সন্ধ্যার অবকাশে স্নিগ্ধ আবহ বিরাজ করে ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে। সেথায় ভেসে বেড়ায় মোহময় গানের সুর। সেই সুরের আশ্রয়ে দৃশ্যমান হয় নাচের নান্দনিকতা। আর এই নাচ-গানের পরিবেশনায় নিবেদিত হয় কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। শিল্পিত পথরেখায় দ্রোহ, সাম্য ও প্রেমের কবির প্রকাশিত প্রকাশিত হয়  ভালোবাসা ও অনুরাগ। কবির স্বপ্নময় সাম্যের পৃথিবী গড়ার আকাক্সক্ষায় গাওয়া  হয় মানবতার জয়গান।
এভাবেই সুন্দরের ছবি এঁকে জাতীয় কবির জন্মদিন উদ্যাপনে রবিবার থেকে শুরু হলো ছায়ানট আয়োজিত নজরুল উৎসব। নাচ-গান, আবৃত্তি ও কথনে সজ্জিত হয়েছে দুই দিনের এ আয়োজন।
স্বাগত কথনে ছায়ানটের উপদেষ্টা লেখক ও গবেষক মফিদুল হক বলেন, স্বল্পকালের জীবনে সৃষ্টির বিপুল বৈভবে আমাদের সমৃদ্ধ করে গেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। সাহিত্য-শিল্পের বহুমুখী ধারায় তিনি নিজেকে প্রকাশ করেছেন। আর বিপুলা সেই সৃষ্টিসম্ভারের মাঝে গানেই তিনি সবচেয়ে স্বার্থকভাবে প্রকাশিত হয়েছেন। বাংলা গানের বহুমুখী ধারাকে তিনি দু’হাতে বরণ করেছেন এবং সুরের খেলায় প্রকাশ করেছেন।

সে কারণে তার গানে রয়েছে সুরের স্পন্দন। তিনি যেমন শ্যামা সংগীত লিখেছেন, তেমনি ইসলামী গান লিখেছেন। অন্যদিকে নজরুল যেমন মানুষের মাছে সুপ্ত শক্তি খুঁজেছেন, তেমনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তাই সমাজে যখন হানাহানি-সংঘাতে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত তখন জেগে ওঠতে নজরুলের সৃষ্টির কাছেই ফিরতে হবে। তাকে স্মরণের মধ্যে দিয়ে শক্তিময়তার সন্ধান করতে হবে। তাহলেই আগামীতে  মুক্তবুদ্ধির সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন সফল হবে। প্রথম দিনের উৎসবে শ্রোতা-দর্শকে পরিপূর্ণ ছিল মিলনায়তন। সেই সুবাদে মুগ্ধতার আবেশে ঝরেছে করতালি। সমবেত নাচ-গানের শুরু হয় এদিনের পরিবেশনা পর্ব। অনেকগুলো কণ্ঠ মিলে যায় এক স্বরে। স্বদেশের রূপময়তার  বন্দনায় সকলে মিলে গেয়ে শোনায়- এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী/ফুলে ও ফসলে কাদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবনি ....। এই সুরে স্রোতধারায় পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য। এরপর সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া হওয়া ‘দেশ গৌড়-বিজয়ে দেবরাজ গগনে এলো বুঝি সমর-সাজে’ শীর্ষক সংগীত। নজরুলের গান ও কবিতার সমন্বয়ে উপস্থাপিত হয় ‘কাবেরী তীরে’ শীর্ষক গীতিআলেখ্য। এ পর্বে মোহিত খান শুনিয়েছেন-কাবেরী নদী জলে কে গো বালিকা/আনমনে ভাসাও চম্পা-শেফালিকা ...। প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার আকুতি প্রকাশিত হয় শ্রাবন্তী ধরের কণ্ঠ। সেই আকুল আহ্বানে এই শিল্পী গেয়েছেন-এসো চির-জনমের সাথি/তোমারে খুঁজেছি দূর আকাশে জ্বালায়ে চাঁদের বাতি ...। ঐশ্বর্য সমদ্দারের পরিবেশন করেন ‘নীলাম্বরি শাড়ি পরি’ নীল যমুনায় কে যায়’।  ধ্রুব সরকার গেয়েছেন ‘রহি রহি কেন সে মুখ-পড়ে’। দরদি কণ্ঠে মইদুল পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘নিশি রাতে রিম ঝিম ঝিম বাদল নূপুর’।  বিভাস রঞ্জন মৈত্র শুনিয়েছেন ‘ওগো বৈশাখী ঝড়’। তৃতীয় পর্বের সূচনায় নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী রফিকুল ইসলাম। চর্চিত কণ্ঠের আশ্রয়ে নাসিমা শাহীন ফ্যান্সী গেয়েছেন ‘এখনও মেটেনি আশা’। এরপর উপস্থাপিত হয়ে নৃত্য-গীতের যুগলবন্দি পরিবেশনা। ‘মেঘের হিন্দোলা দেয় পুব-হাওয়াতে দোলা’ শিরোনামের গান শোনান  নুসরাত জাহান রুনা। আর সেই সুরবাণীর সহযোগে  মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে নাচ করেন ফারহানা আহমেদ। এছাড়া সংগীত পরিবেশন করেন ইয়াকুব আলী খান, ছন্দা চক্রবর্তী, রেজাউল করিম, প্রিয়ন্ত দেব, প্রিয়াঙ্কা গোপ, শুক্লা পাল সেতু, অরূপ, মৃদুলা সমদ্দার, সঞ্জয় কবিরাজ প্রমুখ। সম্মেলক সংগীত পরিবেশন করে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার দ্বিতীয় দিনের উৎসব শুরু হবে সন্ধ্যায়।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews