যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের এবং টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক এবার প্রযুক্তির গণ্ডি পেরিয়ে সরাসরি রাজনীতির ময়দানে পা রাখতে চলেছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে একটি জনমত জরিপ চালিয়ে মধ্যমপন্থিদের প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তাব তোলেন। এই জরিপে ব্যাপক সাড়া পড়ে, এবং এতে উঠে আসে একটি বিস্তৃত জনসমর্থনের বার্তা। ফলে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে আলোচনা— মাস্ক কি তাহলে সত্যিই মার্কিন রাজনীতির শক্ত প্রতিযোগিতায় নামছেন?
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ নিজের ২২ কোটি অনুসারীর উদ্দেশে মাস্ক একটি জরিপ চালান, যেখানে তিনি প্রশ্ন তোলেন— “যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সময় কি আসেনি, যা ৮০ শতাংশ মধ্যমপন্থি জনগণের বাস্তব প্রতিনিধিত্ব করবে?” প্রায় ৫৬ লাখ মানুষ ওই জরিপে অংশ নেন, যাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ নতুন দল গঠনের পক্ষে মত দেন। এই প্রস্তাবের পেছনে মূল কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে মাস্ক ও তার সাবেক রাজনৈতিক মিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে তৈরি হওয়া মতপার্থক্য। মাস্ক সম্প্রতি ট্রাম্প সমর্থিত একটি বড় বাজেট বিলকে “অগ্রহণযোগ্য” ও “অপ্রয়োজনীয় খরচে ভরা” বলে সমালোচনা করেছেন। এই পরিস্থিতিতেই রিপাবলিকান পার্টির বিকল্প হিসেবে নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন তিনি।
মাস্ক তার জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে বলেন, “এটাই আমার নিয়তি”— অর্থাৎ তিনি এই পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার এক অনুসারী পরামর্শ দেন, নতুন দলের নাম হতে পারে “আমেরিকা পার্টি”, যা মাস্কের প্রতিষ্ঠিত ‘America PAC’-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই PAC গত নির্বাচনে ট্রাম্পসহ অন্যান্য রিপাবলিকানদের পক্ষে ২৩৯ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন সহজ নয়। বিভিন্ন রাজ্যে ব্যালটে প্রবেশাধিকার পেতে আলাদা আলাদা শর্ত পূরণ করতে হয়। মাস্ক নিজেও স্বীকার করেন, বড় দলগুলোর ভেতরে থেকেই পরিবর্তন আনার চিন্তাও তিনি করছেন। তার মতে, রিপাবলিকান প্রাইমারিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ হতে পারে একটি কার্যকর পথ।
সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে একটি বাজেট বিলকে ঘিরে। মাস্ক একে “দেশের জন্য বিপজ্জনক” বলে আখ্যা দেন। জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি মাস্কের উপর ‘হতাশ’ এবং ভবিষ্যতে মাস্কের কোম্পানিগুলোকে দেওয়া সরকারি সুবিধা বাতিল করার হুমকি দেন। ট্রাম্প আরও বলেন, মাস্ক তার প্রচারে ২৭৭ মিলিয়ন ডলার খরচ করলেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি। উত্তরে মাস্ক জানান, ট্রাম্পের মাত্র ৩.৫ বছর বাকি আছে, অথচ তার (মাস্কের) সামনে ৪০ বছরের বেশি সময় রয়েছে। এসব পাল্টা বক্তব্য মার্কিন রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তথ্যসূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
