বেড়েই চলেছে যমুনার পানি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় যমুনার পানি বিপদসীমার ১৫২ সেন্টিমিটার  ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি আর ২৫ সেন্টিমিটার বাড়লে ১৯৮৮ সালের পানির উচ্চতা (১৫ দশমিক ১২ মিটার) অতিক্রম করবে। এ পরিস্থিতিতে সিরাজগঞ্জের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ‘কখন কি হয়, সব সময় বাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাউবোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোতে পানি ছুঁই ছুঁই অবস্থায় ভেতরের দিকে আগের চেয়ে পানি বেশি চুইয়ে পড়ছে। এ কারণে শুধু পাউবো নয়, বাঁধ ধসের শঙ্কায় রয়েছেন যমুনা পাড়ের লক্ষাধিক মানুষজন।

মঙ্গলবার সকালে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রানীগ্রাম মহল্লার কদমতলা, পলেটেকনিক ইনস্টিটিউটের পেছনে আনসার মোড়, খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের শিকদারবাড়ি ও ছোনগাছা ইউনিয়নের পাঁচিল, বাহুকা ও কাজিপুরের মেঘাই ও মাইজবাড়ির ঢেঁকুরিয়া বাঁধ সংলগ্ন ভান্ডারবাড়িসহ কমপক্ষে ১০ থেকে ১২টি  স্থানে পানি চুয়ানো (সিপেজ) শুরু হয়েছে। বাহুকায় গত মাসে ধসে যাওয়া সেই বিকল্প রিং-বাঁধের মেরামত অংশেও সিপেজ (পানি চোয়ানো) মেরামতে এবারও সেনাবাহিনী রয়েছেন।

যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদর, কাজিপুর, চৌহালী, বেলকুচি ও শাহজাদপুরে যমুনা পাড় ও চরাঞ্চলের মানুষজনের দুর্ভোগও বেড়েছে। পাউবো, উপজেলা ও জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন মাঠে রয়েছেন। তবে কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ি ইউনিয়নের বন্যা কবলিত বিলচতল ও ঢেঁকুরিয়া বাঁধে সোমবার দিনভর স্বাস্থ্য বিভাগের কাউকে দেখা যায়নি।

জেলায় প্রথম দফা বন্যায় পানিবন্দিদের উদ্ধার, নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং তাদের খোঁজ-খবর রাখার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তৎপর ছিলেন। দ্বিতীয় দফা বন্যায় তার ঘাটতি রয়েছে বলেও বানভাসি মানুষের অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কেও রয়েছেন তারা।

পাউবোর স্থানীয় সেকশন অফিসার রনজিৎ কুমার সরকার বলেন, ‘যেভাবে যমুনার পানি বেড়ে চলেছে তাতে দু-একদিনের মধ্যে ‘৮৮ সালের মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়, এ আতঙ্কেও রয়েছি। সদর ও কাজিপুর উপজেলার বাঁধের পাশে যমুনার পানি ছুঁই ছুঁই করায় পানি চুয়ানো শুরু হয়েছে। বাঁধের পাশে পানি দীর্ঘস্থায়ী হলে সিপেজ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধ ধ্বসে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। সিপেজ মেরামতে জিও ব্যাগে বালি ভরে বাঁধ সুরাক্ষার কাজও অব্যাহত রয়েছে।’

নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, কখন কি হয়, সব সময় বাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছি।

বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবরার বিষয়ে জনস্বাস্থ্য দফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী জামানুর রহমান বলেন, ‘বাঁধে আশ্রিত ও পানিবন্দি মানুষজনকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে।’

বন্যার্তদেরর্তদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. শেখ মনজুর রহমান  বলেন, জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৯৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।’

সোমবার দুপুরে কাজিপুরের মাইজবাড়ি ইউনিয়নের ঢেকুরিয়া বিলচতল এলাকায় সরেজমিনে গেলে আব্দুল লতিফ, মো: শিপন ও হবিবর রহমানসহ বাঁধে আশ্রিতরা জানান, এক সপ্তাহ আগে এসব এলাকা নতুন করে প্লাবিত হলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনের লোকজন কেউ আসেননি। চেয়্যারম্যানও আসেনি।

কৃষক আনিস মণ্ডল (৫৫) বলেন, ‘আমার বাড়ি মাইজবাড়ি ইউনিয়নের শ্রীপুর বধুয়ার চরে। গত তিন চার দিন থেকে আমিসহ আরও ২০/২৫টি পরিবার পানির মধ্যে আছি। দেখার কেউ নেই।’

সিরাজগঞ্জ সদরের বাহুকায় রিং-বাঁধ আবারও ধসে না যায় তাই বলির বস্তা দিয়ে তা ঠেকানোর চেষ্টা চলছেআব্দুল লতিফ, মো: শিপন ও হবিবর জানান, খাবার পানি নেই, রান্নার ব্যবস্থা নেই, না খেয়ে আমরা কয়েকটি পরিবার কষ্টের মধ্যে আছি। আজ নিজ উদ্যোগে বাড়িতে তালা দিয়ে পরিবারসহ নৌকাযোগে এসে এই বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি।’

কাজিপুরের মাইজবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ও কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন বলেন, ‘প্রথম বন্যায় বেশি পরিমাণে ত্রাণ নেওয়ায় এখন ত্রাণ নিতে যাইনি অনেকে। চরের মধ্যে ১৪টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার পানিবন্দিদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে মেম্বরদেরকে বলা হয়েছে।’

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাইজবাড়ি ইউনিয়নের চরের লোকজনকে দেখতে পাওয়া না গেলেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাধ্যমে ত্রাণ দিয়েছি। ঠিক কতটুকু ত্রাণ দেওয়া হয়েছে, তা এই মুহূর্তে মনে নেই।  অফিসে গিয়ে দেখে বলতে হবে।’

জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান বলেন, ‘বন্যা উপদ্রুত পাঁচটি উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৪৯১টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব পরিবারের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অধিকাংশ মানুষই পাশ্ববর্তী পাউবোর বাঁধ, উচুঁ রাস্তাঘাট ও স্থানীয় স্কুল-কলেজের আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ত্রাণ ও পুর্নবাসন দফতর থেকে এ পর্যন্ত তিনশ ৩৫ মেটিক টন চাল ও নগদ প্রায় ১২ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও ২০৫ মেট্রিক টন চাল এবং দুই লাখ টাকা মজুদ রয়েছে।’

/এসএমএ/



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews