যে দেশটির কথা কেউ শোনেনি

লিথুনিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসের অপর পাড়ের শহরের নাম ‘উজুপিস’। ছোট্ট শহরটি নিয়েই গঠিত হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম এক খুদে দেশ, যে দেশের কথা কেউ জানে না। গণতান্ত্রিক উজুপিসের জন্য অবশ্য রক্তক্ষয়ী কোনো যুদ্ধের প্রয়োজন হয়নি। একদিন হঠাত্ করে শহরের বাসিন্দারা ঘোষণা দিয়ে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র গঠন করে বসে। লিথুনিয়ার একদল শিল্পমনা মানুষ মিলে স্রেফ মজা করতে করতে গণতান্ত্রিক উজুপিসের ঘোষণা দেয়। সময়ের ব্যবধানে এই দেশটির রয়েছে নিজস্ব সরকার ব্যবস্থা, প্রেসিডেন্ট, সংবিধান, এমনকি নিজস্ব মুদ্রা ব্যবস্থাও। মজার বিষয়, এক বর্গ কিলোমিটারের চেয়ে ছোট আয়তনের এই উজুপিসের রয়েছে নিজস্ব নৌবাহিনী এবং সেনাবাহিনীও। নৌবাহিনীর সদস্যরা মাত্র তিন থেকে চারটি নৌকায় করে দেশের চারদিকে পাহারা দিয়ে বেড়ায়। আর সেনাবাহিনীতে রয়েছে মোটের ওপর ১০ জনের একটি দল যদিও এই সেনাবাহিনী কখনো কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয় না। উল্টো দেশটির জনসাধারণের শান্তিপ্রিয় মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে উজুপিসের সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে।  

লিথুনিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াস আর উজুপিসের মধ্যে রয়েছে এক নদী। সেই নদী পাড়ি দিলেই উজুপিস। এই দেশটিতে পা দিলে পর্যটকদের চোখে পড়বে ‘উজুপিস জলপরীর ভাস্কর্য’। ২০০২ সালে দেশটির বিখ্যাত ভাস্কর রোমাস ভিলকাউসকাসের নকশায় তৈরি হয় রৌপ্যের জলপরীটি। এটি যে কোনো পর্যটকের মন জয় করে নেবে অনায়াসেই। ঐতিহ্যগতভাবে ভাস্কর্যের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে লিথুনিয়াবাসীর। লিথুনিয়ার প্রায় প্রত্যেকটি শহরে রয়েছে নানা ধরনের ভাস্কর্য। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগে পর্যন্ত সেখানকার ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে সোভিয়েত স্থাপত্যের নিদর্শনের বহিঃপ্রকাশ ঘটত। ১৯৯৫ সালের পর থেকে সোভিয়েত আমলের অনেক ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় একদল শিল্পমনা মানুষ উজুপিসের একটি ভাস্কর্য সরিয়ে সেখানে বসিয়ে দেয় মার্কিন পপ সম্রাট ফ্রাঙ্ক জাপ্পা’র একটি মূর্তি। এরও দুই বছর পর ১৯৯৭ সালের ১ এপ্রিল আরও সাহসী এক পদক্ষেপ নেয় তারা। লিথুনিয়া থেকে নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে গণতান্ত্রিক উজুপিস গঠন করে তারা। যদিও আন্তর্জাতিকভাবে কোনো স্বীকৃতি মেলেনি উজুপিসের। লিথুনিয়া সরকারও এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় বরং রাজধানী ভিলিনিয়াস এবং লিথুনিয়ার কাছে এটি রীতিমতো গর্বের বিষয়।

দেশটির প্রজাতন্ত্র দিবস ১ এপ্রিল। প্রতি বছর এই দিনে বিশেষভাবে পালন করে দেশের মানুষ। লিথুনিয়া কিংবা অন্য যে কোনো দেশের পর্যটকদের উজুপিসে প্রবেশের জন্য কোনো ভিসা-পাসপোর্টের প্রয়োজন না হলেও প্রজাতন্ত্র দিবসের বেলায় নিয়মটা একটু বদলে যায়। এই দিনে উজুপিসে প্রবেশ করতে হলে সঙ্গে থাকতে হবে পাসপোর্ট। দেশটির প্রবেশদ্বারে এই পাসপোর্টে অনুমোদন দিলেই কেবল এদিন উজুপিসে প্রবেশ করার অনুমতি মিলবে।

উজুপিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টমাস চেপাইটিস একাধারে ক্ষুদ্র জাতি-রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠাতা জনকও। উজুপিসের গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনের গল্প ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, দার্শনিক এরিস্টটলের দর্শন অনুযায়ী মহত্ রাষ্ট্র হতে হলে সেখানে সীমিত সংখ্যক জনগণ থাকতে হবে। তার দর্শনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই তৈরি করা হয়েছে ক্ষুদ্র জাতি-রাষ্ট্র, যেখানে মোটের ওপর মাত্র ৫ হাজার মানুষের বাস। এখানে সবাই সবাইকে চেনে। সুতরাং কারো পক্ষে কাউকে ঠকানো কিংবা ঝামেলা করার কোনো সুযোগ নেই।-বিবিসি

ইত্তেফাক/নূহু



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews