চট্টগ্রাম:
একুশের চেতনা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মুল্যবোধ ধারণ করে দেশের সেবায় ব্রতি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম মনজুর আলম।
মহান একুশে বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক উল্লেখ করে মেয়র বলেন, রক্তস্নাত গৌরবের একুশের চেতনা বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মানুষের প্রাণে মিশেছে।
শনিবার বিকেলে নগরীর মুসলিম হল প্রাঙ্গণে সিটি করপোরেশন আয়োজিত বই মেলার মুক্ত মঞ্চে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য চট্টগ্রামের ১১ গুণীকে একুশে স্মারক সম্মাননা প্রদান উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ভাষা শহীদ ও স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মেয়র মনজুর আলম বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে মহান একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক অনেক গুনীজন পেয়ে আসছেন। সেই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রতিবছর গুনীজনকে একুশে স্মারক সম্মাননা পদক, সাহিত্য পুরস্কারসহ স্বাধীনতা স্মারক সম্মাননা পদক দিয়ে যাচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলন, সমাজ সেবা, শিক্ষা, ক্রীড়া, শিল্প-বাণিজ্য, সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে অবদানের জন্য ১১জন গুনীকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে কবিতা, প্রবন্ধ, গবেষণা, কথা-সাহিত্য, বিশ্ব সাহিত্য ও শিশু সাহিত্যে অবদানের জন্য ৫জনকে সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদানের জন্য প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পক্ষে মেয়ে আফরোজা জামান চৌধুরী, সমাজ সেবায় প্রয়াত এল কে সিদ্দিকীর পক্ষে তার ছেলে আবছার আহমদ সিদ্দিকী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর পক্ষে ছেলে জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, প্রয়াত জানে আলম দোভাষের পক্ষে ছেলে এম জহিরুল আলম দোভাষ, শাহজাদা মোহাম্মদ ফৌজুল আলি খান(মরণোত্তর) এর পক্ষে তার ছেলে শাহজাদা শরফ উদ্দিন মোহাম্মদ সওকত আলী খান শাহিন ও ফরিদ উদ্দিন মোহাম্মদ আলী খান ফরিদ, শিক্ষায় প্রফেসর ড. সিকান্দার খান, ক্রীড়ায় প্রয়াত আবদুল জব্বার সওদাগর’র পক্ষে তার নাতী সওকত আনোয়ার বাদল, আইন পেশায় এডভোকেট মোহাম্মদ কবির চৌধুরী, সাংবাদিকতায় মোহাম্মদ ইউসুফ, সংস্কৃতিতে মলয় ঘোষ দস্তিদারের পক্ষে তার মেয়ে প্রতিমা ঘোষ দস্তিদার এবং শিল্প-বাণিজ্যে কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেছেন।
এছাড়া সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন কবিতায় ময়ুখ চৌধুরী, প্রবন্ধ ও গবেষণায় ড. মনিরুজ্জামান, কথা সাহিত্যে বিশ্বজিৎ চেšধুরী ও সিদ্দিক আহমদ এবং শিশু সাহিত্যে ইকবাল বাবুল মেয়র মনজুর আলম কাছ থেকে সম্মাননা পদক, ক্রেস্ট ও সনদ গ্রহণ করেন। ড. মনিরুজ্জামানের পক্ষে তার কন্যা জুবাইদা খানম লুছি পদক গ্রহণ করেন।
বই মেলা আয়োজক উপ-কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর জহর লাল হাজারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা রশিদ আহমদ, প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয় উল্লেখ করে ড. অনুপম সেন বলেন, সেই থেকে এখন পর্যন্ত ১৯৩টি দেশে একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, রফিক, সালাম, বরকত ও জব্বার ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণ দিয়েছিল। তাদের রক্তের বিনিময়ে কেবল মায়ের ভাষা নয়, স্বাধীনতার বীজও রোপিত হয়েছিল।
বিশ্বের ২৫ কোটি মানুষের ভাষা বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের দাবি জানান ড. অনুপম সেন।
একুশ আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক মন্তব্য করে তিনি বলেন, একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মুল্যবোধকে ধারণ করে দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, ফেব্রুযারি ২১, ২০১৫