শরণার্থী সমস্যা দূরীকরণে বাংলাদেশ-মিয়ানমারকে ভারত পথ দেখাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। যেহেতু বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়েই ভারতের প্রতিবেশি, সেহেতু এই শরণার্থী সমস্যা দূরীকরণে ভারত উভয় দেশকেই সঠিক পথ দেখানোর চেষ্টা করবে।’ মিয়ানমার সরকারকে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আহ্বানও জানান তিনি।

সোমবার (১৩ আগস্ট) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে ‘পার্টিশন পলিটিক্স: ইম্প্যাক্টস অন সোসাইটি, ইকোনোমি, কালচার অ্যান্ড ইন্দো-বাংলা রিলেশনস (১৯৪৭-২০১৮)’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। জন-ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র ও রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেক্টিভ (আরডিসি) এই সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে সহযোগী হিসেবে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস (কারাস)।

হর্ষবর্ধন শ্রীংলা বলেন,‘ বাংলাদেশ-ভারত যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে আগে কখনও ছিলো না। এখন কীভাবে এই সম্পর্ককে স্থায়ী করা যায় সে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যেসব ইস্যু ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে তার সমাধান করা উচিত।’

এই হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফর দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যান, তখন নরেন্দ্র মোদী দুই দেশের সম্পর্ককে সোনালি অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করেন। গত বছর শেখ হাসিনার ভারত সফরে ‘দুই দেশের সম্পর্ক হবে সমতা, বিশ্বাস ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে’ এই বিষয়ে দুটি দেশ একমত হয়। আমরা দেখেছি, দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁলে থাকা ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির ভূমি সমস্যার সমাধান হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি করলে সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। এছাড়াও সীমান্তে মৃত্যুসহ আরও অনেক ইস্যু রয়েছে, যা সমাধান করা উচিত। বিশেষ করে তিস্তা পানি বন্টন চুক্তির বিষয়ে একটি সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।’

বাংলাদেশে ভারতের নানাবিধ প্রকল্পের কথা উল্লেখ হর্ষবর্ধন শ্রীংলা আরও বলেন, ‘ভারতীয় পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টর বাংলাদেশের কয়েকটি প্রকল্পে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এছাড়াও ভারত ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে যা ভবিষ্যতে ১২০০ মেগাওয়াট করা হবে। আমরা বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি স্বাক্ষর করেছি যা অত্যন্ত আনন্দের খবর।’

ভারতীয় হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে ভারত পূর্ণ সমর্থন দিবে। কারণ আমরা বিশ্বাস করি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা সন্ত্রাস দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেন, ‘আমরা অনেক দেশের সঙ্গেই অনেক বিষয়ে চুক্তি করি। তবে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করতে স্বাচ্ছ্বন্দ বোধ করি। কেননা আমরা একে অপরকে বুঝতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘দেশ ভাগের আগে আমরা একত্রে ছিলাম। এমনকি ১৯৬৫ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ ভিসা ছাড়াই ভারতে যেতে পারতো। কিন্তু ৬৫’র যুদ্ধের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এটি আবার ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। কেননা, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না রেখে চলা যায় না। অন্যান্য দেশের দিকে তাকালে তা বোঝা যায়। ভারতের সঙ্গে আমাদের সকল ধরনের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন।’

জন-ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি ও রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেক্টিভ (আরডিসি) এর চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামালে সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলা একাডেমির পরিচালক অধ্যাপক ড. শামসুজ্জামান খান, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন (কলেজ) অধ্যাপক ড. কূলবীর সিং ঢিলন, জওহর লাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সুচেতা মহাজন প্রমুখ।

এর আগে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের শেষদিনের অধিবেশন শুরু হয়। শেষদিন তিনটি সেশনে মোট পাঁচটি ‘থিম পেপার’ উপস্থাপন করা হয়। পরে সমাপনী অধিবেশন শেষে অতিথিদের ‘ক্রেস্ট’ প্রদান করা হয় এবং অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ‘সার্টিফিকেট’ বিতরণ করা হয়।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews