ডিভিডির যে বিশাল সংগ্রহ আছে, চাইলে সেগুলো উপভোগ করতে পারবেন। অ্যানড্রয়েড টিভি বক্স অর্থাৎ ইন্টারনেট স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে নেটফ্লিক্স কিংবা এইচবিওর মতো জায়ান্ট অনলাইন মুভি ও টিভি সিরিজের প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করা যাবে অনায়াসে। এমনকি কয়েক টেরাবাইট হোম সার্ভার ইনস্টল করে ইউএসবি ডিভাইস, পেনড্রাইভ ও হার্ডড্রাইভ থেকেও মিডিয়া প্লে করতে পারবেন যখন-তখন।
সারাউন্ড সাউন্ড
শুধু এইচডি টিভি কিংবা ট্রু সোর্সই কিন্তু হোম থিয়েটারকে বিশেষায়িত করেনি। এই সিস্টেমের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ উপাদান হলো সারাউন্ড সাউন্ড, যা মূলত দুই বা ততোধিক স্পিকার, অ্যামপ্লিফায়ার ও রিসিভারের মাধ্যমে আপনার মিডিয়া অনুযায়ী বিভিন্ন দিক থেকে সাউন্ড তৈরি করবে। স্পিকারগুলোর সেটিং নিয়েও আছে নানা কায়দা-কানুন, আসলে পুরো ব্যাপারটাই গাণিতিক। ধরুন, আপনি ৪০ ইঞ্চি টিভি ব্যবহার করছেন, ওই হিসেবে, যথাযথ সারাউন্ড সাউন্ড পেতে হলে আপনাকে চার থেকে ছয় ফুট দূরত্বে বসতে হবে। একইভাবে, ৫০ ইঞ্চি টিভির ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে সাত ফুট এবং ৬০ ইঞ্চির জন্য ৬ থেকে ৯ ফুট ব্যবধান বজায় রাখতে হবে। সাউন্ডবার থাকলে সেটা আপনার টিভির একেবারে মাঝ বরাবর নিচে স্থাপন করুন, আর স্পিকার হলে কানের উচ্চতার সঙ্গে মিলিয়ে ২২ থেকে ৩০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে নিন। লক্ষ রাখা জরুরি, স্পিকার অথবা আপনার মাঝে যেন কোনো প্রকার বাধা না থাকে, এমনকি কোনো টি-টেবিলও। এতে হাই ফ্রিকুয়েন্সিগুলো সঠিকভাবে পৌঁছতে বিঘ্ন ঘটে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, মূল বসার জায়গা থেকে পেছনের দেয়ালের দূরত্ব যেন ন্যূনতম এক ফুট থাকে, না হলে বেজের সাউন্ড বুমি এবং ডিস্টর্টেড হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাবউফারটা রুমের এক কোণে রাখা যেতে পারে, এতে বেজটায় ডেপথ ও একুরেসি থাকে।
দ্বিতীয়ত, যে রুমটাকে হোম থিয়েটার বানাবেন বলে ভাবছেন, সেটায় শব্দের প্রতিধ্বনি হচ্ছে কি না তা লক্ষণীয়। সাউন্ড অ্যাবজর্ভিং ম্যাটেরিয়াল হিসেবে আপনার জানালার বড় গ্লাসে পর্দা, বুক শেলফ কিংবা দেয়ালে ফটোফ্রেম ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিধ্বনিকে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। সারাউন্ড সাউন্ড স্ট্যান্ডার্ড, ২.০, ২.১, ৫.১, ৬.১, ৭.১ সাউন্ড সিস্টেম, ডলবি ডিজিটাল, ডিটিএস ও টিএইচএক্সের মতো বেশ কতগুলো সিস্টেম আছে। আপনার বাজেট অনুযায়ী বাজারে অনেক রকম স্পিকার কিংবা সাউন্ডবারও পাবেন।
সাউন্ডবার ও স্পিকারের দরদাম
শাওমির ৭ থেকে ১০ হাজার টাকার সাশ্রয়ী খরচে মানসম্মত কিছু সাউন্ডবার পাবেন। তিন থেকে চার হাজার টাকা মূল্যে আছে ডিজিটালএক্স সিরিজের ৪.১ সারাউন্ড সাউন্ড সিস্টেম। সনি ডিএভি টিজেডওয়ানফরটির ৫.১ পেতে হলে খরচ করতে হবে প্রায় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকার মতো। মাইক্রোল্যাবের ৪.১ সারাউন্ড সাউন্ড সিস্টেম পাবেন সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে। এসব ছাড়াও চায়নিজ নন-ব্র্যান্ডের বেশ কিছু সাউন্ড সিস্টেম পাওয়া যায়, যেসব কিনা দামে কম হলেও দেখে-শুনে কেনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।