প্রয়াত স্বামীর স্মরণে মসজিদটি নির্মাণ করিয়েছিলেন সিতারা বেগম। তারপর কত কত উত্থান-পতন ঘটেছে, দেশে, সমাজে। সেই সব পালাবদলের আনন্দ–বেদনার স্মৃতির নীরব সাক্ষী হয়ে আছে পুরোনো ঢাকার শিংটোলার তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি। তবে মসজিদটি এখন পরিচিত তাঁর নিজের নামেই। ‘শিংটোলা সিতারা বেগম জামে মসজিদ’।
শিংটোলা পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের পূর্ব দিকে। লক্ষ্মীবাজার দিয়েও সরু গলিপথ ধরে যাওয়া যায়। ঢাকার একটি প্রাচীন জনপদ এই শিংটোলা। নাজির হোসেন তাঁর ‘কিংবদন্তির ঢাকা’ বইতে উল্লেখ করেছেন এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের সিং পদবির লোকেরা বসবাস করতেন। তাঁদের সূত্রেই এলাকাটির নাকরণ ‘সিংটোলা’ বা ‘শিংটোলা’। এই সিং মানুষজন উত্তর ভারত ও পাঞ্জাব থেকে এসেছিলেন বলে ঐতিহাসিকেরা মনে করেন। এককালে তাঁদের নেতা ছিলেন লালা মিত্রজিৎ সিং। এখন আর তাঁদের কেউ এখানে নেই।
শিংটোলার আশপাশেই ছিল পর্তুগিজদের বাসস্থান। জমিদার শেখ গোলাম মোহাম্মদ পর্তুগিজদের বাড়ি কিনে সেখানে নতুন করে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করেন। গোলাম মোহাম্মদ ছিলেন ঢাকার নায়েবে নাজিম নবাব জেসারত খানের সময়ের বিখ্যাত জমিদার শেখ গোলাম নবীর তৃতীয় পুত্র। তাঁরা পিতা-পুত্র নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জের কদমরসুল দরগা সংস্কারের জন্য বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিলেন। গোলাম মোহাম্মদ একসময় ঢাকায় পর্তুগিজ ফ্যাক্টরির এজেন্ট ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী সিতারা বেগম হিজরি ১২৩১ মোতাবেক ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দে শিংটোলায় তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। স্বামীর স্মরণে নির্মাণ করলেও কালক্রমে মসজিদটি সিতারা বেগমের নামেই পরিচিতি পায়।